দার্জিলিংয়ের বিক্ষোভে প্রশিক্ষক ভাড়াটে মাওবাদীরা?

Date:

Share post:

বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন ধরিয়ে দেয় স্টেশনেছবির কপিরাইট DIPTENDU DUTTA
Image caption চলতি মাসের শুরুতে নতু করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন ধরিয়ে দেয় স্টেশনে

পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পাহাড়ে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে যে অস্থিরতা চলছে, তাতে আন্দোলনকারী গোর্খারা হিংসা চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ নিতে মাওবাদীদের ভাড়া করেছে বলে রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

দিনকয়েক আগেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি অভিযোগ করেছিলেন, দার্জিলিংয়ে অস্থিরতা সৃষ্টিতে চীনের মদত আছে – এখন তার প্রশাসনেরই এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আঙুল তুললেন নেপালের মাওবাদীদের দিকে।

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অবশ্য দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করা হয়েছে – দার্জিলিংয়ের সাংবাদিকরাও বলছেন পাহাড়ের অস্থিরতায় বাইরের মদত আছে এখনও তেমন কোনও প্রমাণ মেলেনি।

বস্তুত দার্জিলিং পাহাড়ে যে হিংসা চলছে তাতে যে দেশের বাইরের নানা শক্তির মদত আছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা প্রমাণ করতে চেয়েছে একেবারে গোড়া থেকেই।

গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যেমন প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছিলেন এই অস্থিরতায় চীনের ভূমিকা আছে বলে তাদের জোরালো সন্দেহ – এবং দার্জিলিং-নেপাল সীমান্তের কাছে চীন তাদের প্রভাব বিস্তারেরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি সেদিন বলেন, “কেন সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়? আজ চীনকে আক্রমণ করার আগে আমি যদি ছোট্ট একটা প্রশ্ন করি … দার্জিলিংয়ের কাছে পশুপতির গেট – সেখানে চারশো স্কুল খোলা হয়েছে চীনা ভাষা শেখানোর জন্য! তো কেন্দ্রীয় সরকারের সশস্ত্র সীমা বল কিংবা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বা র কী করছিল?”

ভারত-চীন সংঘাতের মধ্যে চীনের নাম এভাবে টেনে আনাটা যে কেন্দ্রীয় সরকার ভালভাবে নেয়নি, পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে তা বুঝিয়েও দিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে এরপরও বাইরের শক্তিগুলোর দিকে আঙুল তুলছে – রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অনুজ শর্মার কথাতেই তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে তিনি জানিয়েছেন, গোয়েন্দা সূত্রে তারা খবর পেয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পাশের দেশগুলো থেকে মাওবাদী যোদ্ধাদের ভাড়া করছে এবং তারা তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কীভাবে সরকারি সম্পত্তি ও কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালাতে হবে।

যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।

মোর্চার শীর্ষস্থানীয় নেতা ও দার্জিলিংয়ের বিধায়ক অমর সিং রাই বিবিসি বাংলাকে বলেন, “রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সম্পূর্ণ মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে – কারণ তারা আমাদের দেশদ্রোহী, সন্ত্রাসবাদী ও জঙ্গী বলে প্রমাণ করতে চায়। এটা পুরোপুরি স্বত:স্ফূর্ত একটা জনআন্দোলন – আর তাতে আমাদের একটাই দাবি, আলাদা গোর্খাল্যান্ড রাজ্য গঠন।”

ছবির কপিরাইট DIPTENDU DUTTA
Image caption পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে এই বিক্ষোভ চলছে

দার্জিলিংয়ের প্রবীণ সাংবাদিক সুরাজ শর্মাও বলছেন মুখ্যমন্ত্রী বা তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা যে সব অভিযোগ তুলছেন তার সঙ্গে তারা অন্তত বাস্তবের কোনও মিল পাননি।

তিনি বলছিলেন, “সরকার বোধহয় একটা ইউটোপিয়ায় থাকেন বলে এসব আজেবাজে কথা বলেন। পশুপতির সঙ্গে আমাদের যে সীমান্ত, তার ধারেকাছেও কোনও চীনা ভাষা শেখানোর স্কুল নেই। আর নেপালের মাওবাদীরা তো কবেই রাজনীতির মূল ধারায় ঢুকে গিয়ে সরকার চালাচ্ছেন – সেখানে তা মাওবাদের অস্তিত্ত্বই নেই। ফলে কীভাবে এসব অভিযোগ আসতে পারে?”

এই আন্দোলনে বাইরের কোনও শক্তি উসকানি দিচ্ছে, এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও প্রমাণ নেই বলেই তার দাবি।

“দেখুন, এই আন্দোলনে নেতারা নেই। তারপরও মানুষ রোজ রাস্তায় নামছে। খাবার নেই, কিছু নেই – তা সত্ত্বেও এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রোজ আরও বেশি বেশি করে মানুষ মিছিলে বেরোচ্ছে। এই আন্দোলন তাদের ওপর কেউ চাপিয়েও দেয়নি – ফলে এটাকে তো স্বত:স্ফূর্তই বলতে হবে, তাই না?”, বলছিলেন তিনি।

পুলিশ সূত্রগুলো অবশ্য বলছে, গোর্খা বিক্ষোভকারীরা যেভাবে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন থানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুঠ করার চেষ্টা করছে তাতে মাওবাদীদের সিগনেচার স্পষ্ট।

তবে সুরাজ শর্মা জানাচ্ছেন, গত ৩৮ দিন ধরে চলা বিক্ষোভে গোর্খারা এখনও কোথায় বন্দুক বা গোলাগুলি ব্যবহারই করেনি।

“যত সংঘর্ষ হচ্ছে এখানে, পাথর ছুড়েই আন্দোলনকারীরা তার জবাব দিচ্ছে। আমরা কিন্তু ঢিল বা গুলতির বদলে অন্য কোনও অস্ত্রশস্ত্র তাদের ব্যবহার করতে দেখিনি। তিস্তা ভ্যালিতে একটা ঘটনা ঘটেছিল – পুলিশ অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পালায়, সেই বন্দুকও কিন্তু বিক্ষোভকারীরা গিয়ে কাছের চা-বাগানে গিয়ে জমা দিয়ে দেয়। অস্ত্র লুঠ করার উদ্দেশ্য থাকলে তারা তো সেগুলো নিয়েই নিতে পারত”, বলছিলেন সুরাজ শর্মা।

তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেভাবে চার-পাঁচ বছর আগে পশ্চিম মেদিনীপুর ও অন্যান্য জেলায় মাওবাদীদের মোকাবিলায় নেমেছিল, দার্জিলিংয়েও তারা ঠিক সেই স্ট্র্যাটেজি নিয়েই এখন এগোতে চাইছে।

সেই সব অপারেশনের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা মনোজ ভার্মাকে দার্জিলিংয়ের পুলিশ-প্রধান করে পাঠানো হয়েছে, সঙ্গে জঙ্গী-দমন অভিযানের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আরও অনেককেই।

http://www.bbc.com/bengali/news-40699451

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...