আন্তর্জাতিক সময় ডেস্ক
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তনিও তাজানি, ইসলামি বিদ্রোহীদের দ্বারা প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ উৎখাত হবার পর দেশের অন্তর্বর্তী সময়ে উৎসাহ প্রদানের জন্য শুক্রবার সিরিয়া সফরে যাবেন এবং বলেছেন যে এখন যখন রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে তখন ইউরোপের উচিৎ হবে দামেস্কের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাটি পর্যালোচনা করে দেখার।
তাজানি বৃহস্পতিবার রোমে পাঁচটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এই দেশগুলি হচ্ছে ব্রিটেন,ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্র। তা ছাড়া দিনে আরও আগের দিকে তিনি তুরস্ক ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেন। তিনি বলেন এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আসাদ-উত্তর সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা; ইতালি সিরিয়ার জনগণের স্বাস্থ্য পরিচর্যার জন্য বেসরকারি বিনিয়োগের প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে এই বৈঠকে তাজানি বলেন এটা অত্যন্ত জরুরি যে সকল সিরিয়াবাসীর সমান অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া উচিৎ। এই প্রসঙ্গটি এ জন্য উঠে আসে যে সিরিয়ার বর্তমান কর্তৃত্ব যে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম বা এইচটিএস’এর হাতে রয়েছে তাদের আমলে খ্রীষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই জঙ্গি গোষ্ঠীটিকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ বহু আগেই সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছে।
তাজানি বলেন,“দামেস্ক থেকে প্রথম বার্তাটি ছিল ইতিবাচক । সে জন্যই এই নতুন পর্বকে উৎসাহিত করতে আমি কাল সেখানে যাচ্ছি, যাতে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়”।
সংবাদদাতাদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন সিরিয়ার সরকারের উপর নিষেধাজ্ঞায় সম্ভাব্য পরিবর্তন আনার বিষয়টি আলোচনা করতে পারে কারণ আসাদতো এখন সেখানে আর নেই। এখনতো একটা নতুন পরিস্থিতি এবং আমার মনে হয় যে উৎসাহব্যঞ্জক ইঙ্গিত সেখান থেকে এখন আসছে তাকে আরও উৎসাহ দেওয়ার দরকার রয়েছে।
২০১১ সালে সরকার বিরোধী শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে আসাদ যে নৃশংসতা চালিয়েছিলেন তার ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্যদের দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে সিরিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। আসাদের নৃশংসতার কারণে সেখানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
এইচটিএস আকস্মিক এক বিদ্রোহে ৮ ডিসেম্বর আসাদকে ক্ষমতাচ্যূত করে এবং কয়েক দশক ধরে চলা তার পরিবারের শাসনের ইতি টানে। ২০১১ সাল থেকে আসাদের পতন পর্যন্ত সিরিয়ার বিদ্রোহে ও গৃহযুদ্ধে আনুমানিক ৫ লক্ষ লোক নিহত হয়।
আসাদ রাশিয়ার আশ্রয়ে সিরিয়া ত্যাগ করার পর যুক্তরাষ্ট্র কিছু শাস্তি তুলে নেয়। ডিসেম্বর মাসে বাইডেন প্রশাসন সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতার মাথার জন্য এক কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল তা প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই বিদ্রোহী নেতার লোকেরাই গত মাসে আসাদকে উৎখাত করে।
সিরিয়ার নতুন নেতাদের সংখ্যালঘু ও নারীদের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। সিরিয়ার বহু খ্রীষ্টান, যারা গৃহযুদ্ধের আগে সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার ১০% ছিলেন তাঁরা হয় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন কিংবা ইসলামি বিদ্রোহীদের ভয়ে আসাদকে সমর্থন করেছিলেন।