দ্বীপটি যে ‘ভূতুড়ে’ তা নাম থেকেই পরিষ্কার। এই দ্বীপে নাকি ঘুরে বেড়ায় লক্ষ লক্ষ আত্মা। পরিত্যক্ত বেল হাউস থেকে যখন তখন নাকি শোনা যায় ঘণ্টার শব্দ।
১৮ একর জমির উপর রয়েছে এই দ্বীপ। অতীতে এই দ্বীপে মানুষের যাতায়াত ছিল। ১৭৭৬ সালে এই দ্বীপটিই ছিল ভেনিসে প্রবেশের চেকপয়েন্ট। ভেনিসে প্রবেশের জন্য যাত্রিবাহী এবং মালবাহী সমস্ত জাহাজকে এই দ্বীপে আসতেই হত।
একসময়ের অত্যন্ত প্রাণবন্ত দ্বীপ আজ ভূতুড়ে। হয়ে উঠেছে বিশ্বের ভয়ঙ্করতম দ্বীপ।
কী ঘটেছিল এই দ্বীপে?
সে সময় প্লেগের প্রকোপ শুরু হয় ভেনিসে। দেখা যায়, অন্য দেশ থেকে আসা জাহাজ থেকেই এই রোগ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে।
মহামারির আকার নিয়েছিল প্লেগ। সংক্রমণ আটকাতে এই দ্বীপটিকে বেছে নেয় প্রশাসন। সমস্ত প্লেগ রোগীকে চিহ্নিত করে এই দ্বীপে রেখে আসা শুরু হল। থাকার ব্যবস্থা করতে একটি বিশাল বাড়ি বানানো হয়েছিল। সেই বাড়িতেই ওই রোগীদের রাখা হয়েছিল।
কিন্তু ক্রমে রোগীর সংখ্যা এতটাই বেড়ে গেল যে সকলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়নি। চিকিৎসার অভাবে প্রাণ যেতে শুরু হল। মৃতের সংখ্যা এতটাই বেড়ে গেল যে দ্বীপে কবর দেওয়ার জন্য জায়গার অভাব দেখা দিল।
ওই সময় ১ লাখ ৬০ হাজার রোগীর দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এই দ্বীপে। ওই দ্বীপে পা রাখলে এখনও মাটির উপরে ছাইয়ের আস্তরণ চোখে পড়বে।
১৯২২ সাল পর্যন্ত এ ভাবেই পড়েছিল দ্বীপটি। প্লেগের প্রকোপ সম্পূর্ণরূপে চলে যাওয়ার পর দ্বীপের ওই বাড়িটিকে মানসিক হাসপাতালে পরিণত করা হয়।
সমস্যার সূত্রপাত তখন থেকেই। মানসিক হাসপাতালের সমস্ত রোগী এবং চিকিৎসকেরা দাবি করলেন তাঁরা ‘আত্মা’র অস্তিত্ব টের পেয়েছেন।
সেটা ছিল ১৯৬৮ সাল। শোনা যায়, ‘ভূতের ভয়ে’ একবার এক চিকিৎসক দ্বীপের বেল হাউস থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।
তার পর থেকেই পুরোপুরি পরিত্যক্ত এই দ্বীপ। যাঁরাই সেখানে গিয়েছেন, দাবি করেছেন ‘আত্মা’র অস্তিত্ব টের পেয়েছেন। বন্ধ বেল হাউসের ঘণ্টার আওয়াজও নাকি শুনেছেন তাঁরা।
সম্প্রতি এই দ্বীপে যান ব্রিটিশ অনুসন্ধানকারী ম্যাট নাদিন এবং অ্যান্ডি থম্পসন। তাঁদের ক্যামেরায় দ্বীপের যে ছবি ধরা পড়েছে, তা সত্যিই ভয়ঙ্কর।
বাড়িটিকে গ্রাস করেছে প্রকৃতি। কংক্রিটের সিঁড়ি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে গাছের মোটা শিকড়। বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখার সময় ম্যাট এবং অ্যান্ডির কানেও নাকি ভেসে এসেছে সেই ঘণ্টার শব্দ।