গত তিন দশকে ১৬৮ দেশের প্রবাসীরা রেমিটেন্স হিসেবে বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন ৩৬০ বিলিয়ন ডলার। গত বছর রেমিটেন্সের ওপর ২% প্রণোদনা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রেমিটেন্স বেড়েছে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার। প্রণোদনা আরও বাড়ালে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোকে বৈধ রেমিটেন্সের আওতায় আনা সম্ভব হলে বার্ষিক রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রে ইউএস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত ‘৫০ বছরের বাংলাদেশ: প্রবাসীদের অবদান’ শিরোনামে এক সেমিনারে এসব অভিমত এসেছে।
বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে লাগোয়ার্ডিয়া এয়ারপোর্ট সংলগ্ন ম্যারিয়ট হোটেলের বলরুমে এ সেমিনার আয়োজনে সহযোগিতা করে ঢাকার এনআরবি সেন্টার।
বক্তব্য দিচ্ছেন আব্দুল কাদের মিয়া
সেমিনারে মূল বক্তব্য দেন সেন্টার ফর এনআরবির প্রধান শেকিল চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান।
প্রবাসীদের প্রশ্নের জবাবে মশিউর বলেন, “দেশে বিনিয়োগকারি এবং বিনিয়োগের নিরাপত্তায় কোন ঘাটতি নেই। ব্যক্তি হিসেবে আমার জন্য যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, প্রবাসীদের জন্যও একই ব্যবস্থা- এ নিয়ে সংশয়ের অবকাশ থাকতে পারে না। উদ্যোক্তাদের মধ্যে যারা বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে রাজি নন, তারা কখনো কোন দেশেই বিনিয়োগ করতে পারেন না।”
দূতাবাস অথবা কন্স্যুলেটে বিনিয়োগ সেল থাকলে প্রবাসীরা সরাসরি এখান থেকেই বাংলাদেশে প্রত্যাশিত সেক্টরে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন- এ প্রসঙ্গে মশিউর বলেন, “সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমন সেল খোলার সম্ভাবনা বিস্তারিত উল্লেখ করে ঢাকায় পাঠালে আমরা তা বিশ্লেষণ করবো। কারণ, একইসঙ্গে অনেকগুলো সেল খুললে কোনটাই হয়তো কার্যকর হবে না, অথচ অর্থ ব্যয় করতে হবে রাষ্ট্রকে।”
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র শাখার কমিউনিকেশন্স ডাইরেক্টর বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার বলেন, “এনআইডি কার্ড করতে সশরীরে বাংলাদেশে যেতে পারছেন না অনেক প্রবাসী। অথচ বিনিয়োগসহ সব ক্রয়-বিক্রয়, এমনকি মামলা-মোকদ্দমার সময়েও এনআইডি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কন্স্যুলেটে এনআইডি ইস্যুর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। একইসঙ্গে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডি.সি. এবং লস এঞ্জেলেস কন্স্যুলেটেও বিনিয়োগের বিশেষ সেল খোলা হলে আগ্রহী প্রবাসীরা স্বস্তি পাবেন।”
প্রবাসী আমিনুল ইসলাম খান বলেন, “রেমিটেন্সের মাত্রা অনেক বেশি হবে যদি দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোকেও বৈধভাবে রেমিটেন্সের আওতায় নেওয়া যায়। তারা প্রতিনিয়ত বিপুল টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন। তবে তা বৈধভাবে সম্ভব হচ্ছে না।” এ প্রসঙ্গে শাকিল চৌধুরী বলেন, “সরকারের তরফ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির সদস্য হিসেবে আমিও সচেষ্ট রয়েছি। এ মুহূর্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এ মোমেন আফ্রিকায় এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছেন।”
ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের অভ্যর্থনা-ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব দিয়ে আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, “আমাদের সন্তানরা সঙ্গে যায়। এয়ারপোর্টে কখনো হাসিমুখে তাদেরকে স্বাগত জানান না কর্মকর্তারা। বরং ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে কর্মকর্তাদের আচার-আচরণে। এর ফলে মা-বাবার দেশে পা রেখেই বিরূপ ধারণায় পতিত হয় প্রবাসের প্রজন্ম। এমন অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে বিনিয়োগের পরিধি বিস্তৃত করার স্বার্থেই।”
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন এসএফ গ্লোবাল হোল্ডিংস-এর পরিচালক নাসিম আলী, যুক্তরাষ্ট্রে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সহযোগী পরিচালক ওয়াসেফ চৌধুরী, নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সুপারভাইজিং অডিটর ইমতিয়াজ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্রে সোনালী এক্সচেঞ্জের প্রধান কার্যনির্বাহী দেবশ্রী মিত্র, নিউ ইয়র্কে ইন্টান্যাশনাল ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কার্যনির্বাহী কাজী হেলাল আহমেদ, নিউ ইয়র্কে ডেপুটি কনসাল জেনারেল এস এম নাজমুল হাসান, ওয়াশিংটন ডি.সিতে দূতাবাসের ইকনোমিক মিনিস্টার মেহদী হাসান, জাতিসংঘে মিশনের ইকনোমিক মিনিস্টার মাহমুদুল হাসান, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জিয়া করিম, ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ডের স্কুল অব ফার্মেসির সহকারি ক্লিনিক্যাল প্রফেসর ফারজানা মুসাউইস ও সাংবাদিক ফজলুর রহমান।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের প্রধান কার্যনির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট লিটন আহমেদ। সমাপনী বক্তব্য দেন সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাধারণ সম্পাদক,নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল কাদের মিয়া