নানা জটিল সমীকরণে অস্থির রাজনীতি

Date:

Share post:

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ্র-জনতার রক্তঝরা অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রত্যাশা ছিল, সরকার সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে থেকে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সরকারের মেয়াদ যখন ১০ মাসের দিকে গড়াচ্ছে, তখনই প্রধান র পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়াল। নানা রকম অস্থিরতার মধ্যে পদত্যাগের গুঞ্জন শুনে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে এ আহ্বান জানানো হয়।

দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের এ দলটির সঙ্গে সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীরও দূরত্ব দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে ছাত্রশিবিরের ‘দেশবিরোধী’ স্লোগান ও জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেওয়ায় এনসিপি নেতাদের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন তারা। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের সমালোচনা করে ে পোস্ট দেন। এ কারণে মাহফুজের পদত্যাগের দাবিও জানিয়েছিল ছাত্রশিবির। এমন পরিপ্রেক্ষিতে এবং সম্প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে মাহফুজ আলম ও আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ চাওয়ার বিষয়ে গতকাল ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন মাহফুজ আলম। নিজের ‘বিভাজনমূলক’ শব্দচয়নে দুঃখ প্রকাশ করে মাহফুজ লিখেছেন, ‘দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য অনিবার্য। আগেকার যে কোনো বক্তব্য ও শব্দচয়ন, যা বিভাজনমূলক ছিল—সেগুলোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সরকারে আর এক দিনও থাকলে অভ্যুত্থানের সব শক্তির প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা রেখে কাজ করতে চাই।’

এদিকে এনসিপি নতুন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের দাবি জানালে আরেক জটিলতা তৈরি হয়। কারণ আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন এই ইসির অধীনেই হবে। এখন বিদ্যমান ইসির প্রতি অনাস্থা এনে এনসিপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে দেশ আরও গভীর সংকটে পড়বে। বুধবার ইসি পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ আগারগাঁ নির্বাচন ভবনের সামনে সমাবেশ করেছে দলটি।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে এই কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। তাই কমিশনের ওপর ভরসা রাখতে পারছি না। ফলে দ্রুত নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে সবকিছুকে পরিকল্পিতভাবে জাতীয় নির্বাচনের দিকে নেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেওয়া জরুরি।’ তিনি গণপরিষদ ও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণারও দাবি জানিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে। অন্যদিকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ না দিলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা কঠিন হবে বিএনপি। একই সঙ্গে ্কিত উপদেষ্টাসহ প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে অব্যাহতি দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ ছোট করার আহ্বান দলটির।

সম্প্রতি নানা দাবিতে বিভিন্ন পক্ষের আন্দোলন, যমুনাভিমুখে লংমার্চসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অস্থিরতা বাড়ছেই। অতি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ড যেন অস্থিরতার আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। তার খুনের বিচার চেয়ে ছাত্রদলও কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়। তাকে মেয়র পদে বসানোর দাবিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ইশরাকের মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেটের বৈধতা নিয়ে রিট খারিজের আদেশ দিলে আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন ইশরাক হোসেন।

কয়েকদিনের আন্দোলনে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ এবং বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমার কারণে তৈরি হয়েছে ব্যাপক জনদুর্ভোগ। ে কষ্ট হওয়া সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংলাপ শুরু করা এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে দুই উপদেষ্টা এবং সরকারের সব দপ্তর থেকে ছাত্র প্রতিনিধিদের পদত্যাগ, করিডোর ও গ্রাম বন্দর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকা এবং ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার রাষ্ট্র দখলের অবৈধ আইনে নিয়োগ দেওয়া প্রশাসকদের প্রত্যাহার করা।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তারেক রহমানকে নিয়ে ড. খলিলুর রহমান যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত জীবন প্রসঙ্গটি যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিমূলক। কেননা, দেশবাসীর অজানা নয় যে, তারেক রহমানকে কী কারণে কোন পরিস্থিতিতে লন্ডন যেতে হয়েছে। সেখানে থেকেই তাকে বিশ্বের নিষ্ঠুরতম একটি জগদ্দল ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে না পরে, সংস্কার বাস্তবায়ন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, মিয়ানমারকে মানবিক করিডোর দেওয়া, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ এ ছয়টি ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী তৎপরতায় দেশে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এসব ইস্যুতে দলগুলোর পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ফলে আবারও জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। যদিও নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে চাপ তৈরি হওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। তার মতে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ডিসেম্বর-জুনের ‘বিভ্রান্তি’কে মানতে পারছে না। দলটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ এবং চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবিতে অনড়। বিএনপির এই অবস্থানের সঙ্গে কিছু সমমনা দলও রয়েছে। জামায়াতের অবস্থান এখনো খুব পরিষ্কার নয়। আর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের দল এনসিপি দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে খুব আগ্রহ নেই। তারা নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পক্ষে অটল এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ দেওয়া হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো ক্ষুদ্র বা গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেবে এটিই ছিল জনগণের প্রত্যাশা। তবে নানা ঘটনায় দেশের রাজনীতি এখন অস্থির। দলগুলোর মাঝে বাড়ছে অনৈক্য ও বিভেদ। অন্তর্বর্তী সরকারের শাসন জনগণকে যদি স্বস্তি দিতে পারত, পরিবর্তনের লক্ষণগুলো স্পষ্ট হতো, মানুষ যদি সুশাসনের সুফল ভোগ করত, সংস্কারের উদ্যোগে আশার সঞ্চার করা যেত, তাহলে মানুষ প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করত; কিন্তু সরকার তা করতে না পারায় দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জোরালো হচ্ছে। অস্থিরতা নিরসনের একমাত্র পথ হলো অতিদ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ নিয়ে বলেন, ‘হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন একটা সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। সেই সম্ভাবনা হলো ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দ্বারা আধুনিক বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করা। তবে সেখানে দেখছি একটা কালো ছায়া এসে দাঁড়াচ্ছে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে জাতীয় নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া এবং জনগণকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত ও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। আবারও বিভাজনের রাজনীতি শুরু হয়েছে। এখানে গোত্রে গোত্রে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পরস্পরের মুখোমুখি করার একটা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের ভেতরে একটি অংশ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পক্ষে, তাই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক দলগুলো নয়, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল অংশী হিসেবে যাদের বিবেচনা করা হয় (সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী,

বিএনপি-জামায়াত, এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তি), বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। এই ঘোলাটে পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে। একই সঙ্গে পতিত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনেরও আশঙ্কা থেকে যায়। এমন বাস্তবতায় সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিএনপি ও এনসিপি—কোনো একটি পক্ষের ভুল পদক্ষেপ পরিস্থিতি শোচনীয় করে তুলতে পারে। এতে চূড়ান্ত বিচারে লাভবান হবে গণঅভ্যুত্থানের পরাজিত ও পতিত শক্তি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ও ্যবেক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান কালবেলাকে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ দেওয়া হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো ক্ষুদ্র বা গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠবে, রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেবে, সেটিই ছিল দেশবাসীর প্রত্যাশা। কিন্তু নানা ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতা স্পষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার না হওয়ায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। ফলে বর্তমান উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা কাটাতে এবং সম্ভাব্য সংঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তি—এই অংশীগুলোর মধ্যে বোঝাপড়ার কোনো বিকল্প নেই।’

জানা যায়, মূলত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হবে এই ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে বিরোধ তুঙ্গে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো চায় চলতি বছরে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তারপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন। আর জামায়াতে ইসলামী, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি এরই মধ্যে স্পষ্ট করে বলেছে, তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায়, যা নিয়ে কয়েক মাস ধরে বিতর্ক তীব্র হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই পক্ষে-বিপক্ষে নানা বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। তবে, অন্তর্বর্তী সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন কালবেলাকে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে মাত্রায় জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় বসেছে, তার নজির বাংলাদেশে নেই। পতিত ও পরাজিত পক্ষ ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দল এ সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ জনগণ স্বস্তিতে নেই। সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটছে, তাতে মানুষের মনে নানা উদ্বেগ, অজানা আশঙ্কা ও ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মনে হচ্ছে রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতির দায়িত্বশীল পক্ষগুলো দায়িত্বশীল আচরণ করছে না। বাংলাদেশের ইতিহাসে যে সরকারের হওয়ার কথা ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার—আজ সেটি করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কালবেলাকে বলেন, নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় বিষয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজই হচ্ছে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি কিছু সংস্কার করার প্রয়োজন আছে, যা একটি সুস্থ নির্বাচন এবং সঠিক রাজনীতি করার জন্য সহায়ক হবে।

তিনি বলেন, সরকার ডিসেম্বরে নির্বাচন করলে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই। দুই মাস পরে করলেও জামায়াতের আপত্তি নেই। তবে সরকারের উচিত একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেওয়া। জামায়াত দুটি রোডম্যাপ চেয়েছে—একটি নির্বাচনের, অন্যটি সংস্কারের।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু কালবেলাকে বলেন, বিএনপি, গণঅভ্যুত্থানে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক দলগুলো এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে পরস্পর বিভেদ কমিয়ে সমঝোতায় না পৌঁছালে সংস্কার, ফ্যাসিবাদের বিচার ও নির্বাচন সবকিছুতেই অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে। কেননা, জুলাই-আগস্টে সবাই মিলে উপড়ে ফেলেছিল ফ্যাসিবাদের মূল! এখন আমরা সবাই মিলে যা করছি তা হলো অমার্জনীয় ‘ভুল’।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান কালবেলাকে বলেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এজন্য সরকারই দায়ী। তবে সংকট নিরসনে অবিলম্বে সরকারের উচিত জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা। তার আগে ফ্যাসিবাদী আন্দোলনে গণহত্যার বিচার ও রাষ্ট্র সংস্কারেরও রূপরেখা ঘোষণা দিতে হবে। সরকার শুরুতে যেহেতু স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়নি এখন সেটির দরকার নেই। এখন জাতীয় নির্বাচন দেওয়াটা জরুরি। এনসিপি জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত ও বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্র করছে বলেও মনে করেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

দুপুরের মধ্যে ৭ জেলায় ঝড়ের শঙ্কা

দেশের সাত জেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া...

মমতাজের বাড়িতে সেনা অভিযানে ৯০০ কোটি টাকা উদ্ধারের খবর, যা জানা গেল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত একটি হত্যা মামলায় গত ১২ মে সাবেক সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে...

দেশে ১৮ জনের করোনা পরীক্ষা, ৬ জন শনাক্ত

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জন করোনা পরীক্ষা করেছেন। এর মধ্যে ৬ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা...

কুমিল্লা সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১৩ জনকে পুশইন

কুমিল্লা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১৩ বাংলাদেশিকে পুশইন করেছে। তাদের আটক করেছে বিজিবি। প্রাথমিকভাবে...