রিমু-বিপাশা আর ৭ বছরের অনিরুদ্ধের শেষ অবকাশ

Date:

Share post:

নেপালে সোমবারের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২৮ জন বাংলাদেশির শবদেহ এখন কাঠমান্ডুর একটি হাসপাতালে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকার সোবহানবাগের রফিক জামান রিমু, তার স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা এবং তাদের সাত বছরের ছেলে অনিরুদ্ধ জামান।

রফিক জামান প্রতিবন্ধীদের নিয়ে করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সানজিদা হক হাঙ্গার প্রজেক্ট নামে একটি এনজিওতে কাজ করতেন। অনিরুদ্ধ ধানমন্ডির অরণি স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র।

কাজের ব্যস্ততায় পরস্পরকে নিজেদের সময় দিতে পারছিলেন না রফিক জামান এবং সানজিদা হক । তাই বন্ধুদের পরামর্শেই সাত বছরের ছেলে অনিরুদ্ধকে নিয়ে নেপালে বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

জামান দম্পতির ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুমন জাহিদ বিবিসিকে বলেন, “ব্যস্ততার কারণে স্বামী স্ত্রী নিজেদের সময় দিতে পারছিলেন না। আমরা বন্ধুরাই তাদের চাপ দিচ্ছিলাম কোথাও থেকে কয়েকদিন ঘুরে আসতে।”

কেন সেই পরামর্শ তারা দিয়েছিলেন, তা নিয়ে কিছুটা অনুশোচনা হচ্ছে বন্ধু সুমনের।

ঢাকায় সোবহানবাগে রফিকের বাড়িতে এবং যশোরে সানজিদার বাড়িতে গতকাল (সোমবার) থেকেই গভীর শোকের ছায়া। অনেক সাংবাদিকরা ভিড় করলেও কেউ কথা বলতে চাইছেন না ।

রফিকের এক মামা গেছেন কাঠমান্ডুতে শবদেহ আনতে।

সুমন জাহিদ জানালেন, তার মাকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। কানাডা প্রবাসী বড় ভাই বুধবার দেশে আসছেন। তিনিই হয়তো আমাকে বলবেন।ল্যান্ড করা নিয়ে কি বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল?’

জনপ্রিয় দম্পতি

সুমন জাহিদ জানালেন, ঢাকা কলেজে পড়ার সময় থেকেই ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন রফিক জামান। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে জিয়া ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হন।

পরে অবশ্য রাজনীতির তার দূরত্ব তৈরি হয়, এবং ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়েন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। স্লোগান ৭১ নামে একটি সংগঠনও গড়ে তুলেছিলেন তিনি।

“১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ ছিলেন রফিক। কারো কোনো সমস্যা হলেই সমাধানে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। সে কারনে জুনিয়র সিনিয়র সবাই তাকে বস বলে সম্বোধন করতো।”

সমাজসেবার প্রতি আগ্রহ থেকেই পেশা হিসাবেও প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন রফিক।

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সূত্রেই ক্যাম্পাসেই পরিচয় এবং পরে প্রণয় সানজিদা হকের সাথে।

“অসামান্য মেধাবী এবং ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলো বিপাশা। অনেক কাজ করতো, কিন্তু তা নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করতো না।”

বছর দুয়েক আগে বিপাশার মা ক্যানসারে মারা যান। বাবা বেঁচে আছেন। যশোরে থাকেন তিনি।

“অনিরুদ্ধ ছিল সংসারের কেন্দ্রবিন্দু। ভীষণ প্রাণবন্ত এবং একইসাথে অনুভূতিপ্রবণ ছিল বাচ্চাটা। আমরা প্রতি বছর ১৫ ডিসেম্বর রাতে টিএসসিতে ফানুস ওড়াই, বিশাল একটি পতাকা তৈরি করি। সারাক্ষণ এই বাচ্চাটিও আমাদের সাথে থাকতো…ওর মুখটা মনে হলেই মন ভেঙে যাচ্ছে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...