চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২২নং এনায়েত বাজার ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী এক নির্যাতিত সাবেক ছাত্রনেতার আবেগগন স্ট্যাটাস।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের কাছে আমার খোলা চিঠি:
নেতৃবৃন্দ ও সহযোদ্ধা ভাইবোনেরা,
আসসলামু আলাইকুম,
আমার সালাম,আদাব ও শুভেচ্ছা নিবেন। আগামী ২৯শে মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে আমি ২২নং এনায়েত বাজার ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এর আগেও আমি নির্বাচন করেছিলাম; তখন দলের একাধিক প্রার্থী থাকার কারণে জয়লাভ করতে পারিনি। এবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল একজন প্রার্থীকে দল থেকে মনোনয়ন দিবে এবং বলা হয়েছিল যে, যারা দীর্ঘদিন থেকে সংগঠনের সাথে জড়িত আছে- ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে, আওয়ামীলীগে আছে এবং আন্দোলন-সংগ্রাম আর সংগঠনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে, এরকম প্রার্থীকে মনোনয়ন দিবে। তাই আশার বুক বেঁধে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছিলাম। মনে করেছিলাম আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে দল আমাকে মনোনয়ন দিবে। সেই ‘৭৫ সাল থেকে শুরু করেছি।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের দিন ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালে খেলার মাঠে কালো পতাকা উত্তোলন করার অপরাধে সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিরোধ সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি, সেই কিশোর বয়সে। মুজিব হত্যার বিচার চেয়ে রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার লাগানো, চিকা মারা, গোপনে মিটিং-মিছিল করা ইত্যাদি কাজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অংশগ্রহণ করেছি। সাময়িক জান্তা জিয়ার শাসনামলে ‘৭৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে এই এনায়েত বাজার এলাকায় মাত্র ১০ থেকে ১২ জন কর্মী নিয়ে নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। অবশ্য তখন যারা আমাদের বিরুদ্ধে ছিল, আমাদের বাড়ি-ঘরে হামলা করেছিল, রাস্তার মোড়ে, অলিতে-গলিতে আটা, রুটি লটকে দিয়েছিল, তারা এখন এলাকার আওয়ামীলীগের নেতা। যারা একসময় মাইক লাগিয়ে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে গালিগালাজ করতো, তারা আজকে বিভিন্ন জায়গায় জনপ্রতিনিধি ও দলের শীর্ষ স্থানীয় পদে আসীন হয়ে আছেন। আর আমি অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। সামান্য একটি কাউন্সিলর পদের জন্য দলের কাছে আবেদন করেছিলাম। আর দল দীর্ঘ ৪৫ বছরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে মূল্যায়ন করতে কৃপণতা করল!
আমার এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় একসময় যারা জামায়াত-বিএনপি করতো,যাদের পূর্ব পুরুষ ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল,পাক-হানাদার বাহিনীর সহযোগী, শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল,তাদেরকে পুরস্কার স্বরূপ দল মনোনয়ন দিল!
আমি সংগঠনের অত্যন্ত দুঃসময়ে যখন ছাত্রলীগ, আওয়ামীলীগের নাম মুখে নিলে নির্যাতন-নিপীড়ন নেমে আসতো, সেই সময়ে এনায়েত বাজার এলাকায় ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেছিলাম। সাময়িক জান্তার রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে সাম্প্রদায়িক শক্তি জামায়াত-শিবিরকে পরাজিত করে সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ছাত্র সংসদের ভি.পি. নির্বাচিত হয়েছিলাম। ছাত্রলীগ মহানগর ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্ব দিয়েছি ও মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি।
স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র গণ আন্দোলন সংগঠিত করেছি। চার সদস্য বিশিষ্ট সংগ্রাম কমিটির একজন সদস্য ছিলাম। দীর্ঘ ৯ বছরের রক্তক্ষয়ী আন্দোলন সংগ্রাম করে এরশাদের পতন ঘটিয়েছি। সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ পেয়েও যোগদান করিনি, কারণ আমাদের শপথ ছিল খুনি এরশাদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত না করে ঘরে ফিরে যাব না।
‘৯৬ অসহযোগ আন্দোলনে চট্টলবীর আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রেফতার হওয়ার সময় আমিও ওনার সাথে ছিলাম, সিটি কর্পোরেশনের অফিস থেকে বের হয়ে দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে আন্দোলনের দাবানল জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। সেই ইতিহাস হয়তো আজকে যারা নব্য আওয়ামীলীগ তারা না জানলেও আমার পুরনো নেতৃবৃন্দরা সবাই জানেন। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দুই বার গুলির মুখে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিলেন, একবার বন্দরটিলায় আরেকবার পাহাড়তলী আমবাগানে। দুই বারই আমি ওনার সাথে ছিলাম, মৃত্যু ভয়ে ওনাকে রেখে পালিয়ে যায়নি।
চট্টগ্রাম শহরে বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, সমস্ত আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে মাঠে-ময়দানে থেকে সংগ্রাম করেছি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করিনি।
দল হয়তো আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের কর্মকাণ্ডকে ত্যাগ-তিতিক্ষার কারণে আমাকে অযোগ্য মনে করেছে! আর যারা হাইব্রিড, যাদের কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ইতিহাস নেই, বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামীলীগের সুদিনে দলে যোগদান করেছে, তাদের যোগ্য মনে করেছে!
আওয়ামীলীগের একজন তৃণমূলের কর্মী হিসেবে আমি দলের সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত মনে করে বলব,আমি আছি, আমি থাকব মুজিব রণাঙ্গনের একজন সৈনিক হিসেবে।
অতীতের মতো সবসময় সব কর্মকাণ্ডে আমাকে পাবেন, কারণ আমি জানি সুদিনে যারা আছে দুর্দিনে তারা থাকবেনা, যা অতীতে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। আমাদেরকেই আবার দুর্দিনে থাকতে হবে কারণ আমাদের রক্তের শিরায় শিরায় বঙ্গবন্ধু, আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনার আদর্শ প্রবাহিত।
পরিশেষে আগামী ২৯শে মার্চ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে সবাইকে আটঘাট বেঁধে নেমে পড়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে শেষ করছি।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।