মাদকের বিস্তার ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে চোরাকারবারিদের মেরে ফেলার পথ বেছে নিয়েছে, তা স্বীকার করে নিলেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান;বললেন,এটাই সবচেয়ে কার্যকর পথ।

Date:

Share post:

মাদের বিস্তার ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে চোরাকারবারিদের মেরে ফেলার পথ বেছে নিয়েছে, তা স্বীকার করে নিলেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মাহাবুবর রহমান;বললেন,এটাই সবচেয়ে কার্যকর পথ।

তিনি বলেছেন,“ধর্মীয় উপদেশও কাজ হবে না। বড় ভাই বলে মাথায় হাত বুলিয়েও কাজ হবে না। সবচেয়ে বড় কাজ হবে যেটা হচ্ছে জীবনহানি। বাস্তব অর্থে জীবনহানি।”

সরকার সারা দেশে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার পর চার মাসে আড়াইশর বেশি মানুষ কথিত বন্দুকযুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের পুলিশ প্রধানের এমন মন্তব্য এল।

চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা কমিউনিটি পুলিশের মাদকী সমাবেশ উপলক্ষে নগরীর মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে এ অনুষ্ঠানে নগর পুলিশের কমিশনার ছিলেন প্রধান অতিথি।

তিনি যখন মাদরোধী ানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার সমর্থনে যুক্তি তুলে ধরছিলেন, করতালি দিয়ে তার বক্তব্যকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন মিলনায়তনে উপস্থিত কমিউনিটি পুলিশ ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।

মাহাবুবর রহমান বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা যে মাদকের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছি; আমি মনে করি এর মেইন বিষয় হচ্ছে উপদেশ দিয়ে কাজ হবে না।”

এ বিষয়ে তার যুক্তি, য়ী যদি চিন্তা করে যে এ ব্যবসা করলে তার জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাহলে সে অবশ্যই এ ব্যবসা থেকে অন্য ব্যবসায় চলে যাবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত মে মাসে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর প্রায় প্রতি রাতেই কথিত বন্দুকযুদ্ধে ‘মাদক বিক্রেতাদের’ নিহত হওয়ার খবর আসছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে মাদক চোরাকারবারিদের দমন করছে- তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারের এসব ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করে তা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে তারা।

অন্যদিকে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। মাদকের সঙ্গে যুক্ত কেউ ছাড় পাবে না, সে যেই হোক না কেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলে আসছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত এই ‘অল আউট যুদ্ধ’ চলবে।

অভিযানে মৃত্যুর ক্ষেত্রে অধিকাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, ারিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে গুলি করায় পাল্টা গুলি চালাচ্ছে পুলিশ বা র‌্যাব, তাতে ঘটছে মৃত্যু।

এবং আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার করা ‘শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের ‘ ধরে অভিযান চালাতে গিয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ভুল মানুষের মৃত্যুর খবরও সরকারের এই অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার বলছেন, মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের সুরক্ষার জন্য অস্ত্র রাখে। এ অস্ত্র উদ্ধারে যেভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যাচ্ছে তাতে অনেক মাদক ব্যবসায়ীর ‘জীবন চলে যাচ্ছে’।

“আমি মনে করি এ ছাড়া কোনো গতি নাই।… জীবনহানি হতে হবে শান্তির জন্য। শান্তির জন্য আমরা অশান্তি চির দমন করব। তারা যদি অস্ত্র দিয়ে আমাদের মোকাবেলা করে, আমাদের অধিকার আছে অস্ত্র ব্যবহার করার জন্য। আমরা সেভাবে এগোচ্ছি।”

মাদকের কারবার এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে দাবি করে পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব বলেন, “এখন মাদক ব্যবসা হয় গোপনে। মোবাইল ফোনে কিংবা মোটর সাইকেলে ফেরি করে। আমাদের তৎপরতা আছে বলে সেটা সম্ভব হয়েছে।”

আগামীতে আরও কর্মসূচি আসছে এবং পুলিশ ‘আরও বেশি অ্যাকশন’ নেবে বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি।

কোতোয়ালি থানা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি এসএম শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ( ও অভিযান) আমেনা বেগম, দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্পাদক এমএ মালেক, প্যানেল হাসান মাহমুদ হাসনি ও বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা বক্তব্য দেন।

পুলিশের মধ্যেও মাদক চোরাকারবারে জড়িত কিছু লোক আছে মন্তব্য করে পুলিশ কমিশনার বলেন, “সিএমপিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সাত হাজার ফোর্স আছে। আমি অস্বীকার করব না আমাদের পুলিশ বাহিনীতে পাঁচ-দশজন লোক নাই। অবশ্যই আছে। আমরা চাই এ শয়তানগুলোকে আইডেন্টিফাই করতে।”

দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে পুলিশের তিনজন এসআইকে ইয়াবার কারবারের জন্য কারাগারে পাঠানোর কথাও অনুষ্ঠানে জানান নগর পুলিশ প্রধান।

তিনি বলেন, “এ পুলিশ সিএমপির না। আমি তাদের ওন করি না। আপনাদের জন্য যে শাস্তি পুলিশ সদস্যদের জন্য একই শাস্তি।”

মাদক নির্মূলে কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, “আমার পুলিশ ব্যর্থ হতে পারে। কিন্তু কেউ ইয়াবা ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকবে এটা হতে পারে না। যদি কেউ থেকে থাকেন তাহলে পুলিশের চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করে দেন। পুলিশের চাকরি মহৎ চাকরি।”

সীমান্তরক্ষী বাহিনী পাহারায় থাকার পরও মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে কীভাবে ইয়াবা দেশে ঢুকছে- সে প্রশ্নও তোলেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি থেকে গ্রেফতার

চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার (১৫ মার্চ)...

চট্টগ্রামে মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত’ ঘোষণা দিয়ে গণপিটুনি, নিহত ২

স্থানীয় প্রতিনিধি সোমবার (৩ মার্চ) রাত ১০টার দিকে উপজেলার কাঞ্চনা ছনখোলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- নেজাম উদ্দিন...

জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ; আহ্বায়ক নাহিদ, সদস্য সচিব আখতার

শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মানিকমিয়া অ্যাভিনিউতে নতুন রাজনৈতিক দল ও আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবের নাম ঘোষণা করেন জুলাই-আগস্ট...

গুলিবিদ্ধ অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ

সময় ডেস্ক বেশ কিছু নাটক করে বেশ অল্প সময়েই দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ। নাটকের পর্দায়...