রাজিবুল ইসলাম রক্তিম
বগুড়া
বগুড়ার শেরপুরে সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে জমির রকম পরিবর্তন না করেই অনুমোদন ছাড়া অবাধে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে জমি ফসল উৎপাদনের উপযোগিতা হারানোর পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাটও। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও জনপ্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্টতা এবং সংশ্লিষ্টটরা নিশ্চুপ থাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান নিশ্চিত না করার কারণেই এমন অবস্থা বিরাজমান বলে ধারণা করেন সুধীজনেরা।
জানা গেছে, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় এই অপকর্ম করছে। ট্রাকে করে হাজার হাজার ট্রাক মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটা সহ বিভিন্ন নির্মানাধীন প্রকল্পে। এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকালে ফসলি জমি-বসতবাড়ি ও চলাচলের গ্রামীণ সড়কগুলো নস্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন এলাকাবাসী।
উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের বড়বিলা এলাকায়, গাড়িদহ ইউনিয়নের শুভগাছা মিসকিপাড়া পুকুর সংস্কারের নামে নির্বিঘ্নে অনেক গভীর থেকে মাটি কাটছে দিনে রাতে , আবার শুভগাছা, ভাতারিয়া , মির্জাপুর ইউনিয়নের কাশিয়াবালা, সাতারা এলাকাতেও মাটি কাটছে অবাধে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মাটিখেকোরা অবাধে মাটি কাটছে। প্রশাসনিক নজরদারী নিয়মিত থাকলে কোন সাহসে এভাবে অবাধে ফসলি জমির মাটি কাটে তা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন রয়ে গেছে।
এদিকে মাটি ব্যবসায়ীদের অবৈধ কর্মকান্ডে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা জানায়, মাটি বিক্রির সিন্ডিকেট চক্রটি এতই প্রভাবশালী যে তাদের ভয়ে জমির মালিকরা কিছু বলতে সাহস পান না। বাধ্য হয়ে ওই প্রভাবশালীদের নিকট জমির মাটি বিক্রি করছে। তবে মাটি কাটা নিয়ে শেরপুর উপজেলার একাধিক ব্যক্তিরা বলেন, কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জুগিয়ে স্বল্পমূল্যে টপ সয়েল কেটে নেবার ফলে অনুর্বর হচ্ছে জমি এবং ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জমির মালিক।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঠ থেকে আমন ধান ওঠার পরপরই ফসলি জমির মাটি বিক্রি শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক ভেকু মেশিন দিয়ে ধানী জমির মাটি প্রায় ৬-৭ ফুট আবার কোন কোন জমিতে ১০-১২ ফুট গভীর করে কেটে শত শত ড্রাম ট্রাক, ট্রাক ও ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন চলমান নির্মানাধীন স্থাপনা বা প্রকল্প এলাকায় এবং মহাসড়কের নির্মাণাধীন প্রকল্পে। মাটি কাটার স্থানে প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত হওয়ার আগেই গাড়ি সরিয়ে নিতে নিজস্ব লোকজন দিয়ে পাহারা বসিয়েছে। প্রশাসনের নজর এড়াতে নিকটস্থ সড়কে গাড়ি চলাচল না করে দূরবর্তী এলাকা হয়ে গভীর রাতে মাটি গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। গ্রাম্য এ রাস্তাগুলোতে অনবরত ট্রাক চলার কারণে আশে পাশের জমিতে , বাড়িঘরে, আমি, কাঁঠাল এবং লিচুর ফুলে ধুলাবালি পড়ায় ফল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী ও খামারিরা। স্থানীয়রা জানায়, মাটি বিক্রেতারা ফসলি জমির ৬-১২ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নেন। এতে করে পাশ্ববর্তী জমিও ফসল উৎপাদনে উপযোগিতা হারিয়ে ফেলবে। যে জমি থেকে মাটি কাটা হয় সেটি থেকে ৫-৬ বছর ধরে ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিকরা বলেন, সহনশীল সাজা হওয়ায় মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্য কমছে না, মাটি কাটার সরঞ্জামাদি জব্দ করা হলেও ২/৪ দিন পরেই মুচলেকা নিয়ে সে গুলোকে আবার ছেড়ে দেওয়া মাটিকাটা কে ত্বরান্বিত করছে। ইটভাটা মালিক, মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে মাটি বিক্রয় করা হচ্ছে। তবে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, প্রভাবশালী গণমাধ্যমকর্মী ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তাঁরা মাটির ব্যাবসা করে বলে জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ বলেন, এই বিষয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান ছিল, অব্যাহত আছে এবং থাকবে।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে অপরাধীরা পালিয়ে যায়, যে কারণে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না। আমি অতীতেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি, এখনও চালু আছে এবং ভবিষ্যতেও চালু থাকবে। এই অনিয়ম রোধ করার জন্য তিনি সর্বস্তরের মানুষের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।