নির্বাচন কমিশনের সংলাপের পর সাংবাদিকদের সামনে বিএনপির নেতারা
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপে অংশ নিয়ে অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অবিলম্বে বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।
এখনই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দলগুলোর সাথে সরকারের সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের দাবি করেছে তারা। দলটির মহাসচিব বলেছেন, কমিশনের কিছু করার না থাকলেও এ সংলাপের পর তারা আশাবাদী।
শুরু থেকেই বিএনপির সমালোচনার মুখে থাকা প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের সাথে বিএনপির আজকের সংলাপটি ছিলো নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে।
আড়াই ঘন্টারও বেশি সময় ধরে সংলাপে অংশ নেয়ার পর বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে এখনই সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগেই নির্বাচনকালীণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে।”
“সব দলকে সভা সমাবেশের অধিকার দিতে হবে। দলগুলোর সাথে সরকারের সংলাপের উদ্যোগ কমিশনকে নিতে হবে। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগেই প্রতিরক্ষাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।”
মি. আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ ধরনের ২০ দফা দাবি তুলে ধরেছেন সংলাপে যার মধ্যে দলটির নেতাকর্মীদের সব মামলা প্রত্যাহার, যে কোন ধরনের ভীতি সঞ্চার বন্ধ, প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা।
পরে ব্রিফিংয়ে মি. আলমগীর মনে করিয়ে দেন, নির্বাচন কালীন সহায়ক সরকারই তাদের প্রধান দাবি। বিএনপির পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে যে তারা এ ধরনের নির্বাচন কালীন সরকারের একটি রূপরেখা প্রস্তুত করছে যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নেতারা বারবারই বলছেন নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীরই অধীনে।
রাজনীতির এমন বাস্তবতায় সংলাপে বিএনপির প্রস্তাবনার জবাবে কি বলেছে নির্বাচন কমিশন এবং সেটি তাদের কতটা আশাবাদী করছে ?
জবাবে মি. আলমগীর বলেন, “কমিশন বলেছে তাদের সীমাবদ্ধতা আছে। তারা বলেছেন তারা বসে দেখবেন তাদের কি কি সুযোগ আছে। বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের যে প্রচণ্ড অগণতান্ত্রিক আচরণ সেখানে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে বলে মনে করিনা।
তবে দাবি বাস্তবায়ন করা হবে কি-না তা নিয়ে খুব বেশি আশ্বস্ত না থাকলেও সিইসির সূচনা বক্তব্য কিছুটা মুগ্ধই করেছে বিএনপি নেতাদের।
কারণ ওই বক্তব্যে মি. হুদা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব দিয়েছেন তেমনি প্রশংসা করে বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় নতুন ধারার প্রবর্তন করেছে বিএনপি। বিএনপি সময়ে নেয়া নানা উন্নয়ন মূলক পদক্ষেপগুলোর তথ্যও উঠে এসেছে তার বক্তৃতায় যেটি বিএনপির নেতারাই অনেকে ভাবছেন আস্থা তৈরির প্রচেষ্টা হিসেবে।
কিন্তু বিএনপি যে প্রস্তাবগুলো করেছে সেটিই বা কতটা বাস্তবায়নযোগ্য?
জবাবে নির্বাচন বিশ্লেষক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কিছু দাবি যৌক্তিক কারণ অতীতে দেখা গেছে সুষ্ঠু নির্বাচনে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আবার নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যখন হয়েছে তখন ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি হয়েছে।
তিনি বলেন দলগুলোকে বসে এমন একটা পদ্ধতি বের করতে হবে যেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হবে।
বদিউল আলম মজুমদার বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সবদলের দাবি সমন্বয় করে আলোচনার মাধ্যমে আস্থা তৈরির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে, সেটি না হলে চরম বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা রয়েছেও বলে মনে করেন তিনি।