শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, কোভিট কিন্তু আমাদের থেকে চলে যাবেনা,এগুলো অন্যন্যা ভাইরাসের মতোই থেকে যাবে,এর সাথেই আমাদের বসবাস করতে হবে।এটা বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রনে আসবে।আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় আমরা ভ্যাকসিন পেয়েছি,তা আমাদের শিক্ষকেরা,ছাত্রদের দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শনকে কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১২ টায় শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রামের উদ্যোগে ‘কোভিড পরিস্থিতিঃ শিক্ষার চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিকভাবে বিশ্লেষণের একটি সুযোগ এসেছে। আমরা ইতিহাসে দেখেছি মহামারী গুলো সভ্যতাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে। মানুষ নিত্যনতুন চিন্তা-চেতনা হাজির করেছে। তেমনি আমি মনে করি, কোভিটের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নতুন সুযোগ আমাদের সামনে এনে দিয়েছে। ক্ষতি যে হয়নি তা নয়। তবে নতুন সুযোগের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সংখ্যাগত যে চ্যালেঞ্জ ছিল, অবকাঠামো বৃদ্ধি করা, শিক্ষকদের জাতীয় পেমেন্ট অর্ডারের আওতায় নিয়ে এসে ধীরে ধীরে জাতীয়করণের দিকে হাটা, যা আমাদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে লক্ষ্যও বটে দেশের জন্য কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, স্কিল বেইজড এডুকেশন করা (দক্ষতা নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা করা) এবং আউটকাম বেইজড এডুকেশনে হাটার সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে এখন। আমরা যেভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্রীয়করণ করছি।
এটা আমাদের একটা বড় অর্জন বটে সারা পৃথিবীতে নেই যে ৩৫ কোটি বই বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়। আমরা চাই টেক্সটবুক গুলো গাইডলাইনের ভূমিকা পালন করবে। সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য, উপাত্ত, নির্দেশনা থাকবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে পরিবার পর্যায়ে পাঠ্য বই থেকে শুরু করে টেলিভিশনের মাধ্যমে, যেখানে সার্বক্ষণিক ইংরেজি, বিজ্ঞান,গণিতের ক্লাস সকলের জন্য আনছি। সেইভাবে আমরা সিলেবাস করছি। আগামী বছর থেকেই আমরা সেটা শুরু করতে চাই। ইডেনের শিক্ষকদের নানাভাবেই ট্রেনিং দিতে হবে। এককেন্দ্রিক চিন্তা-ভাবনা করলে হবে না, বিশ্বের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদেরও পরিবর্তিত হতে হবে।শিক্ষকদের পাঠদানের কৌশল পরিবর্তন আনতে হবে।
জ্ঞান অর্জন ও ইনফর্মেশন কালেকশন ভিন্ন বিষয়। ইন্টারনেটে ঘেঁটে যা পাই তা তথ্য-উপাত্ত।কিন্তু জ্ঞানের বিষয়টা ভিন্ন। তথ্যটা কি আহরণ করে সেটাকে বিশ্লেষণ করে সেটাকে গেলে রূপান্তরিত করতে হবে এবং সেটাই হচ্ছে জ্ঞানচর্চা। শিক্ষকদের এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সেখানে আমাদের বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে তাদের মান বৃদ্ধি করা। পরীক্ষা নীতির পরিবর্তন করে মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন আনা হয়েছে। মূল্যায়ন পদ্ধতিকে স্থায়ী করে কিভাবে আরো সুন্দর করা যায় সেটার পর্যালোচনা করছি।
তিনি বলেন, পৃথিবীর কোন শিক্ষাব্যবস্থা কখনো একমুখী থাকেনা।প্রতিনিয়ত সেটা পরিবর্তন হয়। সে পরিবর্তনের সাথে আমাদের শিক্ষকদেরও পরিবর্তন হতে হবে। তাদেরকে এই অনুশীলনের মধ্য আসতে হবে। আমাদের যেই শিক্ষাব্যবস্থা সেটা কিন্তু যুগ উপযোগী নয়। আজকের গেঞ্জিটা আগামীতে কাজে লাগবে বলে সম্ভাবনা নেই। তাই আমরাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্কিল বেইজড,এবং বিশ্লেষণধর্মী যেখানে শিক্ষার্থীরা বিশ্লেষণ করা শিখবে,এমনভাবে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সামান্য একটা অনুজীবের থাবায় আজ বিশ্ব লন্ড ভন্ড। আমরা প্রথমে আতঙ্কিত হয়েছি। পরে নিজেরা গুছিয়ে নিয়েছি, মানিয়ে নিয়েছি। এ পরিস্থিতিতে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে শিক্ষা কার্যক্রম সচল রেখে। অনেক দেশ আমাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিল। ছোট একটি দেশে লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে। কিন্তু আমরা সে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা পেরেছি। মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ গুণে আমরা শিক্ষা ব্যবস্থাতে আমূল পরিবর্তন করতে পরেছি। এগিয়েও গিয়েছি। আমাদের সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে অনলাইন ক্লাস ও অ্যসাইনম্যান্ট পদ্ধতি দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়েছেন এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যা পরবর্তী প্রজম্ম মনে রাখবে, স্মরণ করবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, বর্তমান সরকার শিক্ষার গুণগত পরির্তনের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। সে লক্ষ্যে সরকার শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণে কাজ করছে। একটি দেশের শিক্ষার মান নির্ভর করে শিক্ষকদের অবস্থার উপর। যদিও শিক্ষকদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আক্ষেপ রয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের শিক্ষকদের বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী। মাসের শুরুতে শিক্ষকদের বেতনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শিক্ষকদের সময়মত প্রমোশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্তের অনেকে সমালোচনা করেছে। তবে এক্ষেত্রে আমরা সফল। কোনো শিক্ষার্থীই নকল করে এসাইনমেন্ট জমা দিচ্ছে না। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারলেও কোনো সমস্যা হবে না। এই এসাইনমেন্ট মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গ্রেড নির্ধারণ করা যাবে। ফলে শিক্ষার্থীরা কোনো ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হবে না।
সভায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের উপ সচিব মোহাম্মদ বেলাল হোসেনের সঞ্চালনায় চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক।
এতে বক্তব্য রাখেন, কাটিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিমুল মহাজন, কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম, গার্হস্থ অর্থনীতি সিটি কর্পোরেশন অধ্যক্ষ আলম আকতার, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ তুষারকান্তি নাথ, চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজিবুল হক চৌধুরী, প্রফেসর হোসাইন আহমেদ আরিফ এলাহী। ধর্মগ্রন্থপাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা বোর্ডের সচিব আব্দুল আলীম। এছাড়া বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিল্পব গাঙ্গুলী, কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জনাব নারায়ণ চন্দ্র নাথ প্রমুখ।