ডেস্ক নিউজ: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার।
রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সাক্ষাৎ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
এসময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, চট্টগ্রাম ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যে একটি বৈচিত্র্যময় অপরুপ নগরী। এখানে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক বন্দর। এই চট্টগ্রাম বন্দর শুধু জাতীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রধান অবলম্বন নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক পোতাশ্রয়। তাই চট্টগ্রামের প্রতি আমাদের আগ্রহ ও সুনজর রয়েছে।
আর্ল আর মিলার বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সতর্কতা, প্রতিরোধ-প্রস্তুতি ও সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ ঘন জনবসতিপূর্ণ জনপদ হলেও তুলনামূলকভাবে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোর তুলনায় কোভিড সংক্রমন ও মৃত্যুর হার অনেক কম। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, দক্ষতা ও দূরদর্শীতার ফলে। আমি অবশ্যই আশাবাদ ব্যক্ত করি যে, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব করোনজয়ী হবে। আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাব।
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কর্ম করে যাচ্ছেন। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতি যত্নশীল।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বক্তব্যের আলোকে বলেন, সিটি মেয়র অত্যন্ত সুন্দরভাবে চট্টগ্রামের গুরুত্ব সম্ভাবনা এবং সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম ও সেবার পরিধি নিয়ে যেসব কথা বলেছেনে তার সাথে আমি সহমত পোষন করি। কুটনৈতিক পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমি তাঁর পরামর্শ ও প্রস্তাবনা সমূহ বিবেচনা করতে আন্তরিকভাবে আগ্রহী।
এর আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও তাঁর প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্বের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশ দ্বার। এখানে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে রিজিওনাল কানেক্টিভিটি সম্পৃক্ততার সূত্রে ভারতের পূর্বাঞ্চল, ভূ-সিমান্তবর্তী দেশ নেপাল, ভুটানসহ মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনর্মিং সিটি পর্যন্ত অর্থনৈতিক প্রাগ্রসরতা নতুন ভাবে সংযোজিত হলে চট্টগ্রাম বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যের অগ্রগতি ও উন্নয়নের নাভিমূল হিসেবে প্রাণময় গতিময়তা পাবে।
তিনি আরো বলেন, বে-টার্মিনাল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, মহেশখালী গভীর সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ, চট্টগ্রাম নগরীতে আউটার রিং রোড নির্মাণ, মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নতুন নতুন পর্যটন স্পট, উপ-শহর এবং অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম শিল্পায়ন ও বহুমাত্রিক উন্নয়নে বিদেশী বিনিয়োগের উর্বর ভূমি হিসেবে পরিগণিত হতে যাচ্ছে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, চট্টগ্রাম এমন একটি ভূ-খন্ড যার বৈশিষ্ট্য হলো পাহাড়-নদী-সমুদ্র সমতটের সমন্বয়। এই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূলবর্তী জনপদে পর্যটন শিল্প নির্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠতে পারে। এ অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রম শুধু আঞ্চলিক নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে সমার্থক। তাই চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি জাতীয় ক্ষেত্রেও ও আন্তর্জাাতিক ক্ষেত্রেও একইভাবে সমার্থক।
সিটি মেয়র মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জানান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সারা দেশের একমাত্র স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান-বহুমাত্রিক নাগরিকসেবার পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। নগরীতে ৬২ টি স্কুল, ২৩ টি কলেজ, ১১ টি কম্পিটউটার ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য খাতে ৫ টি মাতৃসদন হাসপাতাল, মিডওয়াইফ ইনস্টিটিউট, কমিউনিটি কলেজসহ ৪১ টি ওয়ার্ডে আরবান প্রায়মারী হেলথ সেন্টার স্থাপিত করে নগরীর ৬০ লাখ মানুষের মাঝে সেবা দিচ্ছে। পাশাপাশি দলিত শ্রেণীর (সেবক) গণের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিরসনে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্দেশ্যে মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আইটিসহ বিভিন্ন বেসরকারি খাতে আপনাদের সরকারের বিনিয়োগ ও সহায়তা প্রদানের সুবিবেচনা বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বকে আরো উন্নত ও সদৃঢ় করবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, ভারপ্রাপ্ত সচিব ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌলী রফিকুল ইসলাম মানিক।