এতে কোন সন্দেহ নেই যে অত্যধিক মদ্যপান মানুষের মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু যারা অল্পস্বল্প পান করেন, তাদের জন্য কি এ্যালকোহলের কোন উপকারিতা আছে? প্রথমেই কথা হলো, কতটুকু মদ্যপান করলে তাকে পরিমিত বা ‘মডারেট’ বলা যায়? অনেকেই আছেন যারা প্রতি সপ্তাহেই পান করেন, তবে তা পরিমাণে বেশি নয়।
পরিমিত মদ্যপান কাকে বলা হয়?
সাধারণভাবে সপ্তাহে ৭ থেকে ১৪ ইউনিট পর্যন্ত মদ্যপানকে ‘পরিমিত’ বলা হয়। এর মানে হলো: ছয় পাইন্ট সাধারণ-শক্তির বিয়ার বা সাত গ্লাস ওয়াইন। আর স্পিরিট অর্থাৎ হুইস্কি, জিন, রাম,ভদকা ইত্যাদির ক্ষেত্রে এই সীমা হচ্ছে সপ্তাহে ১৪ ইউনিট (১ ইউনিট মানে ১টি ‘ছোট পেগ’ এই হিসেবে) ।
ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশিকায় বলা হয় সপ্তাহে ১৪ ইউনিটের কম নিয়মিত মদ্যপান করলে তার স্বাস্থ্য ঝুঁকি হবে নিম্ন মাত্রার। যারা এর চেয়েও কম খান, তাদের বলা হয় লাইট ড্রিংকার।
প্রশ্ন হলো, পরিমিত মদ্যপান কি বিপদমুক্ত?
এর কোন সোজাসুজি জবাব দেয়া কঠিন। কারণ এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে তাদের ফলগুলো পরস্পর বিরোধী। কিছু গবেষণায় বলা হয়, দিনে দুই ইউনিট পর্যন্ত লাল ওয়াইন পান করা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু এ নিয়ে অন্য কিছু বৈজ্ঞানিকের সংশয় আছে।
বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়, অধিক মদ্যপায়ী বা একেবারেই মদ্যপান করেন না এমন লোকদের তুলনায় পরিমিত মদ্যপায়ীদের মধ্যে বেশি বয়েসে স্মৃতিভ্রংশ বা ডেমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি সর্বনিম্ন।
কিন্তু এর কারণ এমনও হতে পারে যে এটা স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করেন, ধূমপান করেন না, বা স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান। কিন্তু অন্য এক জরিপে বলা হয়, পরিমিত মদ্যপানও ডেমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে পরস্পরবিরোধী এসব জরিপের ওপর কতটা আস্থা রাখা যায় তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।
এ্যালকোহলে মস্তিষ্কের কি ক্ষতি হয়?
এ্যালকোহল পান করলে মানুষের রক্তচাপ ও রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে যে রক্তনালী – সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যার ফলে স্মৃতি লোপ পেতে পারে। এতে ডেমেনশিয়ার ঝুঁকি তিন গুণ বেড়ে যায় বলে ফ্রান্সের একটি সাম্প্রতিক জরিপে বলা হয়। আরেকটি জরিপে বলা হয়, প্রতি সপ্তাহে ১৮ ইউনিটের বেশি যারা পান করেন তাদের আয়ু চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
মদ্যপানের কোন ‘নিরাপদ’ সীমা আছে কিনা সেটাও অনেকের মতো একটা প্রশ্ন। ব্রিটেনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেছেন, যে কোন মাত্রার এ্যালকোহল পানের কিছু না কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে।