শতবর্ষী বৃক্ষ ঘেরা পাহাড়,টিলা ও উপত্যকা ঘেরা চট্টগ্রামের সিআরবি জনসমাগমের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। অবিভক্ত ভারতের বেঙ্গল অ্যান্ড আসাম রেলওয়ের সদর দপ্তর সিআরবি ভবনটি।যেটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৫ সালে। যান্ত্রিক বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ফুসফুস বলা হয় এই চত্বরকে।সবুজে ঘেরা সারি সারি সুবিশাল বৃক্ষ।
কোনো গাছের বয়স একশ বছর।কোনোটির বয়স দুশোর বেশি।এই গাছ কেটে হবে হাসপাতাল।গাছ কেটে কিংবা সবুজের মাঝে পরিবেশ নষ্ট করে প্রস্তাবিত এই হাসপাতাল কী চট্টগ্রাম নগরবাসীর প্রত্যাশা ছিল?
শহরের পাহাড়তলী, সীতাকুণ্ডের কুমিরাসহ চট্টগ্রাম জুড়ে রেলওয়ের অংসখ্য জায়গা রয়েছে,সেসবে না হয় হাসপাতাল গড়ুক।শহরবাসীর নির্মল শ্বাসনেয়ার জায়গাটুকুতেই বা কেন এই বেসরকারি হাসপাতাল গড়তে হবে?
গণমাধ্যমের খবর অনুসারে সিআরবির ছয় একর জমিতে ৫০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং ১০০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণে এক বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে গত ১৮ মার্চ রেলওয়ে একটি চুক্তি করে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১২ বছর। প্রকল্পের আওতায় ১০০ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ, ৫০ আসনের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং দুই ধাপে মোট ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে। ৫০ বছর পর প্রকল্পের মালিকানা হবে রেলওয়ের।
এদিকে, সেখানে হাসপাতাল স্থাপন না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বন্দর নগরীর ১০১ নাগরিক। দূষণ ও যান্ত্রিকতার চট্টগ্রাম নগরীতে লাখ লাখ মানুষ যেখানে প্রতিদিন প্রাণভরে শ্বাস নেয় সেই সিআরবি এলাকায় ইটপাথরের নির্মাণটি প্রতিরোধ করতে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সাধারণ মানুষও।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘সিআরবি এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) শর্ত মেনেই ইউনাইটেড হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সিআরবির গোয়ালপাড়া এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। হাসপাতাল নির্মাণকে কেন্দ্র করে সিআরবিতে গাছ কেটে ফেলার কোনও আশঙ্কা নেই। সিআরবির পরিবেশ আগের মতোই থাকবে। তাই হাসপাতাল নির্মাণ থেকে সরে আসার যৌক্তিক কোনও কারণ নেই। চুক্তি অনুযায়ী হাসপাতাল নির্মিত হবে।
অথচ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ঐতিহাসিক স্থাপনা ও পরিবেশগত সংরক্ষিত এলাকায় তালিকায় রয়েছে সিআরবি। তাই সিআরবি সংরক্ষণ করা জরুরি। সিরআরবি এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলে শত বছরের অধিক পুরোনো গাছ কাটতে হবে। এতে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এছাড়া সিআরবির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। তাই প্রকল্পটি সিআরবি এলাকা থেকে পরিবর্তন করে পরিবেশের ক্ষতি হবে না, নগরে এমন স্থানে স্থাপনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে অতি জরুরী।
লেখা
এপিএম রিপন চৌধুরী
চট্টগ্রাম