পোশাক শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আরো কাজ করতে চায় অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স
বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর মালিকরা বলছেন, তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স ‘ষড়যন্ত্র করছে’ এবং এদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ারও দাবি করছেন তারা।
পোশাক কারখানাগুলোর মালিকদের এক সভায় অভিযোগ করা হয়, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স একেকদিন একে ধরণের স্ট্যান্ডার্ড চাপিয়ে দিচ্ছে এবং এর প্রভাবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
অ্যাকর্ডের একজন প্রতিনিধি অবশ্য এ ধরণের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মালিকদের কয়েকজন ‘বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন কারখানার প্রয়োজন নেই’ বলেও সভায় মন্তব্য করেছেন বলে জানা গেছে।
রানা প্লাজার ধস এবং তারও আগে তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকান্ডে শত শত শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ইউরোপ এবং আমেরিকার ক্রেতাদের দু’টি জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ সরকার এবং গার্মেন্টস মালিকদের সাথে একটি চুক্তি করেছিল ২০১৩ সালে। সে অনুযায়ী অ্যালায়েন্স ইতোমধ্যেই তাদের কাজ শেষ করেছে আর আগামী বছর মে মাসে শেষ হবে অ্যাকর্ডের কাজ।
কিন্তু তারপরেও তারা গার্মেন্টস শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত কাজ করতে চাইছে। আর এ নিয়েই ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছে পোশাক মালিকদের সভায়। বাংলাদেশের একটি তৈরি পোশাক কারখানা
মালিকদের কয়েকজন ‘বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন কারখানার প্রয়োজন নেই’ বলেও সভায় মন্তব্য করেছেন বলে জানা গেছে। কেন এমন কথা বলছেন তারা?
কারখানা মালিকদের একজন আসিফ ইব্রাহিম বলেন, “বাংলাদেশে মানসম্পন্ন কারখানার প্রয়োজন নেই তা নয়। কিন্তু প্রথম থেকে একেকদিন একেক ধরনের স্ট্যান্ডার্ড চাপিয়ে দেয়াটাই সমস্যা। কোন সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড নেই। একারণে মালিকদের মধ্যে হতাশা রয়েছে- কারণ এগুলোর প্রভাবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে”।
কিন্তু এর সাথে একমত নন অ্যাকর্ডের বাংলাদেশে করা স্টিয়ারিং কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে সম্পৃক্ত থাকা আমিরুল হক। তিনি বলছেন অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সের উদ্যোগ রানা প্লাজা ধ্বসের বিপর্যয় কাটিয়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে।
তিনি বলেন, “এটা রপ্তানি কমায়নি। ক্রেতারা চলে যায়নি বরং সামনেও থাকবে সেরকম নিশ্চয়তাও আছে। এখন পণ্যের দাম বাড়াবে এমন একটা বিষয়সহ এটা অব্যাহত থাকলে ভালো হবে”।
পোশাক মালিকদের সভায় অ্যাকর্ডের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজ।
তিনি বলছেন, কারখানা গুলোকে ত্রুটিমুক্ত করার সব কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছেনা বলেই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ একমত হয়ে সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, “অ্যাকর্ড সরকার ও পোশাক খাতের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত নয়। বরং অ্যাকর্ড কারখানা মালিক এবং সরবরাহকারীদের সাথে যেভাবে কাজে করেছে তাতে করে অ্যাকর্ড চুক্তিতে যারা সই করেছিলো তাদের আস্থা অনেক বেড়েছে। তারা এখন আস্থাবান যে কারখানাগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ এবং এগুলো নিরাপদ থাকবে। নিরাপত্তার জন্য পোশাক মালিকরা আরও বিনিয়োগ করছেন এবং অ্যাকর্ড যে ভিত্তি তৈরি করেছে সে ব্যাপারে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারীরা এখন অনেক বেশি আস্থাবান”।
কিন্তু তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলছেন, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সব কাজেই তারা সহায়তা করেছেন, এখন আর অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রয়োজন নেই।
মি. রহমান বলেন, যারা ব্যবসা করতে চায় তারা এখন নিজেদের উদ্যোগেই নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তারপরেও কোন কারখানা সেটি করতে ব্যর্থ হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে কিন্তু এজন্য পুরো পোশাক খাতকে দায়ী করলে সেটি তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেনা বলেন জানান তিনি।