ভারতে মোবাইল পেমেন্ট ব্যাঙ্কের ক্রমবর্ধমান ব্যবসায় নতুন এক মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে গুগল – তারা এবার সাধারণ মানুষকে খুব সহজে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে ঘোষণা করেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলির অন্যতম গুগল দিল্লিতে তাদের বার্ষিক ইভেন্টে আরও জানিয়েছে, তারা এ জন্য ভারতের চারটি ব্যাঙ্কের সঙ্গে গাঁটছড়াও বেঁধেছে।
এই ব্যবস্থায় ভারতীয়রা তাদের মোবাইল ফোন থেকেই গুগলের অ্যাপ ব্যবহার করে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঋণ পেতে পারবেন বলে বলা হচ্ছে – কোনও ফর্ম পূরণ করার ঝামেলাই থাকবে না।
সারা পৃথিবীতে ভারতেই প্রথম গুগল এ ধরনের পরিষেবা দিতে চলেছে। পরে অবশ্য অন্য নানা দেশেও তা চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।
ভারতে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার বিরাট একটা দুর্বলতা হল, ‘ব্রিক অ্যান্ড মর্টার’ মডেল বা ইট-কাঠ-সিমেন্টের ব্যাঙ্কিং শাখা এই বিশাল দেশে যথেষ্ট সংখ্যায় নেই।
আর সে কারণেই কোটি কোটি ভারতীয় এখনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতেই পারেননি – বা খুললেও তার কোনও ব্যবহারই করতে পারেন না তারা।
কিন্তু গত কয়েক বছরে মোবাইল ফোন-ভিত্তিক পেমেন্টস ব্যাঙ্কগুলো ভারতে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে একটা বিপ্লব এনে দিয়েছে।
পেটিএম, ফোনপে, এয়ারেটল ব্যাঙ্কের মতো সংস্থাগুলো স্রেফ একটা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই এনে দিচ্ছে ব্যাঙ্কিংয়ের হাজারো সুবিধা।
তবে এই সব পেমেন্টস ব্যাঙ্কে ঋণ চাওয়ার কোনও সুবিধা এতদিন ছিল না – কিন্তু সেই অভাবটাও এবার পূর্ণ করতে যাচ্ছে গুগল।
গুগলের নেক্সট বিলিয়ন ইউজারস ইনিশিয়েটিভ ও পেমেন্টসের ভাইস-প্রেসিডেন্ট সিজার সেনগুপ্ত দিল্লিতে বলেছেন, “আমাদের সবারই কখনও কলেজের ফি, কখনও বাড়িঘর মেরামত বা বিয়ে-শাদি ইত্যাদি নানা কারণে হঠাৎ লোনের দরকার পড়ে। কিন্তু ভারতে ঋণ পাওয়াটা খুব কঠিন – জটিল একটা প্রক্রিয়া সেটা, অনেক কাগজপত্রর ঝামেলা।”
“এখন এ দেশের মানুষ যাতে সহজে, দ্রুত লোন পেতে পারে সে জন্যই ভারতে চারটি পার্টনার ব্যাঙ্কের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছে – যাতে গুগল পে-তে গ্রাহকদের আগে থেকেই অনুমোদিত এই ঋণ অফার করা হবে। আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।”
গুগলের কর্মকর্তারা আরও জানাচ্ছেন, ঋণের আবেদন করার মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ে যাবে – কোনও ফর্ম ভরার কোনও ঝামেলাই থাকবে না।
ভারতে মোবাইল ফোনে লেনদেনের জন্য গুগল বছর-খানেক আগে লঞ্চ করেছিল তাদের নিজস্ব অ্যাপ ‘তেজ’, হিন্দিতে যার মানে হল তীব্র গতি।
মাত্র কয়েকমাসের মধ্যেই তেজ বেশ জনপ্রিয় হয়েছে, কিন্তু এখন ঋণ দেওয়ার ব্যবসায় নামার আগে সেই তেজ ব্র্যান্ডের তারা নতুন নামকরণ করছে ‘গুগল পে’।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, আর্থিক লেনদেনের দুনিয়ায় ভারত এমন একটি বাজার যেখানে গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ডের তুলনায় স্মার্টফোন ব্যবহার করতেই বেশি পছন্দ করেন।
অর্থাৎ, ওয়ালেট থেকে প্লাস্টিক কার্ড বের করে পেমেন্ট করার বদলে তারা মোবাইলের অ্যাপ থেকে টাকাপয়সা মেটাতেই বেশি স্বচ্ছন্দ।
সারা বিশ্বের লগ্নিকারীরাই যে ভারতে মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ে বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন, তার প্রমাণ মাত্র দুদিন আগেই ভারতের বৃহত্তম ডিজিটাল পেমেন্টস সংস্থা পেটিএমে বিরাট অঙ্কের লগ্নি করেছে ওয়ারেন বাফে-র বার্কশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ে।
গুগলও যে এখন মোবাইলে লোন দেওয়ার ব্যবসায় ঝাঁপ দিলো, তাতে একেবারে অবাক নন পেটিএম পেমেন্টস ব্যাঙ্কের সাবেক প্রধান শিনজিনি কুমার।
মিস কুমার বলছিলেন, “ভারতে দুটো বড় সমস্যা – টাকাপয়সার ডিজিটাইজেশন করা আর সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাঙ্কিং অ্যাকসেস পৌঁছে দেওয়া। মোবাইল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্লেয়ার এখন ঠিক সেটাই করতে চাইছে, আর গুগল যে তাতে একধাপ এগিয়ে থাকতে চাইবে তা তো বলাই বাহুল্য।”
গুগলও জানাচ্ছে, তারা অফলাইন গুগল ম্যাপের মতো আইডিয়া প্রথম চালু করেছিল ভারতেই – পরে যা সারা দুনিয়াতেই ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছে।
ভারতে মোবাইল ফোনে ইনস্ট্যান্ট বা চটজলদি লোনের ভাবনাও গুগলের জন্য আর একটি গ্লোবাল গেমচেঞ্জার হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।