ইতিমধ্যে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬০ শতাংশ।
কর্ণফুলী নদী টানেল প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড দ্বারা নির্মিত হয়ে আসছে। দ্বিতীয় ও শেষ টিউবের কাজ শুরু হচ্ছে বিজয়ের মাসে। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে টানেল নির্মাণের কাজ। এর আগে প্রথম টিউব নির্মাণ (বোরিং) কাজ হয়েছিল প্রায় ৪ মাস আগে। প্রথম টিউব নির্মাণ শেষ করে এখন সংযোগ সড়ক তৈরির কাজ চলছে। টানেল নির্মাণ ঘিরে কর্ণফুলীর দুই তীরে উন্নয়নযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে।
চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগর চট্টগ্রাম শহরকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে গড়ে তুলতে নগরীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার যা দেশের প্রথম ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ নির্মাণে বাস্তবায়িত হচ্ছে ।
৩.৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেল ছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪.৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে এই প্রকল্পে পাঁচ হাজার ৯১৩.১৯ কোটি টাকা দেবে চায়নিজ এক্সিম ব্যাংক।
৯২৯৩ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট রাস্তাসহ প্রকল্পটি ৮০ কিমি/ঘন্টা বেগের দ্বিমুখী চার-লেন মডেল অনুসরণ করেছে যার মধ্যে প্রধান টানেলটির দৈর্ঘ্য ৩৩১৫ মিটার এবং একটি সুবিশাল সেতু এবং সংযোগকারী সড়কটি যথাক্রমে ৭২৭ মিটার এবং ৫৩৪১ মিটার।
চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে আনোয়ারা প্রান্তে নির্মিত প্রথম টিউব থেকে ১২ মিটার দূরে নির্মাণ করা হবে দ্বিতীয় টিউব। মাটির ১৮ মিটার থেকে ৪৩ মিটার নিচ দিয়ে যাবে টিউব। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গবন্ধু টানেলের চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে আনোয়ারা প্রান্তে ১২ মিটার ব্যাসের একটি টিউব স্থাপনের কাজ শেষ করার পাশাপাশি টানেলের দুই পাশের সংযোগ সড়কের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণকাজ শেষ করতে চান বলে জানান তিনি। ডিসেম্বরে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টিউবের কাজ শেষ হলে এই টানেলের চার লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সিটি আউটার রিং রোড দিয়ে পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলে প্রবেশ করে আনোয়ারা প্রান্তে পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী সড়কের চাতরী চৌমুহনী পয়েন্টে ওঠা যাবে। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপিত হবে। এতে ভ্রমণ সময় ও খরচ হ্রাস পাবে এবং পূর্ব প্রান্তের শিল্প-কারখানার কাঁচামাল, প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের সঙ্গে সহজ যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনের ফলে পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর এই টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ১ হাজার ২২০ মিটার বোরিং মেশিনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে খনন করে রিং বসানো হয়েছে। প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, টিভিএম খনন করে যেমন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পিছনের দিকে সেগবেণ্ট ঢুকে সুড়ঙ্গে পাকা দেওয়াল হয়ে যাচ্ছে। টিভিএমের পিছনের দিক থেকে কংক্রিটের সেগব্যান্ট গুলো একটি রেল ট্র্যাক দিয়ে ঢুকছে, তারপর ৮টি ভাগে ভাগ হয়ে রিং আকারে একটির সাথে আরেকটি মিলে দেওয়াল হয়ে যাচ্ছে। প্রতি ৮টি সেগবেণ্টে ২মিটারের একটি রিং তৈরী হয়। খনন ও পাকা দেওয়াল নির্মাণ সবই হচ্ছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। প্রকল্পে মোট ১৯হাজার ৪শ ৮৮টি সেগভেণ্ট লাগবে। চিনের কারখানায় দিনে ৩২টি সেগবেণ্ট তৈরি হয়ে যা বাংলাদেশে পৌছায়। টানেলের কাজ শেষ হলে ১ম বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে এবং পরবর্তীতে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ১কোটি ৪০লাখ।
মুহাম্মদ আবুল বশর
বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে দেশের প্রথম ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ নির্মাণের কাজ
Date:
Share post: