চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং: সুবিধাভোগী ‘প্রিন্সলিং’ নাকি গুহাবাসী কৃষিমজুর?

Date:

Share post:

কোদাল হাতে মাঠে কাজ করতে চলেছেন তরুণ শি জিনিং। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় একাজ করতে হয়েছে অককেই।

একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বনেতাদের মধ্যে এমনকি কেউ আছেন যিনি ক্ষেতে কৃষি মজুর হিসেবে কাজ করেছেন কিংবা গুহায় থেকেছেন?

চীনের ্ট শি জিনপিং সম্ভবত এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম।

পাঁচ দশক আগে চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের তুমুল হট্টগোলের সময় পনের বছর বয়সী শি জিনপিং এক প্রত্যন্ত গ্রামে কঠিন জীবন যাপন করতেন।

শি জিনপিং চীনের যে অঞ্চলটিতে তখন কৃষি খামারে কাজ করেছেন, সেটি ছিল গৃহের সময় কমিউনিস্টদের শক্ত ঘাঁটি। ইয়ানানকে তখন বলা হয় চীনা বিপ্লবের ‘পবিত্র ভূমি’।

শি জিনপিং-কে ঘিরে এখন চীনে যে ‘মিথ’ বা গাঁথা তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে তাঁর অতীতের এই কষ্টের জীবনের নানা গল্প গুরুত্বের ে তুলে ধরা হচ্ছে।

কিন্তু শি জিনপিং কি আসলেই এরকম অতি সাধারণ পটভূমি থেকে উঠে এসেছেন?

সমালোচকরা বলছেন, মোটেই নয়। তিনি হচ্ছেন চীনের ‘প্রিন্সলিং’ প্রজন্মের একজন। কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চপদে আসীন ছিলেন এমন নেতাদের সুবিধাভোগী সন্তানদের ‘প্রিন্সলিং’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

শি জিনপিং যে চীনের প্রভাবশালী এক কমিউনিস্ট নেতার সন্তান হিসেবে এক সময় অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন, সেটাকে আড়াল করে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় তাঁর কষ্টসাধ্য জীবনের ছই তুলে ধরার সযত্ন চেষ্টা দেখা যায় চীনে।শি জিনপিং-কে ঘিরে মাও জেদং এর মত ‘মিথ’ তৈরি করা হচ্ছে

১৯৬৮ সালে চীনের নেতা মাও জেদং ঘোষণা করেন যে হাজার হাজার তরুণকে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের কষ্টসাধ্য জীবনের িজ্ঞতা নিতে হবে।

সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সেই উত্তাল সময়ে সব কিছুই চলছিল চেয়ারম্যান মাও এর ‘লাল বই’ অনুযায়ী।

শি জিনপিং এর বাবা ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম প্রজন্মের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের একজন। কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর তিনি বেড়ে উঠেছেন বেইজিং এ কমিউনিস্ট নেতাদের জন্য তৈরি সুরক্ষিত আবাসিক কমপ্লেক্সে।

কিন্তু ষাটের দশকে চেয়ারম্যান মাও যখন দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন, তার শিকার হন শি জিনপিং এর বাবা। তাঁকে জেলে পাঠানো হয়, তাঁর পরিবারকে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়।

১৩ বছর বয়সে শি জিনপিং এর স্কুল শিক্ষায় ছেদ পড়লো। বেইজিং এর রাস্তায় তখন রেড গার্ডদের দাপট। তারা রাস্তা-ঘাটেই যে কাউকে ধরে এনে বিচার বসাচ্ছে, সাজা দিচ্ছে। এই রেডগার্ডদের কবল থেকে শি জিনপিং-কে রক্ষার কেউ নেই। সেটা ছিল তার জন্য দুঃসময়।

কিন্তু শি জিনপিং এর জন্য আবার সুসময় ফিরে এসেছিল, যখন তাঁর বাবা আবার কমিউনিস্ট পার্টিতে পুনর্বাসিত হন। হংকং এর উল্টো পাশেই গুয়াংডং প্রদেশে বিরাট দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয় তাকে। শি জিন পিং এর বয়স তখন ২৫।

বাবার সুবাদে শি জিন পিং পার্টিতে খুব দ্রুত উন্নতি করতে থাকেন। স্ত্রী পেং লিউয়ানের সঙ্গে শি জিনপিং। একসময় তার সঙ্গীতশিল্পী স্ত্রী ছিলেন বেশি খ্যাতিমান।

এক সময় গড়ে তোলেন নিজের ক্ষমতা বলয়।

সত্তরের দশকের শেষার্ধে তিনি ছিলেন পিপলস লিবারেশন আর্মির একজন অফিসার।

তারপর বিভিন্ন প্রদেশে পার্টির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ধীরে ধীরে পার্টির উপরের দিকে উঠতে থাকেন তিনি।

তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন একজন কূটনীতিকের কন্যা। কিন্তু সেই বিয়ে টেকেনি।

এরপর তিনি যখন চীনের সুপরিচিত এক সঙ্গীত শিল্পীকে বিয়ে করেন, সেটি বেশ প্রচার পেয়েছিল। তখন অবশ্য শি জিনপিং কে কেউ চিনতো না। একটি মজার রসিকতাও ছড়িয়ে পড়েছিল সে সময়।

“শি জিনপিং কে? উত্তর: তিনি পেং লিউয়ানের স্বামী।”

পেং লিউয়ান এখনো শি জিনপিং এর স্ত্রী। তার নাম চীনের বাইরে খুব কম মানুষই জানেন।

কিন্তু শি জিন পিং এর নাম জানে এখন গোটা বিশ্ব। বলা হচ্ছে, তিনি এই মূহুর্তে র সবচেয়ে ক্ষমতাশালী একজন রাষ্ট্রনেতা।

গত পাঁচ বছরে ক্ষমতায় থাকার সময় তার ব্যক্তিত্ব ঘিরে তৈরি করা হয়েছে এক বিরাট ‘কাল্ট’। আর এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে তার সেই কৈশোরের দুঃসময়ের কঠিন দিনগুলোর গল্প।

বেইজিং এ এখন কমিউনিস্ট পার্টির যে ্রেস চলছে, সেখানে তিনি আরও পাঁচ বছরের জন্য তাঁর নেতৃত্ব পাকাপাকি করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

শি জিনপিং এ বিষয়েও কোন রাখ-ঢাক করছেন না যে সামনের দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীন এক নম্বর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

ট্রাম্প কি ভারতের হাত ছেড়ে দিলেন?

ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাত, উত্তেজনা, শান্তি প্রক্রিয়া ও আগামী দিনের অনিশ্চয়তাগুলো নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের প্রভাবশালী ইংরেজি...

প্রকৃতি ধ্বংস করাকে উন্নয়ন মনে করলে ভুল পথে চলছি : রিজওয়ানা

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, প্রকৃতিকে ধ্বংস করে উন্নয়ন হলে সেটা টেকসই...

টিউলিপকে ফেরাতে যে সিদ্ধান্ত নিল দুদক

ব্রিটিশ সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশে দুর্নীতি মামলার আসামি টিউলিপ সিদ্দিককে দেশে ফেরাতে প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেওয়া হবে। বুধবার (১৪...

চবির সমাবর্তনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয়...