রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেরি হলে কী করবে বাংলাদেশ?

Date:

Share post:

সাহায্য নিতে জড়ো হয়েছে রোহিঙ্গা শিশুরা। ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption সাহায্য নিতে জড়ো হয়েছে রোহিঙ্গা শিশুরা।

বিশ্বের যেসব দেশে বিপুল সংখ্যায় শরণার্থী অবস্থান করছে বাংলাদেশ তার একটি। কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছেন।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে এতো সংখ্যক শরণার্থীর জন্য আন্তর্জাতিক যেসব সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে সেটি আসলে কতদিন পাওয়া যাবে? তাদেরকে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কাজে দেরি হলে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে? বাংলাদেশের অর্থনীতি কি পারবে সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে?

গত বছরের অগাস্ট মাস থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নেমেছিল বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্তে। জাতিসংঘ বলছে, গত এক দশকে এটিই শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় স্রোত।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে প্রাণ বাঁচাতে এ দফায় বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে সাত লাখেরও বেশি শরণার্থী। আগে থেকেই ছিলো আরো চার লাখ। সবমিলিয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এখন প্রায় এগারো লাখ।

বাংলাদেশের শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এসব শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা মিললেও বাংলাদেশকেও ব্যয় করতে হচ্ছে প্রচুর অর্থ।

তিনি বলেন, “প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মতো সহায়তা এসেছে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে। তা দিয়েই আসলে প্রথম ছয় মাস পার করা গেছে। এর বাইরে জিআরপি বা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে বাংলাদেশকে ৯৫১ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। সেখান থেকে ২০ভাগ সহায়তা পাওয়া গেছে। আরও কিছু অর্থ পাইপলাইনে আছে।”

ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption বর্তমানে ১১ রাখের মতো রোহিঙ্গা আছে বাংলাদেশে।

আরো পড়তে পারেন:

সেনেগালের যে গোলটি নিয়ে বিতর্ক

বিশ্বকাপ ২০১৮: রাশিয়ার জন্মহার বাড়াবে ফুটবল?

রাশিয়ায় এখন পর্যন্ত নজর কেড়েছেন কারা

খেলা শেষে জাপান সমর্থকরাই পরিষ্কার করলো স্টেডিয়াম

সৌদিতে যেভাবে গাড়ি চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে মেয়েরা

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, এই হিসেবের বাইরেও রোহিঙ্গাদের পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে সরকার। কক্সবাজার ও টেকনাফের শরণার্থী শিবির থেকে তাদেরকে যে ধীরে ধীরে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার জন্যে বরাদ্দ করা হয়েছে দু’হাজার কোটি টাকা।

মি. কালাম অবশ্য বলছেন, শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোই মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশের এবং সেজন্য জোর তৎপরতাও চালানো হচ্ছে।

তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে এখন সহায়তা মিললেও প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হলে কী হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন গবেষক ও অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ।

তিনি বলেন, “সাহায্য সহযোগিতার কিছুটা হয়তো অব্যাহত থাকবে আগামী কয়েক বছর। বিশেষ করে উন্নয়ন সহযোগীদের মাধ্যমে যেসব সাহায্য আসে সেগুলো আসবে। কিন্তু বেশি আসে সাময়িক সহায়তা। এটা কিন্তু অব্যাহত থাকে না।”

“বিশ্বের অন্যান্য যেসব শরণার্থীরা অবস্থান করছে সেসব দেশেও এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা গেছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাদের জন্য খাদ্য থেকে শুরু করে সবই লাগবে,” বলেন তিনি।

নাজনীন আহমেদ বলছেন খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশকেও বড় ধরনর বিনিয়োগ করতে হচ্ছে যার প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে।

ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption ত্রাণ বিতরণ করছেন তুর্কী প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম।

তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি ও এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড: মুহাম্মদ দানেশ মিয়া বলছেন, রোহিঙ্গা সংকট আরও বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে এসেছে কক্সবাজার অঞ্চলের কৃষি, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্রের ক্ষেত্রে।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের এই মানবিক ভূমিকার মূল্য দিতে হচ্ছে বন ও পরিবেশ ধ্বংস করে। কৃষি ধ্বংস হচ্ছে। স্থানীয়দের আয় রোজগারে বড় সমস্যা তৈরি করছে। পরিবেশ ও অর্থনীতি নিয়ে তৈরি হয়েছে ভয়ানক পরিস্থিতি।”

এরকম পরিস্থিতিতে প্রায়শই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নানা প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসছেন। চলতি মাসের শেষে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শফিকুল আজম বলেছেন, তাদের কাছে নতুন করে সহযোগিতা চাওয়ার কিছু নেই।

“বিশ্বব্যাংক সাহায্য দিতে চেয়েছে। তারা অনুদান দিতে রাজী হয়েছে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের মতো। প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্য খাতে ৫০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা শেষ হয়েছে। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ ও আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণসহ অন্য ক্ষেত্রে আরও প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার দেবে। এগিয়ে আসছে এডিবিও। এবার বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট আসবেন জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে। এখানে নতুন করে সহায়তা চাইবার কিছু নেই।”

কিন্তু অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলছেন, বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলোর এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে আরও এগিয়ে আসা উচিত।

তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে যে কোন বাণিজ্য চুক্তির সময় রোহিঙ্গা ইস্যুকে কাজে লাগালে ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করতে পারে বাংলাদেশ।

Source from: http://www.bbc.com/bengali/news-44547481

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...

চিত্র নায়িকা নিপুণ চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি। জানা গেছে,...