বাংলাদেশে গত দশ বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে

Date:

Share post:

বাংলাদেশে মৎস্য অধিদপ্তরের দেয়া হিসেব মতে ২০০৭ সালে প্রায় তিন লক্ষ মেট্রিক টন ধরা পড়েছিলো। সর্বশেষ মৌসুমে তা পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টনের মতো হয়েছে।

অর্থাৎ বাংলাদেশ গত দশ বছরে অনেক বেড়েছে ইলিশের উৎপাদন। কিভাবে তা হলো?

লৌহজং লার কনকসার গ্রামের জেলে মধু মালো। খুব উচ্ছ্বাসের সাথে বলছিলেন আগের থেকে ইলিশ এখন অনেক বেশি পাওয়া যায়।

তিনি বলছেন, “দশ বছর আগে যা আপনার দেখছেন, তার ডাবল পাই এখন। এখন ধরেন মাস জালই বাইতে পারবে না জেলেরা। জাটকা ধরতে পারবে না। দশ ইঞ্চির নিচে ছোট ইলিশ ধরতে পারবে না। কিন্তু তাতে অনেক ইলিশ বাড়ছে। জেলেরা ভাত খাইয়া ভালো আছে।”

তিনি ইলিশ প্রধান এলাকার জেলে। মধু মালো খুব সহজ ভাষায় যে কথাটি আসলে বলতে চেয়েছেন তা হলো, গত দশ বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

ি হিসেবও তাই বলে। বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের দেয়া হিসেব মতে ২০০৭ সালে দু লক্ষ ৯০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছিলো। সর্বশেষ মৌসুমে তা পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টনের মতো হয়েছে। >বাংলাদেশে ইলিশ প্রধান জেলা হল ১৭ টি। সেখানে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীতে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে – যেমন সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এবং মার্চ-এপ্রিলে ের মৌসুমে – মা ইলিশ আর অপ্রাপ্তবয়স্ক জাটকা ইলিশ ধরা নিষেধ।

চাঁদপুরে ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলম মল্লিক বলছেন, জেলেদের এসব মৌসুমে ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকা আসলে কি ভূমিকা রেখেছে।

তিনি বলছেন, “ইলিশ মাছ বড় হলে সেই বড় মাছ আমরাই ধরবো। মা ইলিশ প্রচুর পরিমাণে ডিম ছাড়তে পারে। একটা মা ইলিশ চার থেকে পাঁচ লক্ষ ডিম ছাড়ে। সেগুলো যদি আমরা না ধরি – তাহলে প্রচুর জাটকার জন্ম হবে।” আর জাটকার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

জাতীয় মাছ ইলিশ নিয়ে বাংলাদেশের অনেক গর্ব। জাটকা ও মা ইলিশ মাছ শিকার আর কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকারের কারণে ২০০৩ সালের দিক থেকে বাংলাদেশে ইলিশ সংরক্ষণের কার্যক্রম চলছে।

কিন্তু জেলেদের উপরে নানা নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের জীবন ও জীবিকা মারাত্মকভাবে হচ্ছিলো। সরকারের মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ইলিশ বিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বলছেন, নানা ধরনের খাদ্য সহায়তা দিয়েই জেলেদের ইলিশ ধরা থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

তিনি বলছেন, “যে সময়টুকু তারা মাছ ধরতে পারে না সে সময়টুকুতে তাদের প্রণোদনা হিসেবে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। যার ফলে তারা নিজেরাই ইলিশ য় মোটিভেটেড হয়েছে”

তিনি নিজেই বলছিলেন, জাটকা ও মা মাছ আহরণে বিরত রাখার জন্য জেলেদের শুতে কোনো ধরনের সহায়তা দেয়া হতো না। কিন্তু কিছুদিন ধরে সেটি দেয়া শুরু হয়েছে।দেশের ইলিশ প্রধান ৮৫ টি উপজেলায় দুই লক্ষ ৩৮ হাজার জেলে পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি করে চার মাস ধরে চাল দেয়া হয়েছে। আর তার একটি ফল হলো, ইলিশের বিচরণও অনেক গুণ বেড়েছে – বলছিলেন ইলিশ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক নিয়ামুল নাসের।

তিনি বলছেন, “যে কাজ ২০০৩ সাল থেকে আমরা করছি তার একটা ইমপ্যাক্টটি কিন্তু খুব ভালোভাবে এখন দেখা যাচ্ছে। এদের বিচরণভূমি বেড়ে গেছে। এখন পদ্মা মেঘনা যমুনা ব্রহ্মপুত্র এমনকি হাওড় পর্যন্ত তাদের পাওয়া গেছে। তার মানে সংরক্ষণের প্রভাব পড়েছে”

মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ পর্যবেক্ষণ সেলের হিসেবে ১৫ বছর আগে দেশের ২৪ টি উপজেলার নদীতে ইলিশের বিচরণ ছিল। এখন দেশের অন্তত ১২৫ টি উপজেলার নদীতে ইলিশের বিচরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তবে জলবায়ু পরিবর্তন, নদীতে সৃষ্ট বহু চর ও বো চর এবং পদ্মা ও মেঘনার নাব্যতা হ্রাস পাওয়ার কারণে সমুদ্র থেকে ইলিশের মিঠা পানিতে আসতে বাধা ও ইলিশের গতি পথ পরিবর্তন হচ্ছে।

মাছের ওপর তা কি প্রভাব ফেলে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে নিহত ২

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে দু’জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন- গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন...

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা নিয়ে সরকারের কঠোর বার্তা

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার (১৬ জুলাই)...

শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার আমাদের সরকারের আমলেই সম্পন্ন হবে

‘শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার আমাদের আমলেই সম্পন্ন হবে’ বলে জানিয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক...

মুজিববাদীরা আজ বাধা দিয়েছে, দ্বিগুণ গতিতে এর জবাব দেব : নাহিদ ইসলাম

মুজিববাদীরা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে গোপালগঞ্জকে কলুষিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন,...