বাংলাদেশে সীতাকুণ্ডের ত্রিপুরা পাড়ায় নয়টি শিশুর মৃত্যু ও একই রোগে আরো বহু শিশু আক্রান্ত হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে রোগটি আসলে হাম ( Measles)।
বাংলাদেশে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইন্সটিটিউট এর মহাপরিচালক মিরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা বলছেন, তারা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন যে মৃতদের শরীরে হামের জীবাণু ছিলো।
সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে হামের কারণেই এত শিশু আক্রান্ত হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় ছয়জন স্বাস্থ্য কর্মীকে তাদের অবহেলার জন্য শাস্তি হিসেবে সন্দীপের দুর্গম অঞ্চলে বদলী করা হয়েছে।
কিন্তু যে হামকে অনেকেই একটি সাধারণ রোগ বলে মনে করেন – তা কি এতটা ভয়াবহ বা প্রাণঘাতী হতে পারে? তার জবাবে তিনি বলেন, হামও প্রাণঘাতী হতে পারে।
“কারণ ওই শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহীনতার মাত্রাটা একটু বেশিই ছিলো। এছাড়া আমরা সময়মত জানতে পারিনি। ঠিক সময়মত যদি চিকিৎসা হতো তাহলে হয়ত তারা মারা যেতো না। কিন্তু পরে যাদের পাওয়া গেছে তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু জানা গেছে বলে ব্যবস্থা নেয়া গেছে” – বলেন তিনি।
সপ্তাহ-খানেক আগে সীতাকুণ্ডের মধ্যম সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দুটি ত্রিপুরা পাড়ায় একই রোগে নটি শিশুর মৃত্যুর খবর জানা যায়। এরপর একই ধরনের লক্ষণ নিয়ে ৮৫ টির মতো শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়।
ওদিকে সরকারের পক্ষ থেকে এটিও স্বীকার করে নেয়া হচ্ছে যে সীতাকুণ্ডের ঐ এলাকায় শিশুদের একসাথে এত পরিমাণে হামে আক্রান্ত হওয়ার মুল কারণই ছিলো সেখানে টিকাদান কর্মসূচীর অনুপস্থিতি।
মধ্যম সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা বিমল ত্রিপুরা বলছেন, গত আট নয় বছরে সেখানে টিকাদান কর্মসূচী দেখেন নি তিনি।
কিন্তু কিভাবে সেটা হলো?
বাংলাদেশে হাম সহ ছটি রোগের প্রতিরোধে খুব সফল টিকাদান কর্মসূচী রয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেশের ৮২ শতাংশ শিশু টিকাদান কর্মসূচীর আওতায় রয়েছে। তবুও সীতাকুণ্ডের ঐ জনগোষ্ঠী টিকাদান কর্মসূচীর বাইরে কিভাবে রয়ে গেলো?
ম্যাটারনাল, নিওন্যাটাল চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট হেলথ কর্মসূচীর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম সরকারের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে সীতাকুণ্ডের ত্রিপুরা পাড়ায় এই কাজটি হয়ত কোনো কারণে অনেক দিন থেকে আমাদের কর্মীরা করে নি। কিভাবে যে এই এলাকাটি বাদ পড়েছে সেখানে গিয়ে একটি তদন্ত দল তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।”
বাংলাদেশে এরকম জনগোষ্ঠী কি আরো থাকতে পারে? মি আলম বলছেন, কিছু জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো কঠিন।
সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে কিছু হাওর অঞ্চল, কিশোরগঞ্জ ও পাহাড়ের কিছু এলাকা ও কিছু চরে পৌঁছাতে তারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, বলছেন মি আলম।