যানজটে দিনে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট*

Date:

Share post:

রাজধানী ঢাকায় যানজটের কারণে দিনে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। গত ১০ বছরে যানচলাচলের গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত নেমে এসেছে। যা পায়ে হেঁটে চলার গড় গতি (৫ কি.মি.) হতে একটু বেশি। বাংলাদেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশ বৃহত্তর ঢাকায় বাস করে। ঢাকা এখন হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর অন্যতম। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই ঢাকার শহরায়ন সম্প্রসারণে যথাযথ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ২০৩৫ সালে ঢাকার উন্নয়ন শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘টোয়ার্ডস গ্রেট ঢাকা: এ নিউ আরবান ডেভেলপমেন্ট প্যারাডাইম ইস্টওয়ার্ড’ শীর্ষক খসড়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মহানগরীর দ্রুত সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার নগর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সামঞ্জস্য রাখা হয়নি। ফলে একটি বিশৃঙ্খল ও অসম নগরায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে উঠছে ঢাকা। যথেষ্ট পরিকল্পনার অভাবে অত্যধিক ঘনবসতি, নিম্নমানের বসবাসযোগ্যতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং বন্যা ও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ৩৫ লাখ বস্তিবাসীসহ অনেক অধিবাসী প্রায়ই মৌলিক সেবা, অবকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সম্মেলনের উদ্বেধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের মেয়র, উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, নীতি-নির্ধারক, নগর পরিকল্পনাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বেসরকারি খাতের নেতৃবৃন্দ সম্মেলনের বিভিন্ন পর্যায়ে অংশ নেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সেবার মান বাড়াতে সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাজ ভাগাভাগি করে নিতে হবে। সিটি করপোরেশন এবং নগর সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর কাজে সমন্বয় বাড়াতে হবে। শহরের যান চলাচল ব্যবস্থা উন্নয়নে ইতোমধ্যে বেশ কিছু বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বেশ কিছু উন্নয়নকাজ চলছে।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেছেন, বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে, ঢাকা মহানগরীতে ২০৩৫ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বেড়ে হবে সাড়ে ৩ কোটি। এই পর্যায়ের উত্পাদনশীল ও বাসযোগ্য একটি মহানগরী নাগরিকদের জন্য ও অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে। মহানগরীর পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ঢাকাকে অবশ্যই সঠিকভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন, সমন্বয় সাধন এবং বিনিয়োগের সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে, বিশ্বব্যাংক এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ঢাকার রাস্তা বেড়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। এসময়ে জনসংখ্যা বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং যানচলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩৪ শতাংশ। ঢাকার নগরায়ন কেন্দ্র থেকে উত্তর দিকে এবং তারপর পশ্চিমাভিমুখে সম্প্রসারিত হয়েছে। মহানগরীর পূর্ব দিকে বেশিরভাগ এলাকা এখনো গ্রামীণ, তবে দ্রুত বিকাশ লাভের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের উচ্চ-মধ্যম আয়ের লক্ষ্য অর্জনে আধুনিক ঢাকা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ঢাকার পূর্বাঞ্চলের পূর্ণ সুবিধাকে কাজে লাগাতে হবে। এই এলাকাটি মহানগরীর মূল কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি এবং সেখানে ভূমির ব্যাপক প্রাপ্যতা রয়েছে যা মহানগরীর অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা এবং বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে। মহানগরীর পূর্ব অঞ্চলের আয়তন প্রায় ৪০ ভাগ। যার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে গুলশানের মতো সমৃদ্ধ এলাকা রয়েছে। পূর্ব অঞ্চলে আর্থিক ও মানবসম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যমে উন্নয়নে সহায়তা করা সম্ভব। যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে পূর্ব ঢাকা নানা সুবিধাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের একটি প্রাণচঞ্চল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে এবং তা শহরের অন্যান্য অংশের ভিড় ও যানজট কমাতে সহায়ক হবে। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে, পূর্ব ঢাকার দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ন যানজট ও বসবাসযোগ্যতার পরিবেশের আরো অবনতি ঘটাবে এবং বাসিন্দারা বন্যা ও ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।

অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মার্টিন রামা বলেছেন, সারা বিশ্বের বিভিন্ন উদাহরণ যেমন পূর্ব সাংহাই এর পুডং এলাকা ও অন্যান্য স্থান প্রমাণ করে যে, যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি, বাসযোগ্যতার উন্নতি এবং যানজট নিরসন করতে পারে। এখনই এ কাজ করার সঠিক সময়। ভারতের দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত এবং চীনের সাংহাইয়ের সাবেক ভাইস মেয়র কিঝেং ঝাও সম্মেলনকালে দিল্লি এবং পূর্ব সাংহাই এর পুডং এলাকার রূপান্তরের ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তারা বলেন, এই দুটি মহানগরী একাধিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কার্যক্রমকে সমন্বিত করে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বমূলক সহযোগিতার (পিপিপি) মাধ্যমে লাভবান হয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্থনি ভেনাবলস ২০৩৫ সালের দিকে ঢাকার উন্নয়নের জন্য চারটি উপস্থাপনা পেশ করেন।

উদ্বোধনী পর্ব শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনায় বক্তব্য রাখেন ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও মো. সাঈদ খোকন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। মেয়র আনিসুল হক বলেন, বিশ্বের শীর্ষ ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকার জন্য যে বাজেট দরকার, তা বরাদ্দ দেওয়া হয় না। বিশ্বব্যাংক ভালো উন্নয়ন সহযোগী; কিন্তু ‘লেট ডিসিশন মেকার’। রাজধানীর সমস্যা হলো জনসংখ্যা ও ট্রাফিক। আমাদের অনেক প্রস্তুতি দরকার। যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে বিশ্বব্যাংককে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি। মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ঢাকায় পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। আমাদের প্রয়োজন সেবা খাতের মধ্যে সমন্বয়। তার মতে, নগর সরকার নেই বলে বিভিন্ন সংস্থা সমন্বয়হীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর এ কারণেই নগরের সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...