ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে কেন এতো বিতর্ক?

Date:

Share post:

নবাব এবং বস-টু ছবির পোস্টারছবির কপিরাইট ইউটিউব
Image caption নবাব এবং বস-টু ছবির পোস্টার

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার দুটি ছায়াছবিকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্রসেবীদের একটি অংশের দাবির মুখে বাংলাদেশ সরকার নতুন করে যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই নীতিমালা প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত যৌথ প্রযোজনার সিনেমা তৈরি স্থগিত থাকবে বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ঈদের সময় ‘বস-টু’ এবং ‘নবাব’ নামের দুটি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত।

বাংলাদেশী শিল্পীদের একটি অংশ মনে করে যৌথ প্রযোজনার নামে কলকাতার বাংলা সিনেমাকে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেবার একটি চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং চলচ্চিত্র নায়ক জায়েদ খান বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন।

‘বস-টু’ এবং ‘নবাব’ সিনেমা বাংলাদেশে মুক্তির বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন।

মি. খান মনে করেন, যৌথ প্রযোজনার সিনেমার ক্ষেত্রে দু’দেশের শিল্পী এবং কলাকুশলীদের সমান অংশগ্রহণ থাকলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প লাভবান হবে।

তিনি বলেন, “আমরা যৌথ প্রযোজনার সিনেমার বিরুদ্ধে নই। যৌথ সিনেমার নাম ভাঙিয়ে যেন কলকাতার সিনেমাগুলো যেন বাংলাদেশের হল দখল করতে না পারে।”

“যৌথ সিনেমার ক্ষেত্রে দু’দেশের মুখ্য শিল্পী সমান সংখ্যক হতে হবে। লোকেশন এবং কলাকুশলীও সমানুপাতিক হারে হতে হবে।”

ছবির কপিরাইট বিবিসি
Image caption বস-টু ছবির একটি নাচের দৃশ্য

আরো দেখুন:

আসাম থেকে ধেয়ে আসছে বন্যার জল

কেন ভারতে গো-রক্ষার নামে মানুষ হত্যা বন্ধ হচ্ছেনা?

যৌথ প্রযোজনার সাথে সম্পৃক্তরা বলছেন, এ ধরনের সিনেমাগুলো দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র সিনেমা তৈরির সাথে সম্পৃক্ত।

গত তিন বছরে এ প্রতিষ্ঠান যৌথ প্রযোজনার ১২টি সিনেমা তৈরি করেছে।

বর্তমানে আরো পাঁচটি এ ধরনের সিনেমা তৈরির কাজ চলছে।

যৌথ প্রযোজনার সিনেমা তৈরি হলে সিনেমা হল মালিকরা খুশি থাকে বলে উল্লেখ করেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলিমুল্লা খোকন।

তিনি বলেন, হল মালিক এবং কর্মচারীরা তখন বাঁচবে যখন তার হলে দর্শক থাকবে।

গত দুই বছরে একমাত্র আয়নাবাজি ছাড়া অন্য কোন দেশি চলচ্চিত্র ২০% পয়সাও উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারে নাই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তার ধারণা, যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ বন্ধ হলে বাংলাদেশের অধিকাংশ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাবে।

চলচ্চিত্র সমালোচক এবং বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলোতে এখনো যে স্বল্পসংখ্যক দর্শক আছে তাদের টিকিয়ে রাখতে এ ধরনের চলচ্চিত্র ভূমিকা রয়েছে।

কারণ, নির্মাণ শৈলীর দিক থেকে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রগুলো বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের তুলনায় এগিয়ে আছে।

চলচ্চিত্র সমালোচক-বিশ্লেষক এবং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক জাকির হোসেন রাজু মনে করেন, যৌথ প্রযোজনা চলচ্চিত্রের জন্য নিয়মকানুন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে কলকাতার বাংলা সিনেমা বাংলাদেশের বাজার দখল করে নিচ্ছে।

তিনি বলেন, “শিল্পী সমাজের অনেকেই গোঁড়া থেকেই জানতেন যে পুরো বিষয়টা এক অর্থে প্রতারণামূলক। কিন্তু তারা সবাই সেখানে তখন পার্টিসিপেট করেছেন। কিন্তু যখন তারা দেখছে যে তাদের পার্টিসিপেশনটা আশানুরূপ হচ্ছে না, তখন তারা এ অভিযোগ উত্থাপন করছে।”

বিদেশি সিনেমা বন্ধের মাধ্যমে গত চার দশক যাবত বাংলাদেশী চলচ্চিত্রকে সুরক্ষা দেয়া হলেও সেটি কতটা উন্নতি করতে পেরেছে সে বিষয়টিও ভেবে দেখার সময় হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...