চাল সংকট সৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামে চার ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা।

Date:

Share post:

চট্টগ্রামে চালের মজুত গড়ে তুলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মূলে চার ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। সম্প্রতি এই শীর্ষ আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের ডেকে এ ব্যাপারে সতর্কও করে দিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি জানিয়েছে, চার আমদানিকারক ব্যবসায়ীর সঙ্গে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় চালের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলির আরো ৫৬ ব্যবসায়ী জড়িত। যাদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক পরিদর্শক বলেন, চার আমদানিকারক ব্যবসায়ীর হাতে নগরীর বিভিন্ন গুদামে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টন আমদানি করা চাল গুদামজাত রয়েছে। অথচ চালের সংকট দেখিয়ে তারা উচ্চমূল্যে চাল বিক্রি করে মোটা অঙ্কের মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। চালের গুদামগুলোও নজরদারিতে রয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ ব্যাপারে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের ডেকে কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। এরপরও কারসাজি হলে প্রয়োজনে অভিযান চালানো হবে। চাল সংকট সৃষ্টির কারণে মূলত চালের দাম বৃদ্ধির কথা জানান নগরীর বহদ্দারহাটের খুচরা চাল ব্যবসায়ী পরিতোষ দাশ। তিনি বলেন, আমার দোকানে আগে ৫০০ বস্তার বেশি চাল থাকতো। এখন ১০০ বস্তাও নেই। চাল আনতে গেলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা চাল নেই বলে জানান। একই কথা বলেন, নগরীর কাজীর দেউরি বাজারের চাল ব্যবসায়ী শাহ আলম। তিনি বলেন, আমি চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের চাল আমদানিকারক ইদ্রিস অ্যান্ড সন্স থেকে চাল কিনি। প্রতিদিন আমার এক হাজার বস্তা চাল লাগে। সে জায়গায় ২০০-২৫০ বস্তার উপরে পাচ্ছি না। তিনি বলেন, আমরা প্রতিবস্তা চাল ১০-১৫ টাকা লাভে বিক্রি করি। চাল না থাকায় প্রতিবস্তা চাল এখন ৩০-৩৫ টাকা লাভে বিক্রয় করতে হচ্ছে। একইভাবে আমদানিকারক ও বস্তাপ্রতি আগের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ করছে। তার চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে আমদানিকারকরা চাল গুদামজাত করে ২০০০-২২০০ টাকার বস্তা ৩০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করছে। ব্যবসায়ীরা জানান, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী ইদ্রিস অ্যান্ড সন্স, মেসার্স যমুনা এন্টারপ্রাইজ, চট্টলা রাইস এজেন্সি ও গোপাল রাইস এজেন্সির মালিকরাই মূলত চাল আমদানি করে থাকে। এদের রয়েছে ৫৬ জন পাইকারি চাল বিক্রেতা। যাদের হাতে জিম্মি এখন চালের বাজার। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হাওড়ে বন্যার সময় হঠাৎ চাল পরিবহন সংকটে পড়ায় চালের দাম বেড়ে যায়। তখন সরকারের আমদানি শুল্ক বেশি থাকায় চাল আমদানিও করেনি ব্যবসায়ীরা। ফলে চালের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু চালের দাম কমাতে সরকার ২৮ ভাগ থেকে শুল্ক কমিয়ে ১০ ভাগে আনে। এ সময় ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড থেকে প্রচুর চাল আমদানি করে ব্যবসায়ীরা। তবে এসব চাল মজুত করে রাখেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলির বিভিন্ন গুদামে হাজার হাজার টন চাল মজুত করে রেখেছে ব্যবসায়ীরা। ফলে চালের দাম বাড়ছেই। শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার, কাজীর দেউরি, ঝাউতলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে তিন রকমের মিনিকেট চালের মধ্যে একটি ২৯৫০ টাকা, আরেকটি ২৯০০ টাকা, অন্যটি ২৮৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রয় হয়েছে যথাক্রমে ২৬৫০ টাকা, ২৫৫০ ও ২৪৫০ টাকায়। আর আতপ চাল বিক্রয় হচ্ছে ২৭৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে বিক্রয় হয়েছে ২৩০০ টাকায়। এছাড়া ২১৫০ টাকার নিচে এখন কোনো চাল বিক্রয় হচ্ছে না। অথচ হাওরে বন্যার আগে সর্বনিম্ন চালের মূল্য বস্তাপ্রতি ছিল ১২৫০ টাকা। মিনিকেট সর্বোচ্চ বিক্রয় হয়েছিল ১৭০০ টাকা। আর প্রতিদিনই কেজিতে এক-দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত চালের দাম বাড়ছেই। এ দামে চাল কিনে খেতে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাক্তাইয়ের চাল আমদানিকারক ইদ্রিস অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. ইদ্রিস মিয়া জানান, ভারত ও মিয়ানমারে চালের বুকিং রেট বৃদ্ধির কারণে দেশীয় বাজারেও দাম বাড়ছে। তিনি দাবি করেন, বিশ্ববাজারে বুকিং রেট ৩৭৫ ডলার থেকে বেড়ে ৪৫০ ডলার করা হয়েছে। এরসঙ্গে সড়কপথে দীর্ঘ যানজটের কারণে পরিবহন খরচও আগের চেয়ে বেড়েছে। ১৭৩০ টাকা বিক্রি করা বেতি চাল এখন ২২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, যেসব ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের চাল মজুত ছিল, সুযোগ পেয়ে তারাও দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আমরা আমদানিকারকরা লাভ করতে পারিনি দোকানদাররা লাভ করে ফেলছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চালের দাম যখন বাড়তি, তখন স্বাভাবিকভাবে আমদানিকারক, মিল মালিক ও দোকানদার মজুত করে রাখবে। দাম বাড়ার পর তা বিক্রি করবে। আমদানিকারকদের মধ্যে আগে যারা গুদামজাত করেছেন, তারা এখন বেশি লাভ পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন এই আমদানিকারক। পাহাড়তলী চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সমপাদক আলহাজ মো. জাফর বলেন, বেনাপোল, সোনা মসজিদ, হিলিসহ কয়েকটি স্থলবন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা প্রচুর চাল রয়েছে। কিন্তু এসব চাল চট্টগ্রামে আসতে দৌলদিয়া-মাওয়া ফেরিঘাটে দীর্ঘ জটে পড়ে ৫-৬ দিন লেগে যাচ্ছে। ট্রাক ভাড়াও আগের তুলনায় দ্বিগুণ গুনতে হচ্ছে। এসব কারণে দাম বাড়ছে। এছাড়াও উত্তরবঙ্গের ৮-১০টি চাল মিল ধান-চাল মজুত করে রাখায় বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সরকার বাজার মনিটরিং ও ফেরিঘাটে বিকল্প ব্যবস্থায় চাল পারাপারের উদ্যোগ নিলে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হবে। বাজার অস্থিরতার জন্য সিন্ডিকেট কারসাজি বলে দায়ী করেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, আমদানিকারক সিন্ডিকেট ও বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে। খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নজরদারি-মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...