খেলার সময়:
ফুটবল ফেডারেশনের চার বছরের ৭১ পৃষ্ঠার পরিকল্পনা। দেখতে ভালো, পড়তে ভালো—সবই উন্নয়নমুখী শব্দ।গত আট বছরে যা করেছে তার তিনগুণ করতে চায় সামনের চার বছরে! ব্যাপারটা কঠিন, খুবই কঠিন। এর পরও ওই খাতাপত্র ছাড়িয়ে শব্দগুলোকে সবুজ ঘাসের বুকে দৃশ্যমান করারও আনুষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন।
ভুটান-কলঙ্কে পর দেশের ফুটবলের দীনতার কথা আর চাপা থাকেনি। চারদিকে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ বাফুফে সভাপতি তখন এই ১০ ডিসেম্বরের ধুয়ো তুলে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছিলেন। গতকাল ৭১ পৃষ্ঠার মৌলিক কাজের ফিরিস্তি দেওয়ার আগে কাজী সালাউদ্দিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘চার বছরের একটা ফুটবল প্রোগ্রাম দিচ্ছি আমরা। এটা তৈরি করার আগে সবার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। বাফুফের তিনটি সভায় আলোচনার পর অনুমোদিতও হয়েছে। এখানে কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনাও আছে, এই অনুযায়ী আমরা কাজ করব। ‘ তিনি বিশ্বাস করেন তৃণমূল আর ফুটবল ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টের কাজ ফেডারেশনের নয়, ক্লাবের কাজ। আগেও বিভিন্ন সময় এই কথা বলেছেন। কাল সেই জায়গা থেকে সরে এসে তিনি ইয়ুথ ফুটবল ডেভেলপমেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছেন, ‘ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টের কাজটা ক্লাবগুলোর, বাইরে এভাবেই হয়। আমাদের ক্লাবগুলোও যদি সেটা করত অনেক ফুটবলার বের হতো। কিন্তু আমি তাদের দোষারোপও করতে পারি না, সংগঠকরা খুব কষ্ট করে ক্লাব চালায়। তিন-চারটি ক্লাব বাদ দিলে বাকিরা কোনো রকমে চলে। এ জন্য ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টের কাজগুলো আমাদেরই করতে হবে। ‘ অর্থাৎ বাফুফে এখন তৃণমূল ও ইয়ুথ ফুটবলে মনোযোগী হবে।
এ জন্য অনূর্ধ্ব-১২, অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবল যোগ হয়েছে তাদের পরিকল্পনায়। আগে দু-একটি হতো বিক্ষিপ্তভাবে। তবে ২০১৭ সালের ‘মূল লক্ষ্যে’ চারটি বয়সভিত্তিক বিভাগে খেলার কথা বলা হলেও ক্যালেন্ডারে আছে মাত্র দুটি—অনূর্ধ্ব-১৬ আর অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবল প্রতিযোগিতা। ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ ভুল স্বীকার করে বলেছেন, ‘আগামী বছর অনূর্ধ্ব-১২ ও অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল প্রতিযোগিতা হবে না। পরের বছর থেকে সব হবে। আসলে সব করতে গেলে অর্থ একটা বড় ব্যাপার, এটা নিশ্চিত করেই আমরা ক্যালেন্ডারে টুর্নামেন্ট যোগ করতে চাই। ‘ আগের সোহরাওয়ার্দী কাপ নাম বাদ দিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বিভাগীয় পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের সূচি রেখেছে। বিভাগীয় পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল প্রতিযোগিতা করার পরিকল্পনা ফেব্রুয়ারি-মার্চে। একই সময়ে রাখা হয়েছে জেলা পর্যায়ে স্কুল ফুটবল। স্কুলের এ টুর্নামেন্টে সাধারণত অনূর্ধ্ব-১৬ বছরের ছাত্ররাই খেলে। একই সময়ে একই বয়সসীমার দুটি টুর্নামেন্ট কিভাবে চলে? বাফুফের সাধারণ সম্পাদকের খোঁড়া যুক্তি, ‘এখন ১৬ বছর বয়সে ছেলেরা কলেজে পড়ে। ‘ নভেম্বরে রাখা হয়েছে জাতীয় জেলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, যার পুরনো পোশাকি নাম শেরেবাংলা কাপ। দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ হয়ে থাকা সোহরাওয়ার্দী কাপ ও শেরেবাংলা কাপ এবার ফিরছে অন্য নামে। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ও মার্চে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আয়োজনের সূচি রাখা হয়েছে।
আগামী বছরের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ঢাকার ফুটবল মৌসুম শুরু হবে এপ্রিলে দলবদলের মধ্য দিয়ে। মে মাসে মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপ হয়ে প্রিমিয়ার লিগ সময় জুন থেকে অক্টোবর। আবারও প্রচণ্ড গরমের মধ্যে শুরু হবে দেশের শীর্ষ ফুটবল লিগ। তাহলে জুন-আগস্টে এ দেশের গড় তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা কত থাকে সেই বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই অনেক ফুটবল জানা-বোঝা টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলির! নভেম্বরে স্বাধীনতা কাপ দিয়ে শেষ হবে ঢাকার ফুটবল মৌসুম। এর মধ্যেই হয়ে যাবে প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগ ও পাইওনিয়ার ফুটবল লিগ। আছে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ক্যাম্প এবং কোচিং এডুকেশন। মোটামুটি ক্যালেন্ডারে সবই আছে, কিন্তু তা ঠিকঠাক মাঠে গড়াবে কি না, এ নিয়ে বিস্তর সন্দেহ আছে। এর আগে গ্রামীণফোন-সিটিসেলের মতো বড় স্পন্সর থাকার পরও বাফুফে ক্যালেন্ডার সম্পূর্ণ করতে পারেনি। তবে কাল বাফুফে সভাপতি অঙ্গীকার করেছেন, ‘সবই হবে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যেই আমি তহবিলের ব্যাপারটা নিশ্চিত করব। কোন টাকা দিয়ে কোনটা হবে সেটা জানিয়ে দেব। ‘
আগামী বছরের ক্যালেন্ডারের মতোই পরের তিন বছরও ফুটবল সূচিতে ঠাসা। সালাউদ্দিনের লক্ষ্য হলো, চার বছর পর অন্তত বাংলাদেশ সিনিয়র দলের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলা এবং এই সাফ অঞ্চলের যুব ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসা। আগের আট বছরে ব্যর্থতার প্রায়শ্চিত্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এটা যাদের পছন্দ হবে না, তাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে, ‘আমাকে সরাতে গেলে চার বছর অপেক্ষা করতে হবে।