সহীহ এবং শুদ্ধ হুদা নামা” গোলাম মওলা রনি।

Date:

Share post:

আওয়ামীলীগের বেশির ভাগ লোকজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব নুরুল হুদার ওপর বেজায় ক্ষেপেছেন। প্রধান বিচারপতি জনাব সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই জনাব হুদার প্র এসে পড়ায় ক্ষমতাসীন দল একাধারে ক্ষুব্দ, বিষ্মিত এবং বিষন্নও বটে। আওয়ামীলীগের চীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত প্রয়াত প্রেসিডেন্ট এবং বি এন পির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান ে কিছু প্রশংসা বাক্য উচ্চারন করার কারনে জনাব হুদা সাম্প্রতিক রোষানলের ার হয়েছেন। তিনি জিয়াকে বহু দলীয় গন তন্ত্রের পুনঃ প্রতিষ্ঠাতা বলে প্রশংসা করেছেন। তার এই বক্তব্য বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবীর পক্ষ্যে একটি শক্তিশালী স্বীকৃতি হিসেবে যেমন কাজ করবে তেমনি আওয়ামীলীগের জন্য একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

দেশের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্টে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে যদি রাজনৈতিক দল ও শক্তি সমুহের স্তিত্ব রক্ষার লড়াই বলে বিবেচনা করা হয় তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা সি ই সি এই মুহুর্তে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি। বেশিরভাগ আওয়ামীলীগের লোকজন মনে করেন তিনি দলীয় লোক এবং দলের সিদ্ধান্তে এবং নেত্রীর অনুকম্পায় সি ই সি পদে মনোনীত হয়েছেন। অন্যদিকে, সি ই সি মনোনয়ন সম্পর্কে যারা প্রকৃত ঘটনা জানেন তারা বিষয়টিকে ‘এ্যাক্ট অব গড’ বলে মনে করেন যেমনটি ঘটেছে সাম্প্রতিক কালে জনাব সিনহার ক্ষেত্রে এবং নতুন বিচারপতি জনাব ওয়াহাব মিয়ার ক্ষেত্রে।

সি ই সি আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীদের তালিকায় ছিলেন না। সি ই সি মনোনয়নের জন্য গঠিত সার্চ কমিটি চুড়ান্ত পর্যায়ে নাটকীয় ভাবে জনাব হুদার নাম াব করে মুলত মহান মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনে তার গৌরবজনক এবং বীরত্বপূর্ন ভূমিকার কারনে। আওয়ামীলীগ তার মনোনয়ন মেনে নেয় তিনি তাদের দলীয় লোক, মুক্তিযোদ্ধা এবং বিএনপি কর্তৃক চাকুরীচ্যুত হবার কারনে। কিন্তু আওয়ামীলীগ জনাব হুদার পূর্বাপর অতীত সম্পর্কে বুদ্ধিদীপ্ত মূল্যায়ন করতে পারেনি। তিনি দলের একনিষ্ঠ সমর্থক হলেও অন্ধ, গোড়া বা কট্ররপন্থী নন। দ্বিতীয়তঃ সি ই সি পদে নিয়োগ লাভের পূর্বে তিনি দলের কোন উল্লেখ যোগ্য সুা ভোগী যেমন ছিলেন না তেমনি দলীয় পরিমন্ডলে তার পরিচিতি, যোগাযোগ এবং প্রভাব প্রতিপত্তি ছিলোনা বললেই চলে।

ব্যক্তিগত জীবনে জনাব হুদা সৎ, নির্ভিক এবং পরিচ্ছন্ন প্রকৃতির মানুষ। পুরো দক্ষিনাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তিনি অনুকরনীয় এবং সম্মানীত ব্যক্তি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তার পরিচয় কমান্ডার হুদা নামে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যে কয়টি সম্মুখ সমর হয়েছে তার মধ্যে সিলেটের তেলিয়াগাতি এবং পটুয়াখালীর পানপট্রির রনাঙ্গন খুবই বিখ্যাত। বেশির ভাগ সামরিক ও বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন । কিন্তু সম্মুখ সমরে পাকিস্তানী বাহিনীকে হটানোর ইতিহাস খুবই কম এবং সেই ইতিহাসের অন্যতম নায়কের নাম কমান্ডার হুদা। তার নেতৃত্বে পানপট্রির যুদ্ধে মুক্তিবাহীনী পাকিস্তানী হানাদারদেরকে পরাজিত এবং নির্মূল করেছিলো।

জনাব হুদা আমার নির্বাচনী এলাকার পাশের গ্রামের বাসিন্দা এবং পানপট্রি আমার এলাকা হবার সুবাদে তাঁকে আমি বেশ ভালোভাবেই চিনি। আমি এমপি থাকাকালীন সময়ে তিনি মাঝে মধ্যে আমার অফিসে আসতেন এবং আমার গ্রামের বাড়ীতেও থেকেছেন। তার সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন হলো – তিনি সঠিক পথেই এগুবেন এবং কোন রকম চাপ, তাপ বা লোভের ফাঁদে ফেলে তাকে দিয়ে কোন কাজ করানো যাবে না। তার ব্যাপারে সরকারী দলের হতাশ হবার কিছু নেই। কারন তিনি মনে প্রানে ্রী শেখ হাসিনার শুভার্থী এবং আওয়ামীলীগের প্রতি দরদী। জনাব হুদার সঙ্গে আমার সম্পর্কের বিভিন্ন পর্যায়ে আমি তাঁকে দুবার অ“সজল অবস্থায় দেখেছি। তার অশ্র“সিক্ত হবার সেই কাহিনী বললেই ক্ষেপে যাওয়া আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীবৃন্দ তার সম্পর্কে সহীহ এবং শুদ্ধ ধারনা লাভ করতে পারবেন।

প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিলো আমার নির্বাচনী এলাকায়। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় সড় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জনাব হুদা ছিলেন বিশেষ অতিথি এবং পদাধিকার বলে আমি ছিলাম প্রধান অতিথি। আমার বক্তব্যের এক পর্যায়ে আমি যখন বললাম – এই এলাকার সংসদ সদস্য এবং আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হবার কথা ছিলো জনাব হুদার। আমার বক্তব্য শুনে তিনি নীরবে মাথা নীচু করে অশ্র“ বিসর্জন করেছিলেন। তার সেদিনের সেই অশ্র“ এমপি পদ পদবী লাভের জন্য ছিলোনা। বরং তার কর্মের স্বীকৃতি দিয়ে যখন আমি তাঁকে সম্মানীত করার চেষ্টা করছিলাম তখন তিনি কৃতজ্ঞতার অশ্র“ বিসর্জন করছিলেন।

দ্বিতীয় ঘটনা ঘটেছিলো আমার হেড অফিসে সম্ভবত ২০১০ সালের দিকে । তখন পর্যন্ত তার ভূতাপেক্ষা পদন্নোতি হয়নি এবং কোন প্রতিষ্ঠানে সরকারী আনুকুল্যে নিয়োগ লাভ করেননি। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে বর্জ্য নিয়ে কনসালটেন্সী করার চেষ্টা করছিলেন। কথা প্রসঙ্গে আমি বললাম- এখন পর্যন্ত আপনার চাকুরী বা পদায়ন কিছুই হলো না ! তিনি অশ্র“সজল নয়নে বললেন- এম. পি সাহেব ! যুগ্ন সচিব পদে চাকুরী কালীন সময়ে বি এন পি সরকার যে অপমান করে চাকুরীচ্যুত করেছিলো তা ভুলবার নয়। ন্ধু কন্যা আজ দেশের প্রধান মন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগ আজ ক্ষমতায় এই কথা ভাবলে অতীতের অপমানের ক্ষতে যে প্রশান্তির ছোঁয়া লাগে তাই আমার জন্য যথেষ্ট- আমার অন্য কোন কিছুই লাগবে না।
লেখকঃগোলাম মওলা রনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে নিহত ২

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে দু’জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন- গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন...

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা নিয়ে সরকারের কঠোর বার্তা

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার (১৬ জুলাই)...

শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার আমাদের সরকারের আমলেই সম্পন্ন হবে

‘শহীদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার আমাদের আমলেই সম্পন্ন হবে’ বলে জানিয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক...

মুজিববাদীরা আজ বাধা দিয়েছে, দ্বিগুণ গতিতে এর জবাব দেব : নাহিদ ইসলাম

মুজিববাদীরা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে গোপালগঞ্জকে কলুষিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন,...