শিশু গৃহকর্মী আদুরিকে নির্যাতনের মামলার প্রধান আসামি নওরিন জাহান নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া নগদ এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও একবছর কারগারে থাকতে হবে তাকে।
মঙ্গলবার সকালে ঢাকার তিন নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচার জয়শ্রী সমদ্দার এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলার অপর আসামি নদীর মা ইসরাত জাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
শিশু আদুরির নির্যাতনের ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত ছিল। ওই ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে।
২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্লবীর ডিওএইচএস এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে অর্ধমৃত অবস্থায় আদুরিকে উদ্ধার করা হয়। সে পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠির কৌরাখালি গ্রামের মৃত খালেক মৃধার ছোট মেয়ে। সে এখন একটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
রাজধানীর পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের ২৯/১, সুলতানা প্যালেসের দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীর বাসায় কাজ করত আদুরী। শিশু আদুরীর ওপর গৃহকর্ত্রী নদী ও তার মা ইসরাত জাহান পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। খুন্তি, গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা ছাড়াও চাকু ও ব্লেড দিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে নদী মনে করে সে মারা গেছে। পরে তাকে রাজধানীর পল্লবীর ডিওএইচএস এলাকার একটি ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়। সেখান থেকে আদুরীকে অর্ধমৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তার শরীর ছিল ক্ষত-বিক্ষত। দগদগে ঘাঁ ভেসেছিল জরাজীর্ণ শরীরে।
উদ্ধারের পর আদুরীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেড়মাস চিকিৎসার পর সুস্থ হলে ৩ নভেম্বর পরিবারের কাছে আদুরিকে হস্তান্তর করা হয়। ওই ঘটনায় ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পল্লবী থানায় নওরীন জাহান নদী, তার স্বামী সাইফুল ইসলাম মাসুদ, মাসুদের দুলাভাই চুন্নু মীর ও তাদের আত্মীয় রনিকে আসামি করে মামলা করা হয়। তবে পুলিশি তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিট থেকে মাসুদ, চুন্নু মীর ও রনির নাম বাদ যায়। এছাড়া তদন্তে নদীর মা ইসরাত জাহানের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় নতুন করে তাকে আসামি করা হয়। মামলার পর ২৬ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয় নদীকে। সেই থেকে নদী কারাগারে আছেন। জামিনে ছিলেন তার মা ইসরাত জাহান।