ব্রিটিশ জার্নাল অফ অস্ট্রেটিক্স এন্ড গাইনোকোলোজি এর একটি গবেষণা মতে, গড়ে ১৩ জনের মধ্যে ১ জন মহিলা যৌন সঙ্গমকালে তীব্র যন্ত্রণার শিকার হন। তবে শুধু এইটুকু নয়, সার্ভেটিতে এটিও ধরা পড়েছে, যে সকল মহিলারা এই যন্ত্রণার সম্মুখীন হন, তারা সর্বসমক্ষে তা তুলে ধরতেও লজ্জা পান। ফলে, দীর্ঘ দিন ধরে প্রতি সঙ্গমকালে এই যন্ত্রনা সহ্য করতে গিয়ে তাদের পড়তে হয় চূড়ান্ত বিপদে।
তো চলুন আজ আমরা খোলাখুলি কথা বলি, এই সমস্যাটি নিয়ে। খুঁজে বের করি, এই ব্যাথার কারণ, আর তার সাথেই নজর রাখবো এর প্রতিকারের ওপর।
কারণ–
এই পেইনফুল সেক্সের চিকিৎসাগত নাম হল- ডিস্প্রেওনিয়া । মূলত ১৬ থেকে ২৪ এবং ৫৫ থেকে ৬৪ বছরের মহিলারা বেশি শিকার হন এই সমস্যার। প্রথম বয়সের গ্রুপটি হলো যখন মেয়েদের শরীর পুরোপুরি যৌন সঙ্গমের জন্য তৈরী হয়ে ওঠে না। তবে সকলের ক্ষেত্রে এক বিষয় নয়, অনেক মেয়েরই ১৬ বছর বয়স থেকেই শরীরে সেক্স উদ্দীপক তৈরী হয়ে যায়। আবার পরের বয়সের গ্রূপটিতে, মহিলাদের সেক্স বা যৌন সঙ্গমের ক্ষমতা ভীষণ ভাবে হ্রাস পায়।তাই সেই সময় সেক্স বেশ খানিকটা যন্ত্রণামুলক হয়ে ওঠে।
আবার অনেক সময় দিনে দুইবারের বেশি যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হলেও, তা পরে যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। কারণ প্রতিবার যৌন সঙ্গমেই আমাদের শরীর থেকে বেশ খানিকটা ক্যালোরি বার্ন হয়, এবং শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। ফলে তা অনবরত করতে থাকলে ব্যথা হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। মহিলাদের মনোপেজ শুরু হলে, তখন যৌনাঙ্গ অনেকটাই শুষ্ক হয়ে যায়, কারণ তখন প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসৃত হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সঙ্গমকালে জ্বালা ভাব শুরু হতে পারে।
অন্যদিকে,ওভারিতে সিস্ট থাকলে, ইন্টারকোর্স করার সময় ব্যাথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, মহিলাদের যৌনাঙ্গে যদি কোনো ইনফেকশন থাকে তো সেটিও কারণ হয়ে উঠতে পারে।চিকিৎসকদের মতে, শরীরে হরমোনাল চেঞ্জের জন্য এই ব্যাথার উৎপত্তি হয়, আবার অনেক সময় যৌন সঙ্গমে আগ্রহী না হয় স্বত্তেও সঙ্গীর মন রাখতে, সঙ্গমে লিপ্ত হলে তা ব্যাথার কারণ হয়ে ওঠে।
নিরাময়-
ভয় পাওয়ার কোনো বিষয় নেই, আর লজ্জা তো একদমই নয়। কারণ ভয় আর লজ্জা পেয়ে যদি সমস্যাটি চেপে যান, তো তাতে আপনার শরীরেরই ক্ষতি। আর এটা খুব যে বড় কোনো শারীরিক সমস্যা তাও নয় কিন্তু, প্রথম থেকেই তার চিকিৎসা করলে এর নিরাময় সম্ভব। কিন্তু যদি চেপে থাকেন, তাহলে সমস্যা বড় আকার নিতে পারে।
এখন এই সমস্যার এক সে বড় কর এক অত্যাধুনিক চিকিৎসা বেরিয়ে গেছে। তাই চিন্তার কোনো বিষয় নেই। এই রোগটির চিকিৎসা করার আগেই রোগীকে করতে হয় কিছু টেস্ট। আপনার চিকিৎসক আপনাকে প্রশ্ন করতে পারে-
১। কখন এই ব্যাথা শুরু হয়?
২।ব্যাথার তীব্রতা কতটা?
৩। ঠিক কোন পজিশনে এই ব্যথার উৎপত্তি হয়?
৪। এবং এই ব্যথা কখন আস্তে আস্তে থামে?
এছাড়াও আপনার এবং আপনার পার্টনারের সেক্সচুয়াল হিস্ট্রি নিয়েও নানাবিধ প্রশ্ন করবেন চিকিৎসক। আপনার আগে কোনো সন্তান থাকলে, তার জন্মকালীন সার্জারি থেকে থাকলে, তার রিপোর্টও দেখতে পারেন তিনি। তবে প্রশ্নগুলির ঠিকঠাক উত্তর দিলেই, যথাযথ ট্রিটমেন্ট শুরু করা সম্ভব। এরপর চিকিৎসক প্রয়োজনে আপনার উল্ট্রাসোনোগ্রাফি করার পরামর্শ দিতে পারেন।
এরপরেই আপনার কোন কারণে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা নির্দিষ্ট করা চিকিৎসকদের কাছে সহজ হয়ে যায়। আর সেই মতো ওষুধ শুরু করলেই, নিরাময় হতে বেশি সময় লাগে না।
তাই বলছি ভয় না পেয়ে, আপনারা পার্টনারের সাথে বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলুন। ব্যাথা সহ্য করে কিছুটা জোর করে যৌন সঙ্গমে রাজি হবেন না। যদি কোনো ইনফেকশনের জন্য আপনার ব্যাথা হয়, আর তা আপনি আপনার পার্টনারের কাছ থেকে লুকিয়ে যান, তো সেই ইনফেকশন কিন্তু আপনার পার্টনারেরও হতে পারে। তাই সময় থাকতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।