করোনা মহামারির গত দুই অর্থবছরে উৎসবমুখর বাজেট উত্থাপন হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২০২১-২২ অর্থবছরে সব এমপিদের নিয়ে এবার বর্তমান সরকারের চতুর্থ বাজেট উপস্থাপন করলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সোয়া দুই ঘণ্টার বাজেট বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সংক্ষিপ্ত বক্তৃতার মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপনা শেষ করেন অর্থমন্ত্রী। লিখিত বাজেট বক্তৃতা ছিল ২০৮ পৃষ্ঠার। অপঠিত বক্তব্য সংসদে উপস্থাপিত বলে গণ্য করার ঘোষণা দেন স্পিকার। বাজেট পেশের পর অর্থবিল-২০২২ পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদে উপস্থিত থেকে বিকাল ৩ থেকে সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত স্থায়ী বাজেট পেশ প্রত্যক্ষ করেন।
‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামের এই বাজেটে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের অভিঘাতের বিষয়টি। বিশেষ করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান সৃজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা— এই বিষয়গুলোকে বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। নতুন বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বড় ব্যয়ের বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যেখানে বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি।
প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের আয়ের খাতগুলো থেকে কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।
আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।
এর আগে, দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বিশেষ বৈঠকে ওই বাজেট অনুমোদন করা হয়। দুই বছর পর এবার গ্যালারিতে বসে সাংবাদিকরা অধিবেশন কভার করেন।
সোমবার (১২ জুন) চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার (১৩ জুন) সম্পূরক বাজেটে অন্তর্ভুক্ত দায়যুক্ত ব্যয়ের ওপর আলোচনা এবং নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল, ২০২২ উত্থাপন ও পাস করা হবে। ২৯ জুন, অর্থবিল, ২০২২ পাস এবং ৩০ জুন নির্দিষ্টকরন বিল ২০২২ উত্থাপন, ও পাস করা হবে।