ভূমিকম্প প্রবণ জায়গায় গভীর এক গর্ত খুঁড়ছে কেন ভারতীয়রা?

Date:

Share post:

মহারাষ্ট্রের এই মালভূমিটিতে খোঁড়া হচ্ছে সুগভীর গর্তছবির কপিরাইট SANJAY/RAKESH RAO
Image caption মহারাষ্ট্রের এই মালভূমিটিতে খোঁড়া হচ্ছে সুগভীর গর্ত

ভূমিকম্পের রহস্য কী?

সেই জট খুলবার এক অতি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়ে ভারতের এক পার্বত্য এলাকায় মাটির গভীর থেকে গভীরতর স্থানে গর্ত খুঁড়ে যাচ্ছেন ভূতত্ত্ববিদেরা।

ঠিক যেখানে এই প্রকল্প, সেই জায়গাটির নাম গোথানে। এটি পশ্চিমাঞ্চলীয় মহারাষ্ট্র অঙ্গরাজ্যের তিন হাজার ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট একটি মালভূমি।

চারদিকে পাহাড় আর ঘন জঙ্গল। এই জঙ্গল হচ্ছে এশিয়ান কৃষ্ণসার মৃগ, বুনো শুয়োর আর হরিণের বিচরণ ভূমি।

এখান থেকে দশ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে কোয়েনা নামের এলাকা থেকে ১৯৬৭ সালে উৎপন্ন হয়েছিল ৬.৩ মাত্রার এক বিধ্বংসী ভূমিকম্পের। ওই ভূমিকম্পে ১৭৭ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন, আহত হয়েছিলেন আরও দুই সহস্রাধিক। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ব্যাপক মাত্রার।

এই ভূমিকম্পের মাত্র পাঁচ বছর আগেই ওই এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল একটি বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ বা ড্যাম।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বৃহৎ জলাধার স্থাপনের আদর্শ জায়গা হচ্ছে পাহাড়। কিন্তু এতে ভূত্বকে চাপ বাড়তে পারে এবং ভূপৃষ্ঠকে তা বিপজ্জনকভাবে নাড়া দিতে পারে।

খনি থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ বা ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলনের চেষ্টাও ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

ভূতত্ত্ববিদেরা বিশ্বাস করেন, বিশ্বজুড়ে একশোটিরও বেশী জায়গা আছে, যেখানে বড় জলাধার তৈরি করার কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়েছে।

ছবির কপিরাইট RAKESH P RAO
Image caption কোয়েনার জলবিদ্যুত প্রকল্পের ড্যাম

ভূতত্ত্ববিদদের আরও ধারণা, কোয়েনার জলাধারটি ১৯৬২ সালে যখন এক ট্রিলিয়ন লিটারেরও বেশী পানি দ্বারা পূর্ণ করা হয়, তখনই সেখানে ভূমিকম্পের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।

ভূমিকম্পবিদ হর্ষ কে গুপ্তার মতে, কোয়েনা হচ্ছে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের জন্য পুরো পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে আদর্শ জায়গা।

১৯৬৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর সবচাইতে নিয়মিত ভূমিকম্প ‘হটস্পট’ এই কোয়েনা। এখানে এই সময়ের মধ্যে ৫ থেকে ৫.৯ মাত্রার ২২টি ভূমিকম্প হয়েছে। রিখটার স্কেলে চার মাত্রার বেশী ভূমিকম্প হয়েছে চারশো’র মতো। আর ছোটখাটো ভূমিকম্প এখানে রেকর্ড করা হয়েছে কয়েক হাজার।

ওই এলাকায় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের গভীরতা দুই থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত। সর্বশেষ ভূমিকম্পটি রেকর্ড হয়েছে গত ৩রা জুন, যার মাত্রা ছিল ৩.৮। এসব ভূমিকম্পে অবশ্য গত কয়েক দশকে জানমালের বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

কোয়েনা থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে ওয়ার্না নদীতে ১৯৮৭ সালে আরেকটি জলাধার তৈরি করা হয়।

পাঁচ বছর না যেতেই এটির কাছে ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়।

ভূমিকম্প পরিমাপের বেশীরভাগ যন্ত্রপাতিই হয় ভূপৃষ্ঠের উপরে নয়তো অগভীর কোন গর্তে স্থাপিত।

বিজ্ঞানীরা এখন মনে করছেন, মাটির সুগভীরে গর্ত খুড়ে, ফল্ট এলাকার মধ্যে যন্ত্রপাতি বসিয়েই কার্যকরভাবে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।

ভারতীয় বিজ্ঞানীর অবশ্য এক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের দ্বারা। মার্কিন বিজ্ঞানীরা স্যান আন্দ্রেজের ভূমিকম্প জোনের গভীরে সরাসরি গর্ত খুঁড়েছিলেন ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের জন্য।

ছবির কপিরাইট RAKESH P RAO
Image caption নানারকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে এই বোরহোল খননের জন্য ড্রিল করতে গিয়ে

২০১২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ভূতত্ত্ববিদেরা কোয়েনার নয়টি এলাকায় দেড় কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত গর্ত বা বোরহোল খুঁড়েছেন। গত ডিসেম্বরে তাঁরা পাইলট বোরহোলটি খুঁড়তে শুরু করেন।

নানা রকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দিনরাত কাজ করে ছয় মাস পর গত দুই মাসে তাদের ড্রিল করার যন্ত্রটি মাটির তিন কিলোমিটার গভীরে একটি কঠিন শিলাস্তরে গিয়ে ঠেকে।

সেখানকার তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এই বর্ষা মৌসুম শেষ হলে বিজ্ঞানীদের ইচ্ছে তাঁরা ওই বোরহোলটি দিয়ে সেন্সর, থার্মোমিটার, সিসমোমিটার এবং স্ট্রেসমিটার নামিয়ে দেবেন মাটির গভীরে।

তারপরই মাটির নিচের নানা পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের কাজ শুরু হবে, বলছিলেন ভূপদার্থবিদ ড. সুকান্ত রায়। তিনিই এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তবেই এখানেই শেষ হচ্ছে না।

সবকিছু ঠিক থাকলে তাঁরা আরো গভীরে ড্রিল করবেন, অন্তত পাঁচ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত পৌঁছানোর ইচ্ছে তাদের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...