মোবাইল ছিনতাই : দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে ৪ পুলিশ সদস্য ক্লোজড

Date:

Share post:

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠায় মোহাম্মদপুর থানার চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। ৪ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহারের বিষয়টি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির তেজঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ইবনে মিজান।

তিনি জানান, ছিনতাই হওয়া মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় হভাজন ৩ জনকে েপ্তার করেছে পুলিশ।

ক্লোজড হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন—এসআই জসিম উদ্দিন, এএসআই আনারুল এবং পুলিশ সদস্য মাজেদুর রহমান ও মো. নুরুন্নবী।

এদিকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন ইউসুফ, সিয়াম এবং জহুরুল।

এর আগে ছিনতাইয়ের ঘটনা এবং পুলিশের গাফিলতির অফিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট দেন মোবাইল মালিক আহমাদ ওয়াদুদ। ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, আজ (বৃহস্পতিবার) রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরে আমার সঙ্গে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা আমার একটি মোবাইল ফোন এবং কিছু টাকা-পয়সাসহ মানিব্যাগ নিয়ে যায়। আমাকে চাতি দিয়ে কিছু আঘাত করে।

সৌভাগ্যবশত আঘাত গুরুতর নয়। আমার সঙ্গে আমার ছিলেন। একটু দূরে থাকায় তিনি নিরাপদ ছিলেন।
ঘটনাস্থল থেকে মোহাম্মদপুর থানার অবস্থান ৩ মিনিট হাঁটার দূরত্বে। আমি এবং আমার স্ত্রী ঘটনার ৫ মিনিটের মধ্যে থানায় যাই।

সোজা ডিউটি অফিসারের রুমে গিয়ে বলি, ৫ মিনিট আগে তিন রাস্তার মোড়ে আমার সঙ্গে একটি ছিনতাই হয়েছে। তারা আমাকে বললেন, একটু অপেক্ষা করেন, দেখছি।
ডিউটি অফিসারের নাম এসআই জসিম। তার পাশে সাদা পোশাকে একজন পুলিশ সদস্য কাগজে অন্য একজনের অভিযোগ লিখছেন। সাদা পোশাকের ওই পুলিশ সদস্য আমার দিকে আঙুল তাক করে উগ্রভাবে বলেন, আপনার শার্টের বোতাম লাগান। আমি তখনই খেয়াল করলাম, ছিনতাইকারীদের আঘাতের সময় আমার একটি বোতাম খুলে গিয়েছিল। আমি ওই অফিসারের কথায় আহত হলেও কোনো ঝামেলায় না গিয়ে ‘সরি’ বলে বোতামটি লাগিয়ে নিলাম। এরপর তিনি আমাকে আমার সবগুলো বোতাম লাগাতে বললেন। আমার তখন শুধু টাই-বাটন, অর্থাৎ একদম গলার সঙ্গে থাকা বোতামটি খোলা ছিল, যেটা সাধারণত আমরা কখনো লাগাই না। আমি বললাম, প্লিজ আমার অভিযোগটি নিন।

তারা বললেন, অভিযোগ লেখার লোক নেই। আমি তাদের বললাম, আমি নিজেই লিখে দিচ্ছি। আমাকে একটি কাগজ দিন। তারা েক মিনিট পর আমাকে একটি সাদা কাগজ দিলেন। আমি একটি ম দিতে অনুধ করলাম। অফিসার বললেন, আমাদের এক্সট্রা কলম নেই। অথচ সেখানে অনেক কলম পড়ে ছিল।

ভুক্তভোগী আরো লিখেছেন, যাহোক আমার স্ত্রী নিজের ব্যাগ খুঁজে আমাকে একটি কলম দিলেন। আমি সেটা দিয়ে আমার অভিযোগ লিখলাম। ডিউটি অফিসার আমার অভিযোগের কোনো কপি দিলেন না। শুধু আমাকে একটি ফোন নম্বর দিয়ে বললেন, এটা এএসআই আনারুলের নম্বর। উনি এখন বোধহয় হাউজিংয়ে ব্যস্ত আছেন। আপনি ফোনে উনার সঙ্গে কথা বলেন।

আমি তখন তাকে বিনীতভাবে বললাম, আমার ে হয় এখন ঘটনাস্থলে গেলে ওদের পাওয়া যাবে। দয়া করে এমন কাউকে বলুন, যিনি আমাদের সঙ্গে এখন সেখানে যেতে পারবেন। এসআই জসিম আমার কথায় প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বললেন, এটা সম্ভব নয়। ওই এলাকায় ইনি ছাড়া আর কেউ যেতে পারবে না। এটা তার এলাকা। আপনি এখান থেকে এখন চলে যান। ওখানে গিয়ে ছিনতাইকারীদের পাবেন না।

আমি বললাম, আমার ধারণা ওরা ওখানে এখনো আছে। তবে এসআই জসিম বললেন, আপনার কমন সেন্স নাই? ছিনতাইকারী আপনার-আমার জন্য বসে থাকবে নাকি? আমি তবু তাকে অনুরোধ করলাম, কাছেই যেহেতু, যেন একবার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়।

আমি সেখান থেকে বের হয়ে ওসি সাহেবের রুমে যাই। ওসি ইফতেখার হাসান সাদা পোশাকে ছিলেন। আমি তাকে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি বললাম। তিনি বললেন, ‘আমি ওসি হয়েও এই কম দামি ফোন ব্যবহার করি, আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই!’

আমি তার কথায় কোনো উত্তর দিলাম না। আমি তাকে অনুরোধ করলাম, যেন এখনই আমার ছিনতাইয়ের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেন। তিনি পূর্বোক্ত এএসআই আনারুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে তার জন্য বাসস্ট্যান্ড মোড়ে অপেক্ষা করতে বলেন।

আমি বাসস্ট্যান্ডসহ মোট তিনটি পয়েন্ট ঘুরে এএসআই আনারুলের সঙ্গে দেখা করি। তার সঙ্গে আরও সাত-আটজন পুলিশ সদস্য ছিল। আনারুল সাহেব আমার কথা শুনে বলেন, চলেন আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আমি তার সঙ্গে গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে যাই। এর মধ্যে প্রায় ৪০ মিনিট পার হয়ে গেছে। তবে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আমি ওই ছিনতাইকারীদের সেখানেই বসে থাকতে দেখি। আমি দূর থেকে তাদের দেখিয়ে দিলেও এএসআই আনারুল সেখানে না গিয়ে একটু দূরে অন্য একটি জায়গায় গিয়ে কিছু লোকের সঙ্গে কথোপকথন করেন।

মিনিটদুয়েক পর তিনি ফিরে এলে আমি এএসআই আনারুলকে আবার ওই সন্ত্রাসীদের দেখিয়ে দিই। তবে আনারুল সেখানে না গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সন্ত্রাসীরাও পুলিশসহ আমাকে দেখে আস্তে আস্তে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে থাকে। আমি অবাক হয়ে এএসআই আনারুলের দিকে তাকিয়ে থাকি!

আজ দুপুরে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান গণমাধ্যমকে জানান, সন্দেহজনকভাবে তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

বন্দরে দক্ষতা বাড়াতে আন্তর্জাতিক অপারেটর দরকার: চট্টগ্রামে নৌ উপদেষ্টা

নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক অপারেটর দরকার। আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম...

শেখ হাসিনা আমাদের ওপর একটি ফিটনেসবিহীন রাষ্ট্র চাপিয়ে দিয়ে গেছে: নাহিদ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এমন একটা দেশে আমরা বসবাস করি, যেখানে বাসের ও বিমানের...

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩০ বিলিয়ন ডলার

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার কোটি...

স্থিতিশীল সবজির বাজার, দাম কমেছে ইলিশের

রাজধানীর বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে সবজির দাম। সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহ ব্যবধানে ইলিশের দাম কিছুটা কমেছে। শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি...