ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কেঁপে উঠেছিল ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি সম্প্রচার কেন্দ্র। খ্যাতিমান উপস্থাপিকা সাহার ইমানির সংবাদ পাঠ চলার মধ্যেই সোমবার রাতে টিভি ভবনে ঘটে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। তিন কর্মী নিহতও হন। এরপরও থামেননি ইমানি। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে অল্পক্ষণ পরেই আবার টেলিভিশন পর্দায় ফিরে আসেন তিনি।
হাত তুলে ইমানি উচ্চারণ করেন প্রতিবাদের ভাষা। তার এই পেশাদারিত্ব ও বীরত্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। ইরানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা ইমানির কাজের প্রশংসা করে বলছেন ‘অভাবনীয় সাহসিকতা’। অনেকেই লিখেছেন, “তিনি ইরানি নারীদের সাহসের প্রতীক।”
রাষ্ট্রীয় আইআরআইবি টিভি স্টুডিওতে বিস্ফোরণের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার আগমুহূর্তে সাহার ইমানিকে দেখা গেছে ইসরায়েলবিরোধী বার্তা দিতে দিতে আঙুল উঁচিয়ে ইশারা করছেন। সেই মুহূর্তটির ছবি ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনে, যেখানে তার পাশে খামেনি ও নাসরাল্লাহর ছবিও দেখা গেছে।
একটি অনলাইন পোস্টারে তাদের ছবিটি ব্যবহার করে লেখা হয়েছে— “একটি আদর্শকে হত্যা করে ধ্বংস করা যায় না।”
ইরানের নারী ও পরিবার বিষয়ক উপ-রাষ্ট্রপতি জাহরা বেহরামজাদে আজার এক পোস্টে সাহার ইমানিকে বলেছেন, “সাহার ইমানি এখন ইরানি নারীর দৃঢ়তার প্রতীক। ইসরায়েলের বর্বরতায় তিনিই হয়ে উঠেছেন জনগণের কণ্ঠ।”
কে এই সাহার ইমানি?
খাদ্য প্রকৌশলে প্রশিক্ষণ নেওয়া সাহার ইমানি ২০১০ সালে সংবাদ উপস্থাপিকা হিসেবে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদপাঠিকা হয়ে উঠেন তিনি। ইমানি বিবাহিত। তার একটি সন্তান রয়েছে।
টিভি স্টুডিওতে সোমবারের হামলার পর আরবি ভাষার সংবাদমাধ্যমগুলো তার “ধীরস্থির আচরণ ও আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি”র প্রশংসা করেছে। ইমানির সরলতা ও মেকআপবিহীন উপস্থিতি বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
হামলার নিন্দা
ইরানি রাষ্ট্রীয় টিভি সম্প্রচার ভবনে হামলার ঘটনায় ইরানপন্থি অনেকেই নিন্দা জানিয়েছেন। হিজবুল্লাহ একে বলেছে “ইহুদিবাদী অপরাধ”, এবং “সাংবাদিকতার মুখ বন্ধ করতে পরিকল্পিত সন্ত্রাস।”
ইরানের সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, “শত্রু তেহরানে জাতীয় গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তারা চায়, ইরানি জনগণের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ হয়ে যাক।”
সম্প্রচার কর্তৃপক্ষর প্রধান পেইমান জেবেলি বলেন, “এই হামলা ইরানি সাংবাদিকদের মনোবল ভাঙতে পারেনি, পারবেও না।”