বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন পড়ানো হয় না বাংলা

Date:

Share post:

বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বৃত্তি ঘোষণার পরেও তারা বাংলা বিভাগে শিক্ষার্থী পাচ্ছেন না বাংলাদেশের মানুষের মাতৃভাষা বাংলা হলেও, দেশটির বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই উচ্চ শিক্ষা হিসাবে বাংলা পড়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ সেখানে বাংলার জন্য কোন বিভাগই নেই।

এর কারণ হিসাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের আগ্রহের অভাবকে দায়ী করছেন।

বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য ড, মোঃ. আনোয়ারুল কবির বলছিলেন, কোর্স হিসাবে বাংলা পড়ানো হলেও, ক্যারিয়ার বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ না থাকার কারণেই বাংলা বিভাগ খোলা হয় না।

তিনি বলছেন, উদ্যোক্তা হিসাবে যারা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গঠন করেছেন, তারা ডিসিপ্লিন বা বিভাগগুলো খোলার ক্ষেত্রে দেখেছেন, কোন বিভাগগুলোর প্রতি বাজারের আগ্রহ আছে। কেননা, একজন ছাত্র ছয়লাখ সাত লাখ টাকা দিয়ে একটি বিষয়ে অধ্যয়ন করলো, এরপর বাজারে তারা জায়গাটা খুঁজে পেল না, সেটা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেমন দুঃখজনক, তেমনি তার ক্যারিয়ারের জন্যও হতাশার।

হয়তো একসময় যখন দেখা যাবে, শিক্ষার্থীরা এই পরিমাণ টাকা দিয়ে বাংলা সাহিত্য পড়তে আগ্রহী হবে, তখন হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এগিয়ে আসবে।কেন মাশরাফিকে টি২০-তে ফেরাতে চায় বিসিবি?

মি, কবির বলছেন, তবে শুধুমাত্র ক্যারিয়ারের দিকটি বিবেচনা নিয়েই নয়, বাংলা বিভাগে পড়তে হলে বাংলা সাহিত্যের প্রতি আলাদা একটা আগ্রহও থাকা দরকার। কিন্তু শুধু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও সেই আগ্রহে যেন কমতি দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৯৫টি। তার মধ্যে মাত্র ১৪টিতে বাংলার জন্য আলাদা বিভাগ রয়েছে।

কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগটি ভুগছে শিক্ষার্থী খরায়।

ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের রেজিস্টার অধ্যাপক ইফাত কায়েস চৌধুরী বলছেন, বৃত্তি ঘোষণার পরে ও তাদের এই বিভাগে তারা শিক্ষার্থী পাচ্ছেন না।

তিনি বলছেন, বাংলাদেশে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর মধ্যে সবার আগে আমরাই তিন চার বছর আগে থেকে বাংলা বিভাগ খুলি। প্রথম বছর থেকেই আমরা প্রথম ভর্তি হওয়া পাঁচজনের জন্য বৃত্তি ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কয়েকজন ছাত্র পেলেও, স্নাতক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীও পাইনি। আমাদের শিক্ষক আছে, ক্লাস আছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত স্নাতক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়নি।

এর কারণ হিসাবে তিনি মনে করেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ধারণা আছে যে, বাংলায় পড়ে ভালো চাকরি পাওয়া যাবে না। অথচ আমরা আমাদের নিজেদের স্কুল বা কলেজেই বাংলার জন্য ভালো শিক্ষক খুঁজে পাচ্ছি না।

বাংলা বিভাগ রয়েছে, এরকম আরো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খোজ নিয়ে জানা গেলো, সেখানেও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কিছু কর্মজীবী শিক্ষার্থী থাকলেও, স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা একেবারেই হাতে গোনা।

বাংলায় উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন, এরকম একজন ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা সোহানা ইয়াসমিন।

তিনি বলছেন, আমি বাংলায় অনার্স মাস্টার্স করে দেখলাম, স্কুল কলেজ আর সরকারি চাকরির এর চাহিদা কম। বিসিএসের চেষ্টাও করেছি। কিন্তু সেটি না হওয়ায় পরে ম্যানেজমেন্ট আর ইংরেজির উপর কয়েকটা শর্ট কোর্স করে এখন গার্মেন্ট সেক্টরে কাজ করছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের আগ্রহের অভাব থাকার কারণেই বাংলা বিভাগ খোলা হয় না

তবে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া একজন ছাত্র শাহরিয়ার হোসেন বলছেন, আমি শিক্ষকতাতে পেশা হিসাবে নিতে চাই। তাই বাংলা বেছে নিয়েছি, যাতে এর পাশাপাশি আমি পার্টটাইম চাকরিও করতে পারি, আর পড়তে খরচও কম লাগে।

সরকারি একটি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল হক অবশ্য মেধা তালিকায় বাংলা পেয়েছেন। তিনি ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনি খুব বেশি মাথা না ঘামিয়ে আপাতত পড়াশোনা শেষ করতে চান।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বাংলা বিভাগের সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাদের কেউ কেউ এই বিভাগটি যেমন বেছে নিলেও, বেশিরভাগই মেধা তালিকার কারণেই বাংলায় পড়াশোনা করেছেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলার প্রতি এই অনাগ্রহের বিষয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য মোঃ. আখতার হোসেন বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে বেসরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই সংস্কৃতি এখনো হয়নি। এগুলো যেমন বাংলাদেশের শিক্ষায় অনেক অবদান রাখছে, তেমনি আবার তারা এমন সব বিষয়ে বিভাগ খুলতে চান, যেগুলো শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি। তবে প্রোগ্রাম হিসাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রাম হিসাবে বাংলা খুলেছে। পুরোপুরি বিভাগ হিসাবে খুলতে হয়তো আরো খানিকটা সময় লাগবে।

তবে পুরোপুরি বিভাগ খুলতে বাধ্য করতে না চাইলে, অন্তত একটি কোর্স হিসাবে বাংলাকে ছড়িয়ে দিতে চায় মঞ্জুরি কমিশন।

এজন্য বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে তারা একটি কোর্স তৈরি করেছেন, যা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে, সব বিভাগেই পড়ানো হবে। এ বছর থেকেই এই কোর্সটি পুরোদমে চালু হবার আশা করা হচ্ছে।

কমিশনের আশা, এর মাধ্যমে অন্তত সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে বাংলাকে পৌঁছে দেয়া যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...