প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নিজেই ছুটিতে গিয়েছেন নাকি তাঁকে ছুটিতে যেতে সরকার বাধ্য করেছে এ বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে নানা অনুমান, সন্দেহ এবং বিতর্ক চলছে।
প্রধান বিচারপতি গৃহবন্দি কি না এ বিষয়টি নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু এ ধরণের অনুমান কিংবা সন্দেহকে সরকার অবাস্তব বলে বর্ণনা করছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতা জয়নুল আবেদিন মনে করেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে চাপের মুখে ছিলেন প্রধান বিচারপতি। সে প্রেক্ষাপটে সরকারের চাপের মুখে প্রধান বিচারপতি ছুটিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি।
“পার্লামেন্টেও এ বিষয়ে মন্তব্য করা হয়েছে। অতীতে তো কখনো এ ধরনের ছুটির প্রশ্ন আসে নাই। তারপরে উনি তো দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে আসলেন। নিশ্চয়ই এ রকম কিছু থাকতে পারে,” বলছিলেন জয়নুল আবেদিন।
মাস দু’য়েক আগে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা প্রধান বিচারপতির কড়া সমালোচনা করেছেন। সে সময় সরকারের একজন সিনিয়র মন্ত্রী বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ না করলে আন্দোলন করা হবে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত একটি সহযোগী সংগঠন প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবীতে কর্মসূচীও দিয়েছিল।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং চিকিৎসার জন্য তিনি ছুটি নিয়েছেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিন বলছেন, প্রধান বিচারপতি যে ক্যান্সারে ভুগছেন সেটি তাদের জানা ছিল না।
সাংবাদিক এবং বিশ্লেষক মিজানুর রহমান খান মনে করেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় এবং প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা বেশ কঠিন।
সাংবাদিক মি: খান বলছেন, প্রধান বিচারপতির যে কর্মসূচীর ছিল সেটি দেখে মনে হচ্ছে তিনি ছুটিতে যাবার জন্য তৈরি ছিলেন না।
তিনি জানান, প্রধান বিচারপতি মি: সিনহার ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে রাশিয়ার প্রধান বিচারপতি আগামী ৮ অক্টোবর বাংলাদেশে সফরে আসার কথা এবং সে প্রস্তুতি চলছিল।
“লং ভেকেশনের পরে রেওয়াজ অনুযায়ী উভয় বিভাগের বিচারপতি এবং আইনজীবীদের সঙ্গে তাঁর করমর্দন সভা ছিল। সেখানে অংশ গ্রহণ করার জন্য তাঁকে তৎপর দেখা গিয়েছে,” বলছিলেন মি: খান।
অব্যাহত টানাপড়েনের মাঝে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছেন প্রধান বিচারপতি তার অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সোমবার থেকে এক মাসের ছুটিতে গেছেন।
বিবিসি বাংলাকে মন্ত্রী বলেন, “প্রেসিডেন্টকে লেখা চিঠিতে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন তিনি ক্যান্সারের রোগী, আরো অন্যান্য রোগে তিনি আক্রান্ত। ফলে তার বিশ্রাম দরকার।”
বিরোধী রাজনৈতিক প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে যে অবিশ্বাস, অনুমান এবং সন্দেহের কথা বলছে, সেটিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘অমূলক’ বলে বর্ণনা করেছেন।
“অসুস্থতা সবসময় জানান দিয়ে আসেনা.. তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি বলে সুপ্রিম কোর্টে বিএনপির কিছু আইনজীবী চিল্লাচিল্লি করছেন, সেটা যে ভিত্তিহীন এটা আমাকে বলতেই হচ্ছে,” বলছিলেন আইনমন্ত্রী।
“এটাকে রাজনীতি-করণের কোনো কারণ নেই। ওনাদের হয়তো কোনো দুরভিসন্ধি ছিলো।”
প্রধান বিচারপতি চাপের মুখে ছুটিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন – সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এমন দাবীর বিপরীতে সরকার এখনও পর্যন্ত ‘গ্রহণযোগ্য’ ব্যাখ্যা বা বক্তব্য দিতে পারেনি বলে বলে কোন কোন বিশ্লেষক মনে করেন।