বাংলাদেশে আটক শিক্ষার্থীদের জামিন: কঠোর সরকার হঠাৎ নমনীয় কেন?

Date:

Share post:

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবীতে গড়ে উঠা আন্দোলনের জের ধরে যাদের আটক করা হয়েছিলো তাদের প্রায় সবাই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

খ্যাতিমান ফটো সাংবাদিক শহীদুল আলম এখনো জামিন না পেলেও মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে কোটা আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক লুৎফুন্নাহার লুমার।

অথচ কিছুদিন আগেই ব্যাপক অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিকে আটক করে নানা অভিযোগে তাদের নামে মামলাও দেয়া হয়েছিলো। তাহলে আবার হঠাৎ করেই তাদের প্রতি নমনীয়তা দেখানোর কারণ কি?

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলছেন কোন চাপ বা রাজনীতি নয় বরং মানবিক কারণেই আটককৃতদের জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেনি সরকারি কৌসুলিরা। এর মধ্যে আর কোন রাজনীতি ছিলোনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

“প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন আটককৃতরা আবেদন করলে যেনো জামিনের বিরোধিতা না করা হয়, যাতে তারা পরিবারের সাথে ঈদ করতে পারে। তবে মামলা তদন্ত চলছে। তদন্ত অনুযায়ী মামলা চলবে”।

কিন্তু হঠাৎ করে ব্যাপক অভিযানে গ্রেফতারের পর আবার হঠাৎ করে জামিনে মুক্তির এই নমনীয়তার কারণ কী?

জবাবে মিস্টার হক, “এই সরকার জনগণের সরকার। জনগণের যেভাবে সুবিধা হবে সেটাই সরকার করবে। এখানে রাজনীতি বা অন্য কিছু নেই।”

তবে কোটা সংস্কারের দাবীতে চলতি বছরের শুরু থেকে গড়ে ওঠা আন্দোলনের একজন সক্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের একজন শিক্ষার্থী বলেন কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন- শিক্ষার্থীদের দুটি আন্দোলনকেই সরকার নিজেই রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করেও পারেনি আর সে কারণেই শুরুতে কঠোরতা দেখালেও জনমত বিবেচনা করেই আটককৃতদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, “সরকার এ আন্দোলন রাজনৈতিক ভেবে ভুল করেছে। সরকার যে আসলে কঠোর জায়গা থেকে নরম হয়েছে সেটা সবাইকে স্বস্তি দিয়েছে”।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠকদের বেশিরভাগকেই আটক করা হয়েছিলো গত মাসেই। এর মধ্যেই ২৯শে জুলাই বাস চাপায় দু স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর গড়ে ওঠে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন।

এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অর্ধশত মামলায় প্রায় একশ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। পরে অনেকের জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বেড়ে যায় সব মহলেই। পরে তাদের আটকের প্রতিবাদে সোচ্চার হন অনেকেই।

সরকারের তরফ থেকে প্রথমে শক্ত অবস্থান দেখা গেলেও পরে সে অবস্থান থেকে সরে আসে সরকার। ফলে আটক শিক্ষার্থীদের অনেকেই পরে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে আসে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বলছেন জনমত আর সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতিই সরকারকে বাধ্য করেছে আটক শিক্ষার্থীদের প্রতি নমনীয় হতে।

তিনি বলেন, “যেভাবে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয়েছিলো তাতে সরকারই ঝুঁকিতে পড়ে গেলো। এ ঝুঁকি যেনো না বাড়ে কিংবা এটি সামনের নির্বাচনের যেনো কোন প্রভাব না ফেলে আমার মনে হয় সেটিই সরকার বিবেচনায় নিয়েছে।”

যদিও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক স্পষ্টভাবেই বলেছেন শিক্ষার্থীদের জামিনে মুক্তির বিষয়টি নিতান্তই মানবিক, এর সাথে কোন ধরনের রাজনীতি নেই।

তবে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় আটক হওয়া ফটো সাংবাদিক শহীদুল আলম এখনো কারাগারেই রয়েছেন। আর কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলছেন সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারী করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...