চট্টগ্রাম বন্দরের দুর্নীতি অনুসন্ধান ও খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

Date:

Share post:

চট্টগ্রাম বন্দরের দুর্নীতি অনুসন্ধান ও খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ক্রয় এবং টেন্ডার নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ চেয়েছে দুদক। বিশেষ করে গত কয়েক বছরের অডিট রিপোর্ট এবং ক্রয় ও টেন্ডার সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত সরবরাহ দেয়ার জন্য বন্দরের চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।
দুদকের পরিচালক জায়েদ হোসেন খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল সকালে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল খালেদ ইকবালের সাথে বৈঠক করে বিভিন্ন ধরণের কাগজপত্র সরবরাহ দেয়ার অনুরোধ করেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান দুদকের চাহিদা মোতাবেক সব ধরণের তথ্য প্রমাণ সরবরাহ দেয়া হবে বলেও দুদক কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
এ বন্দরের টেন্ডারসহ জাহাজ কেনা, সিসিটি (চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল), আইসিডি অপারেশনে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, জনবল নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেনসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বন্দর রক্ষা পরিষদের ব্যানারে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট ফিরিস্তি দিয়ে সভা সমাবেশ, মিছিল, অনশন, কালো ব্যাজ ধারণের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ মহলে এবং এর পাশাপাশি দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন), গোয়েন্দা সংস্থা এবং সংসদীয় কমিটির কাছেও লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সমুদ্রে ভাসমান বর্জ্য সংগ্রহের জন্য বে ক্লিনার-১ ও বে ক্লিনার-২ নামের যে দু’টি জাহাজ কেনা হয়েছে সে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ নন-ইনকাম জেনারেটিং। তারপরও জাহাজ দু’টি কেনার পর থেকে অচল হয়ে আছে। জাহাজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পানগাঁও সাকসেস, পানগাঁও এক্সপ্রেস ও পানগাঁও ভিশন নামের যে তিনটি কন্টেনার জাহাজ কেনা হয়েছে সেগুলো নতুন নয়। স্ক্র্যাপ জাহাজকে রিকন্ডিশন্ড করে সরবরাহ করা হয়েছে। উপরন্তু এসব জাহাজ ক্রয়ে মন্ত্রিপরিষদের ক্রয় কমিটির কোনো অনুমোদনও নেয়া হয়নি।
তাছাড়া বাণিজ্যিক কাজে বন্দরের জাহাজ কেনার কোনো বিধানও নেই। এসব জাহাজ এখন অলাভজনক জাহাজে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ভিটিএমআইএস) নামের একটি প্রকল্প সম্পূর্ণ বিদেশি যন্ত্রাংশ দিয়ে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও দেশিয় বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে তা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। প্রায় ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কন্টেনার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (সিটিএমআইএস) প্রকল্পটির সব মডিউল বাস্তবায়ত না হওয়ার পরও অসমাপ্ত এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয়ের পরও প্রকল্পটি সম্পূর্ণ চালু করা যায়নি।
কর্ণফুলী নদী সংশ্লিষ্ট-১ ও ৩ নম্বর জেটির ভরাট পলি সরাতে ৮ কোটি টাকা মূল্যের ড্রেজার ক্রয়ে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয় ওয়ার্কশপ স্লিপওয়ে করা হয়েছে, যাতে বন্দরের কোনো জাহাজের রিপেয়ারিং বা মেনটেইন্যান্স হয় না। প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বিনা প্রয়োজন যে এ্যাম্বুলেন্স শিপ ক্রয় করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অলসভাবে পড়ে আছে। এ প্রকল্পটি ইতোমধ্যে ৮ কোটি টাকায় বিক্রি করা হলেও তার অনুমোদন মেলেনি।
অথচ তা সম্পন্ন করা হয়েছে ২৪ কোটি টাকায়। প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এক্স-রে স্ক্যানিং মেশিন ক্রয় করা হয়েছে। এ প্রকল্পটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতায় করার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কু উদ্দেশ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগেই তা সম্পন্ন করে বলে অভিযোগ আছে।
কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প ছিল ২২৯ কোটি টাকার। এমএমডিসি নামের মালয়েশিয়ার একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজটি লাভ করলেও প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেশিয় এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ প্রকল্প থেকে ১৬৫ কোটি টাকার বিল গ্রহণের পর ঠিকাদার কাজ সম্পন্ন না করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। গত প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ড্রেজিং কাজ বন্ধ থাকায় আপ স্ট্রিমের পলিতে ড্রেজিং করা স্থানসমূহ পুনরায় ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বিপুল অঙ্কের অর্থ পানিতে গেছে বলে ধরে নেয়া যায়।
এসব ছাড়াও রয়েছে আরো বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ, যাতে বর্তমান চেয়ারম্যান ও মন্ত্রণালয়ের কোনো কোনো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার মাধ্যমে ঠিকাদারী কেনাকাটা ও সরবরাহ কাজে অবৈধ সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া বন্দরের ক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য–উপাত্ত, বন্দরের বিদ্যমান আইনকানুন ও বিধিবিধান সংক্রান্ত বিষয়াদি, আর্থিক বিভিন্ন বিষয়ের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ওই সব তথ্য উপাত্ত শিগগির দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ।
দুদকের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে ঢাকা থেকে আসা একটি টিম নিয়মিত কাজ করছে। চট্টগ্রাম বন্দরের টেন্ডার এবং কেনাকাটায় উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতেই মুলত এই টিম গঠন করা হয়েছে বলেও দুদকের ওই কর্মকর্তা জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...