অশ্বগন্ধা:
একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এই গাছের পাতা সেদ্ধ করলে ঘোড়ার মূত্রের মতো গন্ধ বেরোয় বলে একে অশ্বগন্ধা বলা হয়ে থাকে। এই পাতার বৈজ্ঞানিক নাম ‘উইথানিয়া সোমনিফেরা (ইংরেজি নাম)।আয়ুর্বেদে একে বলা হয় বলদা ও বাজিকরি।
অশ্বগন্ধার মূল, পাতা, ফুল, ফল, ছাল, ডাল সবই ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ৩৫–৭৫ সেমি (১৪–৩০ ইঞ্চি) ক্রমবর্ধমান হয়ে গাছটি সাধারণত দুই-আড়াই হাত উঁচু হয় এবং শাখাবহুল থাকে। এতে ছোট ছোট মটরের মতো ফল হয়। ফুল ছোট, সবুজ এবং ঘণ্টা আকৃতির। পাকা ফল হলে কমলার মতো কিছুটা লাল হয়।
শক্তিবর্ধক:এ গাছের রস শক্তিবর্ধক। পুরুষের শুক্রাণু বাড়াতে বেশ কার্যকর। অশ্বগন্ধার এর মূল ও পাতা স্নায়ুবিক বিভিন্ন রোগে উপশম আনে। দুধ ও ঘিয়ের সঙ্গে পাতা ফুটিয়ে খেলে শরীরে বল পাওয়া যায়। ইনসমনিয়ায় বা অনিদ্রায় ভুগলে অশ্বগন্ধা উত্তম ওষুধ হিসাবে কার্যকর হতে পারে।
ভালো ঘুমের জন্য অশ্বগন্ধা গুঁড়ো চিনিসহ ঘুমানোর আগে খাওয়া যেতে পারে। সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পেতে অশ্বগন্ধার মূল গুঁড়ো করে খাওয়া যেতে পারে। চোখের ব্যথা দূর করতে অশ্বগন্ধা বিশেষ উপকারী।
ক্রনিক ব্রংকাইটিসের ক্ষেত্রেও অশ্বগন্ধা একটি কার্যকর ওষধু। অশ্বগন্ধার মূল অন্তর্ধুমে পুড়িয়ে (ছোট মাটির হাঁড়িতে মূলগুলো ভরে সরা দিয়ে ঢেকে পুনঃমাটি লেপে শুকিয়ে ঘুটের আগুনে পুড়ে নিতে হয়। আগুন নিভে গেলে হাঁড়ি থেকে মূলগুলো বের করে গুঁড়ো করে নিতে হয়) ভালো করে গুঁড়িয়ে নিয়ে আধা গ্রাম মাত্রায় একটু মধুসহ চেটে খেলে ক্রনিক ব্রংকাইটিসে উপকার হয়।
মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতা, যেমন মাথা ঝিমঝিম করে ওঠা, সংজ্ঞাহীনতা, অবসাদ প্রভৃতি দূর করে অশ্বগন্ধা। মনোযোগ বাড়ায়। ক্লান্তি দূর করে সঞ্জীবনী শক্তি পুনরুদ্ধার করে।
অম্বল-অজীর্ন, পেট ফাঁপা এবং পেটের ব্যথা নিরাময় সহ যকৃতের জন্য ভীষণ উপকারী অশ্বগন্ধার ফল। হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে অশোধিত অশ্বগন্ধা গুঁড়ো বা পাউডার হজমে গোলমাল সৃষ্টি করে। এর ফলে তলপেটে ব্যথা উঠতে পারে। সুতরাং যাদের হজমশক্তি দুর্বল, তাদের অবশ্যই ভালো মানের অশ্বগন্ধা সেবন করতে হবে।
লেখাঃপুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান