
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য কমিটিগুলোতে যে সংখ্যায় নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তির বাধ্য-বাধকতা রয়েছে তা এখনো পূরণ করতে পারেনি কোনও দলই।
আর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ দেখা গেলেও, ইসলামী দলগুলোতে তা নেই বললেই চলে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সমস্ত পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে দলগুলোর হাতে সময় আছে আর তিন বছর।
সময় বেঁধে দেবার বিষয় নিয়ে কী বলছে ইসলামী দলগুলো?
কিন্তু আওয়ামী লীগ বা বিএনপির মতো দলে নারীদের অংশগ্রহণ থাকলেও কুড়ি শতাংশের ওপরে নারী সদস্য নেই কোনো রাজনৈতিক দলেই। সবেচেয়ে খারাপ অবস্থা ধর্মভিত্তিক ইসলামী দলগুলোর।
খেলাফতে মজলিস নামে দলটির কেন্দ্রীয় বা তৃণমূলের কোনো কমিটিতেই কোনো নারী সদস্য নেই। খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব শেখ গোলাম আসগর বিবিসি বাংলাকে বলেন, তাদের মহিলা মজলিস নামে একটি ইউনিট আছে। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীদের আনতে চাইছেন তারা। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখনও স্থান হয়নি নারীদের।
দলটির সারাদেশে সদস্য সংখ্যা প্রায় দশ হাজারের মতো। তার দুই শতাংশ নারী সদস্য বলে তারা দাবি করেন। সারাদেশে সদস্য সংগ্রহের কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান মি. আসগর।
কিন্তু ইসলামী দলগুলোতে তারা কতটা ভূমিকা রাখতে পারছেন?
মি: আসগর বলেন, ঘরোয়াভাবে নারী সদস্য সংগ্রহ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সভা সমাবেশে তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে ইসলামী দলগুলো এখনো সরব নয়।
“পুরুষরাই তো নেতৃত্ব দেবেন। নারীরা পুরুষদের সহযোগী। মহিলাঙ্গণে মহিলারা নেতৃত্ব দেবেন। আমাদের পলিসিটা সেটাই। সভা সমাবেশে তাদের যাওয়ার দরকার নেই” বলেন তিনি।
২০২০ সালের মধ্যে সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। নিবন্ধিত ৪০টি দলের কাছে ‘নারী প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভুক্তির’ সর্বশেষ তথ্য চেয়ে তাগিদ দেয় ইসি।
দেশে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামী ধর্মভিত্তিক দল ১১টি। এদের মধ্যে এমন দলও আছে যাদের কেন্দ্রীয় বা তৃণমূলের কোনো কমিটিতেই কোনো নারী সদস্য নেই।
ইসলামী ঐকজোটের নারী সদস্য সংখ্যা এক শতাংশেরও নিচে বলে জানায় নির্বাচন কশিন।
এমন প্রেক্ষাপটে আগামি সাড়ে তিন বছরের মধ্যে শর্ত পূরণ করা কতটা সম্ভব?
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, তাদের সদস্য সংখ্যা জানাতে পারেননি তবে তারা এ বিষয়ে করছেন বলে উল্লেখ করেন।
তবে সবচেয়ে দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগেরও কুড়ি শতাংশের ওপরে নারী সদস্য নেই। বিএনপি, জাতীয় পার্টিতে তা আরও কম।
আওয়ামী লীগ নেতা, নুহ আলম লেলিন বলছিলেন,”বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীদের অংশ দিন দিন বাড়লেও, সক্রিয় রাজনীতিতে নারীদের নিয়ে আসা এখনো চ্যালেঞ্জ”।
নির্বাচন কমিশন সচিব মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান এখনও পর্যন্ত ষোলোটি দল তাদের চিঠির জবাব দিয়েছে।
দলগুলো নারীদের অংশগ্রহণের এই শর্ত পূরণ না করলে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে?
মি: আব্দুল্লাহ জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পূরণ করেত না পারলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাববে কমিশন।
তবে এক্ষেত্রে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টসহ ইসলামী দলগুলোর পক্ষ থেকে তাদের নারীদের ইউনিট থাকার কথা বলা হলেও সেসব দলের রাজনীতিতে নারীরা সক্রিয় নন।
আর যারা আছেন তারা সভা সমাবেশে বা রাজপথের আন্দোলনে যাবেন- সেই মানসিকতাও ইসলামী দলগুলোর মধ্যে এখনো গড়ে ওঠেনি।
তাদের সীমাবদ্ধতা ঘরোয়াভাবে নারী সদস্য সংগ্রহ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
ফলে রাজনীতিতে নারীর নেতৃত্ব বা ক্ষমতায়নের যে কথা বলা হচ্ছে সেক্ষেত্রে এই বাধ্য-বাধকতা কতটা ভূমিকা রাখবে সেটাই দেখার বিষয়।
http://www.bbc.com/bengali/news-40699452