পটিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার খারগেজি খাল পাশাপাশি দুই সংসদীয় আসনের বিভাজক। দুই পাড়ে সরকারি দলের দুই প্রভাবশালী এমপি। একজন পটিয়ার ও অন্যজন পার্শ্ববর্তী সংসদীয় আসন বোয়ালখালী উপজেলার। দুই সংসদীয় আসনের মাঝখানে পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের বুড়া কালী বাড়ির পাশেই রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ একটি বাঁশের সাঁকো। গত অর্থবছরে বোয়ালখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অধীনে ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এখানে সেতু নির্মাণের টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারের অবহেলায় নির্মাণ কাজ এখনো শুরু হয়নি বলে জানা গেছে।
সাঁকোর দক্ষিণ পাড়ে পটিয়া ও উত্তর পাড়ে বোয়ালখালী উপজেলা। এই দুই উপজেলার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। শুধু তাই নয় এলাকার লোকজন ছাড়াও স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাচীন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বুড়া কালী মন্দিরে স্থানীয়দের প্রতিনিয়ত যাতায়াত। বিশেষ করে এই মন্দিরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ভক্ত হারগেজি খালের ওপর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে শনি ও মঙ্গলবার পূজা-অর্চনা দিতে আসেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পটিয়া-বোয়ালখালী সীমান্তে হারগেজি খালের ওপর বুড়া কালী বাড়ির পাশে রয়েছে এই বাঁশের সাঁকো। প্রতি বছর কালী পূজার সময় দুই উপজেলা থেকে প্রায় দশ হাজার নারী-পুরুষ কালী বাড়িতে ভিড় করে। বুড়া কালী বাড়ির পক্ষ থেকে সাঁকোটি মেরামত করা হয়। ওই সাঁকো দিয়ে পুরো বছর পটিয়া ও বোয়ালখালী সীমান্তের লোকজন যাতায়াত করে থাকে। শত বছর পূর্বে এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য হারগেজি খালের সৃষ্টি হয়। ওই খালের ওপর দিয়ে এলাকার লোকজন চলাচলের জন্য ইটসুরকির গাঁথুনি দিয়ে সেতু নির্মাণ করে। যা বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ভেঙে গেলে তা বাঁশের সাঁকো বানিয়ে চলাচলের জন্য তৈরি করে। খালের দুই পাড়ের বেশির ভাগ লোক হিন্দু ধর্মাবলম্বী। দক্ষিণ পাড়ে ধলঘাট স্কুল এন্ড কলেজ, বুড়া কালী মন্দির, ধলঘাট আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক, প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রীতিলতা ট্রাস্ট, ধলঘাট ক্যাম্প বাজার ও উত্তর পাড়ে বোয়ালখালী উপজেলার উত্তর ভুর্ষি প্রাইমারি স্কুল, নয়াহাট বাজার, আহ্লা দরবার শরীফ, মুকুন্দ রাম হাটসহ আশপাশের লোকজন এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করে থাকে। সাঁকোর পরিবর্তে সেতু নির্মাণ করা হলে রিক্সা, টেম্পু, কার, মাইক্রো নিয়ে চলাচল করা সম্ভব হবে।
পটিয়া সীমান্তের ধলঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রনবীর ঘোষ টুটুন জানান, বুড়া কালী বাড়ির পাশের বাঁশের সাঁকোটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি সেতু হিসেবে নির্মিত হলে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ উপকৃত হবে। প্রতি বছর কালী পূজার সময় দুই উপজেলার সীমান্তের মানুষ ভিড় করে।
ধলঘাট ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ছালামত উল্লাহ মল্ল জানান, তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালীন এলাকার লোকজনের দাবির প্রেক্ষিতে এমপি সামশুল হক চৌধুরী ও বোয়ালখালীর এমপি মাঈনুদ্দিন খান বাদলের সহযোগিতায় হারগেজি খালের ওপর সেতু নির্মাণের টেন্ডার হয়।
বোয়ালখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, গত অর্থবছরে ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের টেন্ডার হয়। চলতি বর্ষা মওসুমের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানির কারণে ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারেনি। বর্ষা মওসুম শেষে সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবর মাসে কাজ শুরু করা হবে।