ডেস্ক নিউজ: অটোমোবাইলস, ব্লু ইকোনমিসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে জাপানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
সোমবার (১১ এপ্রিল) টোকিওতে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি ইয়োশিমাসার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালের নভেম্বরে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি ছিল তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
এ বছর দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন এই শুভ বার্ষিকী অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
জাপানের নাম বাংলাদেশের জনগনের কাছে অতি প্রিয় এবং জাপান বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় তিনি বাংলাদেশে আরও জাপানি বিনিয়োগের আহ্বান জানান। বিশেষ করে ব্লু ইকোনমি (সুনীল অর্থনীতি), অটোমোবাইলস, আইসিটি, ফার্মাসিউটিক্যালসে, প্রকৌশল, ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদির মতো উদীয়মান খাতে বিনিয়োগের অপার সুযোগের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রাযাত্রার সঙ্গে জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আরও আকৃষ্ট হবে। এছাড়া দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ব্লু ইকোনমি, আইসিটি এবং ফার্মাসিউটিক্যালসে খাতে আরও সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাপান মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশকে বৃত্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রাখবে।
এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী করোনা ভ্যাকসিন প্রধানের জন্যে জাপানকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এসব সহায়তার কারণেই বাংলাদেশ এ পর্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করেছে।
এছাড়া দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিয়েও আলোচনা করেন। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা এবং ভাসানচরে স্বেচ্ছায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরসহ এ পর্যন্ত গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে এ পর্যন্ত প্রদেয় সহায়তার পাশাপাশি সমস্যা নিরসনে জাপানের অবিচল প্রতিশ্রুতির জন্য ধন্যবাদ জানান। এ সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য জাপানের আরও সম্পৃক্ততা কামনা করেন।
জবাবে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাপান বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা বিষয়ে সহায়তা অব্যাহত রাখবে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রত্যাবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াাশি ইউক্রেন, উত্তর কোরিয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের সহযোগিতা কামনা করেন।
এসময় ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া বা লিবিয়া যেখানেই যুদ্ধ হয় সেখানে জানমালের ক্ষতি হয়। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা প্রদানের পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে।
দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু এবং বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশের উপর এর প্রভাব নিয়েও আলোচনা করেন। তারা বৈশ্বিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বাংলাদেশে আঞ্চলিক অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জাপানের সহায়তা কামনা করেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে ভবিষ্যৎ প্রার্থিতা নিয়েও আলোচনা করেন এবং একে অপরের প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি তা বিবেচনা করতে সম্মত হন।