ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার প্রথম রাতেই এই ঘটনা ঘটলো।
শনিবার ভোর রাতে সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মিয়ারচরে এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয় বলে জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। সকালে ফাহিমের লাশ মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।
মাদারীপুর জেলার পুলিশ সুপার সারোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, সদর উপজেলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মিয়ারচর এলাকায় পুলিশ ফাইজুল্লাহকে নিয়ে ‘জঙ্গিবিরোধী’ অভিযানে গেলে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। এসময় পুলিশের এক সদস্যও আহত হন।
মিয়ারচর এলাকার স্থানীয়রা জানান, একটি ধান ও পাট ক্ষেতের মাঝখানে ফাইজুল্লাহর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।
ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর আগে লাশটি হাসপাতালের সামনে রাখা হয়। সেসময় প্যান্ট ও সাদা রংয়ের গেঞ্জি পরিহিত বুকে গুলিবিদ্ধ ফাইজুল্লাহর হাত পেছন থেকে হ্যান্ডকাফে আটকানো অবস্থায় দেখেছেন সংবাদকর্মীরা।
নিহত ফাহিম রাজধানীর উত্তরার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর সদস্য হিসেবে তিনি মাদারীপুরের ওই শিক্ষক হত্যা চেষ্টায় অংশ নিয়েছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ফাহিমকে শুক্রবার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। শুনানি শেষে বিচারক মো. সাইদুর রহমান ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে ফাহিমকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
গত বুধবার (১৫ জুন) বিকালে সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে জঙ্গি কায়দায় কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে কয়েকজন যুবক।
তারা শহরের কলেজ গেইট এলাকায় রিপনের বাসার কড়া নেড়ে ঘরে ঢোকে এবং এরপর চাপাতি দিয়ে মাথা ও ঘাড়ে আঘাত করে বলে পুলিশের তথ্য।
রিপনের চিৎকারে আশপাশের মানুষ ধাওয়া করে ফাহিমকে আটক করে। আহত শিক্ষককে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে মাদারীপুর সদর থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেন এসআই আইয়ুব আলী। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় একই থানার এসআই বারেক করিম হাওলাদারকে।
থানার ওসি জিয়াউল মোরশেদ জানান, ফাহিম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাচেষ্টায় জড়িত আরও পাঁচজনের নাম বলেন। ওই ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয় মামলার এজাহারে।
ঘটনাস্থল থেকে আটক গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম ছাড়া বাকি পাঁচজন হলেন সালমান তাসকিন, শাহরিয়ার হাসান, জাহিন, রায়হান ও মেজবাহ।
ওসি বলেন, ‘ফাহিম নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে জঙ্গি কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করার পরিকল্পনা নিয়ে মাদারীপুরে প্রথম হামলা চালায় তারা।’
১৮ বছরের ফাহিম উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তবে রসায়ন বিজ্ঞানের পরীক্ষা না দিয়েই সে ১১ জুন সকালে ঢাকার দক্ষিণ খানের বাসা থেকে নিরুদ্দেশ হয়।
একদিন পর ফাহিম তার বাবার মোবাইল ফোনে এসএমএস করে বলে, ‘বিদেশ চলে গেলাম, এছাড়া কোনো উপায় ছিল না। বেঁচে থাকলে আবারও দেখা হবে।’
বিষয়টি জানিয়ে ফাহিমের বাবা গোলাম ফারুক দক্ষিণখান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর বুধবার মাদারীপুরে ছেলের গ্রেফতার হওয়ার খবর পান তিনি।