ডেস্ক নিউজ: দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি ও নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের (এনআরবি) বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দুবাইতে ‘ক্যাপিটাল মার্কেটস রোডশো’ করতে যাচ্ছে বিএসইসি। কমিশনেরর এই উদ্যোগ এবারই প্রথম।
এদিকে ইক্যুইটি নির্ভরতা কমাতে পুঁজিবাজারে আরও নতুন পণ্য চালু করতে যাচ্ছে কমিশন। বিএসইসি জানিয়েছে, শীঘ্রই তারা নতুন চারটি পণ্য চালু করবে। পণ্যগুলো হচ্ছে- ডেরিভেটিভস, গ্রিন বন্ড, সুকুক ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ)।
আগামী ৯-১২ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দুবাইতে ‘ক্যাপিটাল মার্কেটস রোডশো’ করবে বিএসইসি। ‘রাইজিং অব দ্য বেঙ্গাল টাইগার: পটেনশিয়ালস অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেটস’ শীর্ষক রোডশোতে নতুন পণ্য চালু এবং সম্ভাবনা বিদেশি বিনিয়োগকারী ও এনআরবিদের কাছে তুলে ধরবে কমিশন।
কমিশন মনে করছে, পুঁজিবাজারে এনআরবি ও বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকলেও তা খুব কম। কাজেই এখন এই বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গতিশীলতাও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। বর্তমান পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচায় যে বেনেফিসিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট (বিও) রয়েছে, তার মাত্র ৬ শতাংশ এনআরবি ও বিদেশিদের। আর প্রায় ৯৪ শতাংশই দেশীয় বিনিয়োগকারীর, যার মধ্যে ব্যক্তিগত অ্যকাউন্টই বেশি।
পুঁজিবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সহজে বিনিয়োগের জন্য কমিশন সম্প্রতি ডিজিটাল বুথ খোলার বিষয়ে নীতিমালা জারি করেছে। বিদেশে ডিজিটাল বুথ খোলা শুরু হলে এনআরবিসহ বিদেশিরা সহজে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। এতে করে পুঁজিবাজারে বিদেশি অর্থপ্রবাহ বাড়বে।
বিদেশে অবস্থানরত নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের (এনআরবি) পাঠানো রেমিটেন্স বিনিয়োগে রূপান্তর করতে চায় কমিশন, সেই ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার হতে পারে ভালো জায়গা।
কমিশনের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, প্রবাসীরা অর্জিত অর্থ পাঠায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ অর্থ নতুন বাড়ি বানিয়ে শেষ করে। কিন্তু সেটা বিনিয়োগে রূপান্তর করা গেলে তাদের আয়ের উৎস বাড়বে। কমিশন সে বিষয়টির উপর জোর দিচ্ছে।
বিএসইসির চেয়্যারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, “রোড শো আয়োজনের মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারকে বিদেশিদের কাছে তুলে ধরা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে অবগত করা হবে। পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের যে সম্ভাবনা রয়েছে, সেটা তুলে ধরে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে।”
তিনি বলেন, “নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিরা অনেকেই পুঁজিবাজারে আসে না। তাদের পাঠানো রেমিটেন্সে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকলেও সেটা জানে না। এই জন্য তাদেরকে বিনিয়োগ সম্পর্কে উৎসাহিত করা হবে।”
এধরনের উদ্যোগ এবারই প্রথম
প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরে উপনীত হলেও বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পুঁজিবাজারে টানতে প্রথমবারের মতো উদ্যোগ নিচ্ছে বিএসইসি। দেশের বাইরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে ব্যাপকভাবে তুলে ধরে বিনেয়াগে উৎসাহিত করার উদ্যোগ আগে নেওয়া হয়নি।
কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, কোভিডের কারণে বিশ্বে বিনিয়োগের পরিবেশ সংকুচিত হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা কিছুটা হলেও ভালো অবস্থানে রয়েছে। নন-রেসডেন্ট বাংলাদেশী ও বিদেশীদের বিনিয়োগে সম্ভাবনা রয়েছে।
২০১৯ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কৌশলগত অংশীদার হিসাবে বিনিয়োগ করেছে চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ। কৌশলগত অংশীদার হিসাবে পাওয়ার পর ডিএসই চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন করেছে।
সাধারণত কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন করতে রোড শো আয়োজন করে। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা, সম্ভাবনা ও নতুন পণ্য সম্পর্কে অবগত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ক্যাপিটাল মার্কেটস রোডশো’ আয়োজন করবে।
কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জনসম্মুখে আসার আগে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সে প্রতিষ্ঠানের আয়োজিত প্রচারনাই রোডশো। কোনো প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করার আগে, প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরেই রোডশো।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আলম টিবিএসকে বলেন, “পুঁজিবাজারে বিদেশী ও এনআরবিদের টানতে কমিশনের উদ্যোগ এটিই প্রথম। এর আগে এত বড় আয়োজন করে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”
“কোভিডের কারণে সারা পৃথিবীতে বিনিয়োগের পরিবেশ কমে গেছে কিন্তু বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রোডশো আয়োজনের মাধ্যমে বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং বিদেশি ও এনআরবিদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে।”
নতুন করে যুক্ত হচ্ছে আরো চারটি পণ্য
বর্তমান পুঁজিবাজারে ইক্যুইটি নির্ভরতা বেশি। বন্ড ও মিউচ্যুয়াল পণ্যও রয়েছে। নিরাপদ বিনিয়োগ হিসাবে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ হলেও সচল নয় বন্ড মার্কেট। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে বন্ড জনপ্রিয় পণ্য।
কিন্তু দেশের পুঁজিবাজার থেকে বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোক্তরা বন্ডের মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন করলেও সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ড কেনাবেচা হয় না। বন্ড মার্কেটকে সচল ও বন্ডের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী মূলধন উত্তোলন আরও বাড়াতে নানামুখী চেষ্টা করছে কমিশন।
গত বছর একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি বন্ড ইস্যুর অনুমোদনও দিয়েছে কমিশন। আরও বেশ কিছু বন্ড পরিকল্পনাধীন রয়েছে।
২০১৯ সালে বিএসইসি সুকুক বিনিয়োগ ও ডেরিভেডিভস নীতি প্রণয়ন করেছে। অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে বন্ডের লেনদেন চালুর বিষয়ে পরিকল্পনা করছে কমিশন। গ্রিন বন্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) নীতি প্রণয়ন নিয়েও কাজ করছে কমিশন।
কমিশন মনে করছে, পুঁজিবাজারে একাধিক পণ্য বা পণ্য বৈচিত্র্যায়ন করা গেলে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে বিনিয়োগের পরিমাণও। দীর্ঘমেয়াদী মূলধন উত্তোলনে শিল্পখাতের উদ্যোক্তারাও পুঁজিবাজারমুখী হবে।