সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ গ্রেপ্তারের পর আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে

Date:

Share post:

সুব্রত বাইন ও ল্লা মাসুদ গ্রেপ্তারের পর আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। কারাগার থেকে বেরিয়ে আসা শীর্ষ সন্ত্রারা পুরো রাজধানীতে সন্ত্রাসের যে অভায়ারণ্য তৈরির চেষ্া করছিলেন, তাতে ছেদ পড়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র। কারণ সেনাবাহিনী দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করার পর অন্যরা গাঢাকা দিয়েছেন। অন্যদিকে দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারের খবরে রাজধানীর বাড্ডা, মগবাজার, হাতিরঝিল এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করে সুব্রত বাইনকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করার পরও তাঁর মধ্যে ভয়ের ছাপ দেখা যায়নি। সূত্র জানায়, ৬১ বছর বয়সী সুব্রত বাইন পুলিশের সঙ্গে কথা বলার সময় কমান্ডিং স্টাইলে কথা

সূত্র জানায়, গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হন, যাঁদের মধ্যে মোল্লা মাসুদও রয়েছেন।

এ ছাড়া রয়েছেন কিলার আব্বাস, সুইডেন আসলাম, পিচ্চি হেলাল, সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন, খোরশেদ আলম রাসু, নাইম আহমেদ টিটন। তাঁদের প্রত্যেকের নামের আগে শীর্ষ সন্ত্রাসীর তকমা লাগানো আছে। তাঁরা ছাড়া পেয়ে এলাকায় ফেরার পর রাজধানীর মিরপুর, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, হাতিরঝিল, মগবাজার, বাড্ডা এলাকায় আও অপরাধের সাম্রাজ্য তৈরির চেষ্টা চালান। সূত্র মতে, গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের সময় লুট হওয়া অস্ত্রও তাঁরা সংগ্রহ করেন।

তাঁরা এলাকায় ফেরার পর উঠতি বয়সী অনেক সন্ত্রাসী তাঁদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। মগবাজার এলাকায় তেমনি শিষ্যত্ব গ্রহণকারী সন্ত্রাসী আরাফাত ও শরীফ। এ ছাড়া মাহফুজুর রহমান বিপু, মেহেদী, রবিন, হেলালউদ্দিন, মাহবুব, ওয়াসির মাহমুদসহ আরো কয়েকজন সন্ত্রাসীকে তাঁরা দলে ভিড়িয়ে বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব বণ্টন করেছেন।
সুব্রত বাইন এলাকায় ফিরেই নতুন করে দল গোছাতে শুরু করেন। তাঁর সঙ্গী হন মোল্লা মাসুদ।

তাঁরা গড়ে তোলেন বাহিনী। বাহিনীর সদস্যরা বাড্ডা, গুলশান, মগবাজার, তেজগাঁও ও হাতিরঝিল এলাকায় চাঁদাবাজি, জমি দখল, কোরবানির পশুর হাটের নিয়ন্ত্রণ, সিটি করপোরেের ময়লা বাণিজ্য, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কিন্তু অন্য সন্ত্রাসী গ্রুপ বাধা হয়ে দাঁড়ালে শুরু হয় হত্যাকাণ্ড ও গোলাগুলির ঘটনা। আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় গত তিন মাসে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২০ মার্চ রাতে গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনের সড়কে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমনকে। গত ১৯ এপ্রিল হাতিরঝিলে ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য আরিফ শিকদারকে গুলি ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ গত রবিবার রাতে বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় ি নেতা কামরুল আহসান সাধনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে গত ১৩ মার্চ মগবাজারের ওয়্যারলেস গেট এলাকায় বিএনপির সদস্য মো. রাজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। এসব ঘটনায় সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ এবং তাঁদের সহযোগীদের নামে অভিযোগ ওঠে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নুল ইসলাম গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তাঁদের রিমান্ডে আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে যে তথ্য পাওয়া যাবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুব্রত বাইন ও তাঁর সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ ২৩ জনকে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্তির পর তাঁদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে। এরপর থেকেই সুব্রত বাইন পলাতক ছিলেন। খবর পাওয়া যায়, তিনি ভারতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খাটেন। তবে তিনি ভারত থেকে ঠিক কবে , সে তথ্য পাওয়া যায়নি। গতকাল বুধবার আদালতে সুব্রত বাইন দাবি করেছেন, তিনি আড়াই বছর ধরে আয়নাঘরে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে আড়াই বছর ধরে আয়নাঘরে রাখা হয়। আমাকে ৫ তারিখ (আগস্ট) রাত ৩টার দিকে ছেড়ে া হয়। আমাকে মাথায় রড দিয়ে পিটিয়ে শেষ করে দিয়েছে।’

মগবাজারের এক ব্যবসায়ী কালের কণ্ঠকে জানান, সুব্রত বাইন একসময় ক্লিন শেভ করতেন। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি দাড়ি রেখেছেন। বয়স হয়ে যাওয়ায় চেহারায়ও এসেছে পরিবর্তন। এ অবস্থায় গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ মগবাজারের বিশাল সেন্টার মার্কেটে আসেন সুব্রত বাইন। পরিচয় দেওয়ার পর পুরনো ব্যবসায়ীরা তাঁকে চিনতে পারেন। এর পর থেকেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। নতুন করে সুব্রত বাইন ও তাঁর সহযোগীরা চাঁদা নেওয়াও শুরু করেন। নব্বইয়ের দশকের মতো আবারও তাঁরা অপরাধের স্বর্গরাজ্য বানানোর চেষ্টা চালান। তাঁদের দলে ভেড়ান অপরাধীদের। তাঁদের মধ্যে আরাফাত ও শরীফ কিলিং গ্রুপের সদস্য। অন্যদের কেউ চাঁদাবাজি, কেউ ভয় দেখানোর কাজ করতেন।

এদিকে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ গ্রেপ্তার হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন বাড্ডা, মগবাজার ও হাতিরঝিল এলাকার ব্যবসায়ীরা। মগবাজারের বিশাল সেন্টারের এক ব্যবসায়ী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ গ্রেপ্তারের খবর জানার পর স্বস্তি ফিরেছে এলাকায়। তিনি বলেন, এখন তাঁর চ্যালাদের গ্রেপ্তার করতে পারলে পুরো এলাকায় শান্তি ফিরবে। আরেক ব্যবসায়ী জানান, এঁদের ভয়ে এখনো কেউ মুখ খুলতে চান না। কারণ যদি তাঁরা জেল থেকে বেরিয়ে আসেন, তাহলে ওই ব্যবসায়ীকে আর আস্ত রাখবেন না।

সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে গত মঙ্গলবার ঢাকা ও কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

ইসরায়েলকে স্বীকৃতিতে প্রস্তুত সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ, তবে…

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত, তবে তার শর্ত একটাই—ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে...

চাঁদ দেখা গেছে, ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা

বাংলাদেশের আকাশে আজ বুধবার পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১৪৪৬ হিজরি সনের জিলহজ মাস গণনা...

আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘দেশের জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের...

ঈদের তারিখ ঘোষণা করল যেসব দেশ

মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এই উৎসবকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বিশ্বব্যাপী...