জামিন নামঞ্জুর করে বরগুনার আগৈলঝাড়া উপজেলার সাবেক ইউএনও গাজী তারিক সালমনকে কারাগারে পাঠানোর খবর সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী হোসাইন। তার দাবি,জনরোষ থেকে বাঁচাতে নিরাপত্তার কারণে জামিন দেওয়ার আগে তাকে দুই ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল। রবিবার (২৩ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া ব্যাখ্যায় এসব তথ্য জানিয়েছেন তিনি। এই বিচারকের আদালতেই গত ১৯ জুলাই সালমনের জামিন শুনানি হয়।
রবিবার সকালে সালমনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ওই কমিটি বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ঘটনার ব্যাখ্যা চায়। বরিশালের সিএমএম পাঠালেও তাতে সন্তুষ্ট না হওয়ায় আবার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
পরে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে পাঠানো লিখিত ব্যাখ্যায় ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী হোসাইন বলেন, ‘মামলাটি দায়ের করা হলে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার দে অভিযোগটি আমলে নিয়ে সমন ইস্যু করেন। ১৯ জুলাই ধার্য তারিখে আসামি জামিনের আবেদন করেন এবং আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দাখিলের জন্য আবেদন করেন। অন্যদিকে বাদী পক্ষ থেকে জামিন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর জন্য আবেদন করা হয়।’
মামলাটির শুনানির সময় বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বাদী অ্যাডভোকেট ওবায়েদ উল্লাহ সাজু নিজে এবং তার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবং আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুছ, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ আবদুল কাদের এবং অ্যাডভোকেট আনিছ উদ্দিন আহম্মদসহ প্রায় ৮০ জন আইনজীবী। আর আসামি পক্ষে ছিলেন কেবল অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান।
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘শুনানির সময় আদালত কক্ষে আইনজীবীদের উপস্থিতির মতো বারান্দা এবং রাস্তায় উৎসুক জনসাধারণ ও মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতিতে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান ছিল। তাই সেই সময় উৎসুক জনতার রোষানল থেকে ইউএনও’র ব্যাক্তিগত নিরাপত্তার কথা ভেবে শুনানি মুলতবি করে তার আইনজীবীর আবেদন অনুযায়ী কাগজপত্র দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
তখন ইউএনওকে আদালত কক্ষে বসতে বলা হয়। এরপর তাকে যথাযথ নিরাপত্তা দিয়ে ডক থেকে আদালত কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মূলত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতেই তাৎক্ষণিক আদেশ না দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয় বলে ব্যাখ্যায় জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ সাংবাদিকদের জানান— এ ঘটনায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাছে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী হোসাইন। মামলার নথি তলব করা হয়েছে। ব্যাখ্যায় তিনি সুপ্রিম কোর্টকে জানান, ইউএনও সালমনকে জামিন দিতে না করেননি। মামলা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় জামিন দিতেও বিলম্ব হয়েছে। তখন তাকে চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়েছিল।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে শিশুর আঁকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছেপে অবমাননার অভিযোগে ইউএনও সালমনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করেন বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। তাকে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা শাখার ধর্মষিয়ক সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রবিবার তিনি মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে মামলার আগে বরিশালের জেলা প্রশাসক ইউএনওকে শোকজ করেছিলেন বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে। আর ইউএনও সালমনের শোকজের জবাবে কমিশনার সন্তুষ্ট হননি। সেই চিঠি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠান তিনি।