
বাংলাদেশের আলোচিত আনসার বিদ্রোহের ঘটনায় খালাস পাওয়া ব্যক্তিদের চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
তেইশ বছর আগের ওই বিদ্রোহের অভিযোগ থেকে খালাস পান ১ হাজার ৪৪৭ জন। তবে তাদের মধ্যে যাদের বয়স ও শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে, তাদেরকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আর যাদের চাকরির বয়স শেষ, তারা চাকরিতে যতদিন ছিলেন তাদেরকে ততদিনের পেনশন সুবিধা দেয়ার জন্যও সরকারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আদালতে শুনানিতে আনসার সদস্যদের পক্ষে একজন ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মো: জাহাঙ্গীর হোসেন । তিনি বিবিসি বাংলাকে জানান, রায়ের আদেশ পাওয়ার চার মাসের মধ্যে চাকরিচ্যুত সক্ষম ব্যক্তিদের পুনর্বহাল করতে হবে।
তিনি বলেন, “যারা সক্ষম, যেদিন থেকে তারা কাজে যোগ দেবেন, সেদিন থেকে তারা বেতন পাবেন। আর যারা অক্ষম, তারা যেদিন পর্যন্ত কাজ করেছেন, ততদিন পর্যন্ত পেনশন সুবিধা পাবেন”।
তিনি আরও জানান, আদালত প্রত্যেককে যে যে পদে ছিলেন সেই পদে নিয়োগের জন্য বলেছে। মানবিক দিক বিবেচনায় আদালত এই নির্দেশনা দেয় বলে জানান এই আইনজীবী।
এ বিষয়ে এর আগে দুটি কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছিল আদালত।
সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে সোমবার রায় দেয়া হল। এ রায়ের পর সরকার পক্ষ চাইলে আপিল করতে পারবে।
কী ঘটেছিল সেদিন?
১৯৯৪ সাল।
আনসার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়।
পরে তা বিদ্রোহ হিসেবে রূপ নেয় ৩০শে নভেম্বর ।
এরপর ৪ঠা ডিসেম্বর ঐ বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেনাবাহিনী, বিডিআর ও পুলিশের সহযোগিতায়। আর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন তাদের অনেকে।
ওই ঘটনায় সরকারি হিসেবে দুইজন আনসার সদস্য নিহত হওয়ার কথা জানা যায়।
ঘটনার পরে শাস্তি হিসেবে দুই হাজার ৪৯৬ জন আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার ও চাকরিচ্যুত করা হয়, জানায় আনসার কর্তৃপক্ষ।
একজন আনসার সদস্যের বর্ণনায় বিদ্রোহের ঘটনাপঞ্জি
ইউনুস আলী তালুকদার। আনসার বিদ্রোহের ঘটনার সময় তিনি কোম্পানি উপ-অধিনায়ক হিসেবে আনসার একাডেমীতে কর্মরত ছিলেন গাজীপুরে।
সরকারি আইন অনুসারে যেহেতু ৫৯ বছরর পর্যন্ত চাকরি করা যায় সেক্ষেত্রে তার চাকরির বয়স এখনো রয়েছে এবং তিনি আদালতের নির্দেশনা অনুসারে কাজে যোগ দিতে পারবেন বলে আশা করেন।
১৯৮০ সালে তিনি বহিনীতে নিয়োগ পান। বিদ্রোহের ঘটনার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে তাকে মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং চাকরিচ্যুত করা হয়।
তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, সেদিনের ঘটনার স্মৃতি সম্পর্কে।
মি. আলী বলেন, “আনসার সদস্যরা তাদের দীর্ঘদিনের দাবি দাওয়ার পক্ষে তারা কথা বলেছিলেন। তাদের বেতন-রেশন খুবই অল্প ছিল। তা দিয়ে সংসার চালানো খুবই কঠিন সেটাই তুলে ধরা হয়েছিল একটি দরবারে।”
তিনি বলেন, এটা ছিল ১৯৯৪ সালের পয়লা ডিসেম্বরের ঘটনা। এরপর ৪ঠা ডিসেম্বর বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আনা হয় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিডিআর সদস্যদের সহায়তায়।
মি. আলী জানান, “আমি গণ্ডগোলের পরও চাকুরিরত ছিলাম। পরে সন্দেহমূলক-ভাবে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিই এবং বিচারিক আদালতে শেষপর্যন্ত লড়াই করে বেকসুর খালাস পাই”।
এবার চাকরি ফিরে পাবো বলে আশা করি, বলেন ইউনুস আলী তালুকদার।