স্কুলভ্যানে কতটা নিরাপদ আপনার শিশু?

Date:

Share post:

কর্মব্যস্ত ঢাকার জীবনে সন্তানকে স্কুলে নেয়া-আনা সম্ভব না হওয়ায় অনেকেই আশ্রয় নেন স্কুলভ্যান নামক পরিবহন সেবার। এই যাত্রায় শিশুর নিরাপত্তা নিয়ে বাবা-মা, শিক্ষকেরা শঙ্কায় থাকলেও বিকল্প না থাকায় এ থেকে পরিত্রাণের পথও পাচ্ছেন না তারা। স্কুলভ্যানে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী বহন, স্টিলের শক্ত আসন, বেপরোয়া চলাচল, নির্ধারিত স্থানের আগেই নামিয়ে দেয়াসহ নানা অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। লিখেছেন ফয়েজ হিমেল
ঢাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ২৯৫টি; মাধ্যমিক স্কুল আছে ৩৪১টি; কিন্ডারগার্টেন স্কুল আছে হাজারখানেক; উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজ ২১০টি আর ইংলিশ মিডিয়ামসহ নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে অর্ধশতাধিক। স্কুল-কলেজ মিলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ। স্কুলে যাতায়াতের জন্য লাখ লাখ কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের পড়তে হয় দুর্বিষহ কষ্টে। স্কুলবাস নেই, রিকশা মেলে না, সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাওয়া যায় না, বাসে ওঠার জায়গা নেই সে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। স্কুল শুরু ও ছুটির সময় স্কুলবাস না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীই আসা-যাওয়া করে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে। একজন শিক্ষার্থীর জন্য ব্যবহৃত হয় একটি প্রাইভেট কার। ফলে স্কুল চলাকালে রাস্তায় বেড়ে যায় ব্যক্তিগত গাড়ি। আর যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই তাদের আসতে হয় অসহনীয় দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় এ চিত্র আঁতকে ওঠার মতো।
রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় রুবিনা ইসলাম তার মেয়ে ইসরাতকে নিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ইসরাত ভিকারুননিসা নূন স্কুল ধানমন্ডি শাখার নবম শ্রেণীতে পড়ে। পিক আওয়ারের কারণে রাস্তায় তখন সব বাসই পূর্ণ। ৮-১০টি বাসে ওঠার চেষ্টা করে ঘাম ঝরে যায়। রাস্তা ছেড়ে শেষে ফুটপাথে উঠে দাঁড়ান তিনি। রুবিনা বলেন, স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন এভাবে যুদ্ধ করতে হয়। রোববার ও বৃহস্পতিবার অবস্থা আরো খারাপ হয়।
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে দেখা গেল গাড়ির দীর্ঘ জট। এগিয়ে গিয়ে জানা গেল, একটু পরই স্কুলের প্রথম শিফটের শিক্ষার্থীদের ছুটি হবে। শিক্ষার্থীদের নিতে আসা প্রায় দেড় শ’ ব্যক্তিগত গাড়ি তিন সারি করে মূল সড়কে রাখা হয়েছে। এ কারণেই যানজট।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্কুলে যাতায়াতের জন্য শিশুরা স্কুলবাসের ওপরই নির্ভর করে। এতে অভিভাবকেরাও নিশ্চিন্তে থাকেন। আর এতে ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর চাপ কমে। কিন্তু ঢাকায় এ রকম ব্যবস্থা নেই। সরকার ২০১১ সালে আজিমপুর-মিরপুর অংশের মধ্যে ২৬টি স্কুলের ছাত্রছাত্রী পরিবহনের জন্য ৫২ আসনের ১৪টি স্কুলবাস চালু করেছিল। লোকসানের অজুহাতে সেগুলো তিন মাসের মাথায় অনিয়মিত হয়ে এখন প্রায় বন্ধ রয়েছে। কিছু অভিজাত স্কুল নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে। বেশির ভাগ স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা খুপরি ঘরের মতো অননুমোদিত ভ্যানে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। আর অন্য একটি অংশ পরিবহন না থাকায় হেঁটে, রিকশায় অথবা বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে আসা-যাওয়া করছে।
স্কুলবাস না থাকায় রাজধানীতে চলছে বেশ কিছু স্কুলভ্যান। সাড়ে চার ফিট বাই আড়াই ফিট আয়তনের তিন চাকার হালকা এ গাড়ির কাঠামো সম্পূর্ণই পাতলা লোহার পাত ও প্লেনশিটের। দুই পাশের বসার জায়গা সাত থেকে আট ইঞ্চির বেশি নয়। এই ভ্যানগুলো রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কেও চলতে দেখা যায়।
রাজধানীর স্কুলে ছাত্রছাত্রী পরিবহনে মাইক্রোবাস সার্ভিসও রয়েছে। যেসব মাইক্রো রেন্ট-এ-কারে চালানো সম্ভব নয় কিংবা ফিটনেস নেই সেগুলোই এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। দেখা গেছে, এ ধরনের বাসে গাদাগাদি করে ছাত্রছাত্রীদের বসানো হয়।

বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসছে যানবাহন। ডানে গাড়ি, বাঁয়েও গাড়ি। সেসবের তোয়াক্কা না করেই শিশুদের নিয়ে ছুটে চলেছেন ভ্যানচালক। তিন চাকার রিকশা-ভ্যানের ওপর পাঁচ ফুট বাই তিন ফুটের খাঁচা। চলতি নাম ‘স্কুলভ্যান’। ঢাকার রাস্তায় চলা এ ভ্যানগুলো সিটি করপোরেশনে নিবন্ধিত নয়। এগুলোতে দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে। স্কুলগুলো সচরাচর এসব ভ্যানের দায়িত্ব নেয় না। দূরত্ব অনুযায়ী স্কুলভ্যানে শিক্ষার্থীপ্রতি মাসিক ভাড়া ৮০০ থেকে ৩৫০০ টাকা।
স্কুল কর্তৃপক্ষ, ট্রাফিক বিভাগ বা অভিভাবকেরা কেউই এই বাহনগুলোকে শিশুদের জন্য নিরাপদ বলে মনে করছেন না। স্কুলভ্যানগুলোর নিরাপত্তাঝুঁকি অনেক। তিন চাকার এ গাড়িগুলোর ভারসাম্য রাখা কঠিন। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। চালকদের জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই। তাই তাদের দায়িত্ববোধও নেই। জ্যামে পড়লে ভ্যানওয়ালারা শিশুদের রাস্তার মধ্যেই একা ছেড়ে দেয়। এ ছাড়াও যানজট থাকলে স্কুলভ্যানগুলো উল্টোপথে চলে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে।
বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই রাষ্ট্রীয়ভাবেই নিয়ম আছে শিশুকে পিক করবে স্কুলবাস। মূল সড়কে নির্দিষ্ট পয়েন্ট করা আছে। ওই পর্যন্ত অভিভাবকেরা তাদের সন্তানকে পৌঁছে দেন। এরপর অবশ্যই স্কুলবাসে ওঠতে হবে। স্কুলের সামনে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আসার কোনো সুযোগই নেই। আমাদের দেশেও একই ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও সরকার যৌথভাবে অথবা যে যার মতো করে স্কুলবাসের ব্যবস্থা করতে পারে। তবে তাদের মধ্যে অবশ্যই সমন্বয় থাকতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...