নতুন অর্থবছরের (২০১৭-১৮) রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৩৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৮ শতাংশ। গত অর্থবছরেও একই হারে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়। রফতানি আয়ে ধীরগতির কারণে লক্ষ্যমাত্রা আগের মতোই রাখা হচ্ছে। টাকার অঙ্কে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়াচ্ছে ৩৮ বিলিয়ন বা তিন হাজার ৮০০ কোটি ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গত অর্থবছরের রফতানি আয়, অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এ অঙ্ক নির্ধারণ করেছে। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে রফতানিকারকদের বৈঠকে লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হবে। এ সপ্তাহের মধ্যেই বৈঠকটি হতে পারে। ইপিবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আগের অর্থবছরে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার থেকে ৮ শতাংশ বাড়িয়ে গত অর্থবছরে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার ৭শ’ কোটি ডলার। শেষ পর্যন্ত এই লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৬ শতাংশ কমে রফতানি হয়েছে তিন হাজার ৪৮৪ কোটি ডলারের পণ্য। এ নিয়ে টানা ৬ বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। আগের বছরের তুলনায় রফতানি মাত্র ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি হয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে ওভেন ক্যাটাগরির আয় গত অর্থবছরের তুলনায় ২ দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছে। নিটের আয় কিছুটা বেশি অর্থাৎ ৩ শতাংশ বাড়ার সুবাদে গড়ে তৈরি পোশাক রফতানি গত বছরের তুলনায় কমে যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। গড়ে আয় বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ_ যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ইপিবির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, আগামী চার বছরের মধ্যে রফতানি থেকে ৬০ বিলিয়ন ডলার আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারই আসবে তৈরি পোশাক থেকে। সে বিবেচনায় রফতানি আয়ের লক্ষ্য আরও বেশি হওয়া উচিত। তবে মার্কিন ও ইউরোপীয় দুই ক্রেতা জোট পোশাক কারখানা পরিদর্শন শেষে সংস্কারে যে চাপ দিচ্ছে তাতে অনেক ছোট এবং মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক কারখানা উৎপাদনে নেই। নানা কারণে বিশ্ববাজারেও পোশাকের চাহিদা কমেছে। এসব বিবেচনা থেকে প্রবৃদ্ধি আর বাড়িয়ে ধরা হচ্ছে না। এ ছাড়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে তা সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে সমালোচনা হয়ে থাকে। এ কারণে কম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে- যাতে বছর শেষে তা অর্জন করা সম্ভব হয়। ইপিবির প্রধান নির্বাহী এবং ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য সমকালকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নতুন পণ্য এবং বাজার সন্ধানে কাজ করছেন তারা। রাশিয়াসহ যেসব দেশে রফতানিতে এখনও উচ্চ শুল্ক বাধা রয়েছে সেসব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং সমঝোতার ভিত্তিতে বাজার প্রবেশনীতি নিচ্ছেন তারা। তিনি বলেন, প্রকৃত অর্থে রফতানি কেন কমেছে তা জানার চেষ্টা করবেন তারা।
এদিকে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রাকেও বেশি মনে করেন উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, গত অর্থবছরের রফতানি আয়ের তুলনায় ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি আয়ের সম্ভাবনা বর্তমান প্রেক্ষাপটে নেই। গত অর্থবছর যেসব কারণে রফতানি খাত খারাপ গেছে, সেসব কারণ এখনও বিদ্যমান। বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু সমকালকে বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, আগামী কয়েক মাসেও রফতানি পরিস্থিতি অনুকূলে আসার মতো কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না। তার মতে, সব বাজারে অন্তত ৩ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার দর অবনমন করা ও গ্যাস সংকটের সমাধান করা গেলে লক্ষ্যামাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইএবির প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাস্তবতা অনুযায়ী নতুন বছর গত বছরের রফতানি ধরে রাখাই কঠিন হবে। সেখানে অতিরিক্ত ৩০০ কোটি ডলার একটা অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা। অন্তত পোশাক খাত বর্তমানে সে অবস্থায় নেই। অন্যান্য খাত যদি খুব ভালো করে তবুও লক্ষ্যমাত্রাটা উচ্চাভিলাষী। কারণ, রফতানি আয়ের ৮৫ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। তিনি বলেন, বড়জোর অতিরিক্ত ১০০ কোটি ডলার অর্থাৎ তিন হাজার ৬০০ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা যেতে পারে।
রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ বিলিয়ন ডলার
Date:
Share post: