লন্ডনের স্কুলগুলোত বাংলা গান শেখান গৌরী চৌধুরী। তিনি বলছেন, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বাচ্চারা ছাড়াও ব্রিটেনের স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ ছেলেমেয়েরাও খুবই আনন্দের সাথে বাংলা গান গায়।
তাদের অংশগ্রহণে সম্প্রতি এরকম বেশ কয়েকটি কনসার্ট পরিচালনা করেছেন তিনি।
তাদেরকে তিনি শিখিয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ এবং লোকসঙ্গীত শিল্পী শাহ আব্দুল করিমের ‘গাড়ি চলে না, চলে নারে’র মতো গানও।
তিনি বলেন, “বাচ্চারা খুবই মজা করে, দল বেঁধে উৎসবের মতো করে এসব গান গায়। স্থানীয় ব্রিটিশ ছেলেমেয়েরাও নাচতে নাচতে গায় আমার মাইঝা ভাই, আমার সাইঝা ভাই কই গেলারে।”
লন্ডনের একটি কাউন্সিল নিউহ্যামে এশিয়ান মিউজিকের শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন গৌরী চৌধুরী।
এই কাউন্সিলের ৪০টির মতো স্কুলের গানের শিক্ষকদের গান শেখান তিনি। তারপর প্রত্যেকটি স্কুলের ক্লাস রুমে গিয়ে গিয়ে বাচ্চাদের শেখান।
তারপর সব স্কুলের সব ছাত্রছাত্রীকে নিয়েও তিনি গান করেন রয়্যাল আলবার্ট একাডেমির মতো বিশ্বখ্যাত কনসার্ট হলে।
নিউহ্যাম ইয়ং পিপল কয়ার গ্রুপের বারশোরও বেশি শিক্ষার্থীদের নিয়েও বিশ্ব সঙ্গীত উৎসবে গান করেছেন তিনি।
এই উৎসবে ৪০টি স্কুলের বাচ্চারা পৃথিবীর সব ভাষায় গান গেয়েছে।
“প্রথমে তারা বলেছিলো বলিউডের গান দেওয়ার জন্যে। কিন্তু আমি সেটা চাইনি। তাদেরকে আমি রবীন্দ্রনাথের ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলোরে’ এই গানটি শেখাই। তারপর দেখি যে তারা বাংলা গানকে খুব পছন্দ করেছে,” বলেন গৌরী চৌধুরী।
তিনি বলেন, শেখানোর আগে তার খুব কষ্ট হয়। কিন্তু পরে যখন বাচ্চারা ওই গান গায় তখন সেই আনন্দ সব কষ্টকে ছাপিয়ে যায়।
কুইন এলিজাবেথ হলেও তিনি গান করিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের দেড়শোতম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে। সেখানে শিশুরা গেয়েছে রবীন্দ্রনাথেরই গান – যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে…।
বাংলাদেশী বাচ্চাদেরও ব্যক্তিগত উদ্যোগে গান শেখান গৌরী চৌধুরী। বর্তমানে তার ৩০জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রী। তিনি জানান, বাবা মায়েরা খুব কষ্ট করে তাদেরকে গান শেখান। বাচ্চারা প্রথমে শিখতে চায় না। কিন্তু পরে তারাও অনেক মজা পেয়ে যায়।
তবে ইদানীং তাকে প্রায়ই শুনতে হয় যে গান গাওয়া ভালো না। তিনি বলেন, কেন এরকম বলা হয় সেটা তিনি বুঝতে পারছেন না। তার মতে, বাংলা গানের মাধ্যমেই শিশুরা বাংলা ভাষা শিখতে পারে তাই তাদেরকে গান শেখালে নিজেদের দেশের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
ব্রিটেনে ২৮ বছর ধরে গান করছেন গৌরী চৌধুরী।
১৮ বছর বয়সে সিলেটের ছাতকের মেয়ে গৌরী এসেছিলেন ব্রিটেনে। তার আগেই সিলেট বেতারে গান গেয়ে খুব নাম করে ফেলেছিলেন তিনি।
প্রত্যেক শনিবার একটি অনুষ্ঠান হতো- অনুরোধের আসর। সেখানে বাজানো হতো তার গাওয়া রাধারমণের একটি গান – ভ্রমর কইও গিয়া। এই গান দিয়েই তিনি সিলেটের মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন।
তিনি জানান, পরে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে এই গানটি করেছিলেন। টেলিভিশন সেন্টারের ভেতরেই তখন সাড়া পরে গিয়েছিলো যে সিলেটের একটি মেয়ে এই গানটি খুব সুন্দর করে গেয়েছে। কিন্তু কোন এক কারণে সেটি আর প্রচার করা হয়নি। পরে এই গানটি গেয়েছিলেন জনপ্রিয় আরেক শিল্পী দিলরুবা খান।
গৌরী চৌধুরী শুধু ব্রিটেনের সঙ্গীত-প্রেমী বাংলাদেশীদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত নাম নন, ইউরোপের বিভিন্ন শহরেও কনসার্ট করতে ছুটে যান তিনি।
এতো বছর ধরে গান করলেও এখন পর্যন্ত তার কোন অ্যালবাম প্রকাশিত হয়নি। এজন্যে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের নামকরা এক শিল্পী তার গানের অ্যালবাম বের করবেন বলে অর্থ নিয়েও তিনি সেটি আর করেননি। ফলে তিনি খুব কষ্ট পেয়েছেন। এবং পরে আর কখনো তার অ্যালবাম করার কথা মনে হয়নি।
গৌরী চৌধুরী জানান, তিনি এখন নিজেই চেষ্টা করছেন রাধারমণের গানের একটি অ্যালবাম বের করার জন্যে।
গৌরী চৌধুরীর এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান। শুনতে চাইলে উপরের অডিও লিঙ্কে ক্লিক করুন।