সাবিত্রী দেবী: যিনি হিটলারকে বলতেন ‘বিষ্ণুর অবতার’

Date:

Share post:

সাত্রী দেবী ভারতীয় পোশাকে। তবে আসলে তিনি ছিলেন একজন ইউরোপিয়ান

ইউরোপ-আমেরিকায় যথন উগ্রদক্ষিণপন্থী যথন নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে – তখনই ইন্টারনেটে নব্যনাৎসীদের নানা লেখালিখি-আলোচনাতে বার বার উঠে আসতে শুরু করেছে একটি রহস্যময়, প্রায়-বিস্মৃত নারীর নাম – সাবিত্রী দেবী।

কে এই সাবিত্রী দেবী?

তিনি ছিলেন একজন আর্য-শ্রেষ্ঠত্ববাদী লেখিকা, যিনি মনে করতেন – হিটলার হচ্ছেন হিন্দুদের ভগবান বিষ্ণুর একজন অবতার – যিনি পৃথিবীতে কলি যুগের অবসান ঘটাবেন।

সাবিত্রী দেবী বলতেন, হিটলার জার্মানির নেতা হলেও যেহেতু তিনি ইউরাপ থেকে ইহুদিদের নির্মূল করে আর্য নৃগোষ্ঠীকে তার শ্রেষ্ঠত্বে আসনে বসাতে চেয়েছিলেন -তাই হিটলারকে কি তার নিজেরও নেতা বা ‘ফুয়েরার’ মনে করেন।

নীল শাড়ি পর সাবিত্রী দেবীর ছবি দেখলে তাকে দেখে মনে হবে তিনি একজন ভারতীয় হিন্দু নারী।

কিন্তু আসলে মোটেও তা নয়। আর্য শ্রেষ্ঠত্ববাদী

তিনি একজন ইউরোপিয়ান। তার আসল নাম ম্যাক্সিমিয়ানি পোর্টাস – জন্ম ১০৯৫ সালে ফ্রান্সের লিয়ঁতে। তার মা ছিলেন ইংরেজ আর বাবা একজন গ্রিক-ইটালিয়ান।

আজকাল ইউরোপ-আমেরিকার নব্যনাৎসী ওয়েব-আলোচনাগুলোতে সাবিত্রী দেবীর নাম, তার বই ‘লাইটনিং এ্যান্ড দি সান’ বা ‘গোল্ড ইন দি ফার্নেস’-এর কথা প্রায়ই উঠে আসে।হিটলারের বই ‘মাই কাম্পফ’। সাবিত্রী দেবী মনে করতেন হিটলার বিষ্ণুর অবতার

এসব বইতে সাবিত্রী দেবী লিখেছিলেন, হিটলার ভগবান বিষ্ণুর অবতার, এবয় নাৎসীবাদ আবার জেগে উঠবে। আমেরিকান দক্ষিণপন্থী নেতা রিচার্ড স্পেন্সার বা স্টিভ ব্যাননের কল্যাণে সাবিত্রী দেবীর চিন্তাধারা এখন নতুন করে আবিষ্কৃত হচ্ছে।

সাবিত্রী দেবী একজন উগ্র গ্রিক জাতীয়তাবাদী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ম বিশ্বযুদ্ধের শেষে ১৯২০এর দশকে ।

তিনি কোন রকমের সমতার নীতিতে বিশ্বাস করতেন না। এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, “একজন সুন্দরী নারী কখনোই একজন কুৎসিত নারীর সমান হতে পারে না।”

সাবিত্রী দেবী মনে করতেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তির শিকার হয়েছে গ্রিস এবং জার্মানী উভয়েই। তিনি ছিলেন তীব্র ইহুদি-বিদ্বেষী – এবং তিনি বলতেন তিনি বাই থেকেই এটা শিখেছেন।ইউরোপ ও আমেরিকায় এখন উগ্র-দক্ষিণপন্থী নব্যনাৎসী গোষ্ঠীগুলো শক্তিশালী হচ্ছে

জাতীয়তাবাদ এবং ইহুদিবিদ্বেষ – এই দুটো মিলে তিনি নাৎসী অর্থাৎ ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট রাজনীতির সাথে তিনি একাত্মতা বোধ করতে থাকেন।

তিনি মনে করতেন ইহুদি-খ্রিষ্টানরাই গ্রিসের প্রাচীন গৌরব ধ্বংসের জন্য দায়ী।

আর্য জাতির বর্তমান অবা দেখতে তিনি ভারতে যান ১৯৩০ সালে ।তখন তার মনে স্থির ধারণা হয় যে ভারতে বর্ণাশ্রমপ্রথা, এবং অন্য বর্ণে বিবাহ নিষিদ্ধ হওয়ায় সেখানে আর্যদের বিশুদ্ধতা রক্ষা পেয়েছে।ফ্রাঁসোয়া ডিওর: তিনি সাবিত্রী দেবীর প্রেমিকা ছিলেন বলে দাবি করতেন

আমেরিকান বর্ণবাদী সংগঠন কু ক্লাক্স ক্লানের নেতা ডেভিড ডিউকও একইভাবে ১৯৭০ সালে ভারত করেছিলেন, এবং তিনিও সাবিত্রীর মতোই ধারণা পোষণ করতেন।

সাবিত্রী দেবী এর পর ভারতীয় ভাষা শেখেন এবং একজন ব্রাহ্মণকে বিয়েও করেন। এর পর তিনি নাৎসীবা এবং হিন্দুধর্মীয় উপকথাগুলো মিলিয়ে হিটলারকে একজন অবতার হিসেবে আখ্যায়িত করেন।নাৎসী প্রতীক স্বস্তিকাবিশিষ্ট কানের দুল পরা সাবিত্রী দেবী

ভারতের কোলকাতা শহরে ১৯৩০ সালে সাবিত্রী দেবী একটি হিন্দু মিশনের হয়ে কাজ করেছিলেন। মিশনের পরিচালক স্বামী সত্যানন্দও হিটলারভক্ত ছিলেন।সাবিত্রী দেবী ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ‘আর্য মূল্যবোধ’ বিষয়ে হিন্দি ও বাংলায় বক্তৃতা দিতিন, তাতে হিটলারের মাইন কাম্পফ বই থেকে উদ্ধৃতি দিতেন।

কিন্তু ১৯৪৫ সালে হিটলারের পতন হলো। সাবিত্রীর মন ভেঙে গেল, তিনি ইউরোপে ফিরে এলেন – শুরু করলেন লেখালিখি। তার বিভিন্ন বই ‘লাইটিং এ্যান্ড দ্য সান’, ‘লং হু্কার্স’ টু-লেগড গডেস’ – এগুলোতে তার নাৎসী চিন্তাধারা ৃত হয়েছে। নাৎসী সমর্থক লিফলেট বিলি করায় তিনি ১৯৪৮ সালে অধিকৃত জার্মানিতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেফতার হন।

সাবিত্রীর যৌন জীবনও ছিল রহস্যময়। অসিত মুখার্কে তিনি বিয়ে করলেও তারা একই গোত্রের না হওয়ায় তাদের মধ্যে নাকি কোন যৌনর্ক ছিল না।পরে নাৎসীদের অর্থসহায়তা দানকারী ফ্রঁসোয়া ডিওর নামে এক মহিলা দাবি করেছেন যে তিনি তার প্রেমিকা ছিলেন। শেষ জীবনে দিল্লিতে সাবিত্রী দেবী

শেষ জীবনে বেশি ভাগ সময়ই সাবিত্রী দেবী ভারতের দিল্লিতে থাকতেন। তবে তিনি মারা যান ইংল্যান্ডে। ‘পূর্ণ ফ্যাসিস্ট মর্যাদায়’ তার দেহভস্ম সমাহিত করা হয়।

ভারতে তার সাবিত্রী দেবীর কথা প্রায় কেউই মনে রাখে নি। তবে তার লেখায় যে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভাবনা ফুটে উঠেছে – আজকের ভারতে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির মূল দর্শন এটাই। ভারতের ী নরেন্দ্র মোদি

সাবিত্রী দেবীর একজন আত্মীয় বামপন্থী সাংবাদিক সুমন্ত ব্যানার্জি বলেন, “সাবিত্রী দেবী তার লেখায় হিন্দুত্বকে সুরক্ষিত রাখার যে কথা বলেছেন তার মূল লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে মুসলিমরা – যাদেরকে তিনি একটা হুমকি হিসেবে দেখতেন। আজকের ভারতের রাজনীতিতে তারই প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপিও দাবি করে, ভারতে মুসলিম ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা হিন্দু জাতিকে ‘দুর্বল করে দিয়েছে’।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

কে এই আশিক চৌধুরী

সময় ডেস্ক  পাইলট পরিবারের সন্তান আশিক চৌধুরী। পেশায় ব্যাংকার হলেও রপ্ত করেছেন বিমান চালানো। অন্তত অর্ধশত বার ঝাঁপ দেন...

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক

ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আধা ঘণ্টার...

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কিশোরী তাসনীম ইসলাম প্রেমা (১৮) মারা গেছে

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কিশোরী তাসনীম ইসলাম প্রেমা (১৮) মারা গেছে। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম...

পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে

দেখতে দেখতে রমজান শেষ হয়ে এলো। স্বভাবতই রমজান শেষে মহিমাময় পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা এবং চাঁদ দেখে...