অপূর্ব এবং অভূতপূর্ব আয়োজন। এক ছাদের নিচে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ৫০ জন শিল্পী। সারা দিন তাঁরা ছবি এঁকেছেন। তাঁদের ক্যানভাসে রূপায়িত হয়েছে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ৫০টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের জীবনচিত্র, বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক জীবন। ছবি এঁকে, আড্ডা দিয়ে পরস্পর অভিজ্ঞতা বিনিময় করে বৃষ্টিস্নাত দিনটি দারুণ কেটেছে তাঁদের।
দুপুরে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শুরু হয়েছে তিন দিনের এ আর্ট ক্যাম্প। উদ্বোধন করেন মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও সচিব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আর্ট ক্যাম্পের প্রধান সমন্বয়কারী শিল্পী কনকচাঁপা চাকমা। গতকাল জাতীয় চিত্রশালার সুবিশাল প্লাজায় যেদিকে দৃষ্টি গেছে, মুগ্ধ হয়েছে মন। ক্যানভাসে যে যাঁর দেখা, শোনা এবং জানার অভিজ্ঞতা থেকে ছবি আঁকছেন। কোনোটিতে মানুষ, কোনোটিতে যাপিত জীবন। এক জাতিসত্তার শিল্পী এঁকেছেন আরেক জাতিসত্তার ছবি।
গত ২১ থেকে ২৩ জুলাই একাডেমি থেকে ৫০ জন শিল্পী কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার তথ্য-উপাত্ত, স্থিরচিত্র সংগ্রহ করেন। যার ওপর ভিত্তি করে ক্যানভাস রাঙিয়ে তুলছেন শিল্পীরা। শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫০টি জাতিসত্তার ৫০ জন শিল্পী তাঁদের তুলিতে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক জীবনের ওপর ১৫০টি চিত্রকর্ম আঁকবেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে সেসব চিত্রকর্ম নিয়ে একটি ক্যাটালগসহ চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। গতকাল উদ্বোধনী দিনে আঁকা হয়েছে ৫০টি চিত্রকর্ম। একইভাবে আজ ও কাল আরও ১০০টি ছবি আঁকবেন শিল্পীরা।
আর্ট ক্যাম্পের প্রধান সমন্বয়কারী শিল্পী কনকচাঁপা চাকমাকে দেখা গেল তদারক করতে। জানালেন, এটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিল্পীদের নিয়ে সবচেয়ে বড় আর্ট ক্যাম্প। ইতিপূর্বে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিল্পীদের নিয়ে তাঁদের জীবনচিত্রের ওপর এত বড় আর্ট ক্যাম্প হয়নি।
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী বলেন, ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তার আচার অনুশীলন, জীবনচিত্র ও বিভিন্ন সুকুমার বৃত্তি আমাদের সংস্কৃতির তাৎপর্যপূর্ণ অংশ। সেসব জাতিগোষ্ঠীর অধিকাংশেরই নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। পরিচর্যা ও সংরক্ষণের অভাবে তাদের ভাষা ও সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গগুলো আজ যথাযথভাবে বিকশিত হচ্ছে না। সেগুলো সংগ্রহ করে চিত্রশিল্পে উপস্থাপনের জন্য এ উদ্যোগ।’